১. বাংলা উচ্চারণের নিয়ম

১। না-বোধক অর্থে শব্দের আদিতে ‘অ’-এর বিবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ বানানউচ্চারণ
অনুচিত
অনুচিত্
অভাব
অভাব্

২। শব্দের আদিতে (সহ, সহিত, সম, সমান প্রভৃতি) ‘সাথে’ অর্থে অ-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
সংযুক্ত
শঙ্জুক্তো
সসীম
শশিম্

৩। শব্দে অ-এর পরে যুক্তব্যঞ্জন থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
অন্ধ
অন্‌ধো
তত্ত্ব
 তত্‌তো

৪। শব্দে অ-এর পরে রেফযুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
অর্ক
অর্‌কো
খর্ব
খর্‌বো
৫। একাক্ষর হলন্ত যুক্ত শব্দে অ-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
জল
জল্‌ফলফল্‌
৬। শব্দের আদিতে অ-এর পরে ‘অ’, ‘আ’ বা ‘এ’ থাকলে সেই ‘অ’-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
অমানিশা
অমানিশা
শত
শতো
কয়েক
কয়েক্


৭। দ্বিরুক্ত বিশেষণ বা অনুকার ধ্বনিবাচক শব্দের অ-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকবে। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
ঝরঝর
ঝর্‌ঝর্‌
ছলছল
ছল্‌ছল্‌

১। শব্দে ‘অ’-এর পরে ‘ই,ঈ,উ,ঊ’ থাকলে সেই ‘অ’ -এর উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
অভিধান
ওভিধান্
অধীন
ওধিন্
অনুমান
ওনুমান্
বধূ
বোধু

ব্যতিক্রম:

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
অনিত্য
অনিত্‌তো
অসীম
অশিম্

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি শব্দে ‘অ’ না-বোধক অর্থে শব্দের আদিতে আছে। আর না-বোধক অর্থে শব্দের আদিতে ‘অ’-এর বিবৃত উচ্চারণ হয়।

২। শব্দে ‘অ’-এর পরে য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে সেই ‘অ’-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
অত্যাচার
ওত্‌তাচার্‌
বন্যা
বোন্‌না

ব্যতিক্রম:

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
বন্ধ্যা
বন্‌ধা
কণ্ঠ্য
কন্‌ঠো
মর্ত্য
মর্‌তো
অন্ত্যেষ্টি
অন্‌তেশ্‌টি
অর্ঘ্য
অর্‌ঘো
বধ্যভূমি
বদ্‌ধোভুমি

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি শব্দে (বধ্যভূমি ব্যতিরেকে) (য) ফলা যুক্ত হয়েছে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণে, ফলে উচ্চারণে তার কোনো ভূমিকা যেমন নেই, তেমনি আদ্য ‘অ’-কে ও পরিবর্তন করছে না।

৩।  শব্দে ‘অ’-এর পরে ‘ক্ষ’, ‘জ্ঞ’ থাকলে সেই ‘অ’ -এর উচ্চারণ সংবৃত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
অক্ষাংশ
ওক্‌খাঙ্‌শো
দক্ষ
দোক্‌খো

ব্যতিক্রম:

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
লক্ষ্মণ
লক্‌খোঁন্
যক্ষ্মা
জক্‌খাঁ

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ‘ক্ষ’-এর সঙ্গে অন্য বর্ণ যুক্ত হয়েছে বলে তার পূর্বের ‘অ’ (ল, য, প- এর ‘অ’) ও-কার রূপে উচ্চারিত হচ্ছে না।

৪।  শব্দে অ-এর পরবর্তী বর্ণে ঋ-কারযুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
বক্তৃতাবোক্‌তৃতা
মসৃণ
মোস্‌সৃন্‌

৫।  শব্দে ‘অ’ যুক্ত ‘র’-ফলা থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
প্রকাশ
প্রোকাশ্
প্রয়োজনীয়
প্রোয়োজোনিয়ো

ব্যতিক্রম:

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
ক্রয়
ক্রয়্
ত্রয়
ত্রয়্

‘অ’ যুক্ত র-ফলার পরে ‘য়’ থাকলে সে ‘অ’-এর উচ্চারণ প্রায়শ অবিকৃত থাকে।

৬।  যেসব শব্দের বানানে রেফ যুক্ত বর্ণে পূর্বে য-ফলা যুক্ত ছিল, বর্তমান বানানে য-ফলা ব্যবহৃত হয় না, সেসব শব্দের আদ্য-‘অ’ এর উচ্চারণ সংবৃত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
পর্যায়
পোর্‌জায়্
পর্যন্ত
পোর্‌জোন্‌তো

৭।  একাক্ষর শব্দের প্রথমে ‘অ’ এবং পরে দন্ত্য-‘ন’ থাকলে কোথাও কোথাও সেই অ-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
মন
মোন্
বন
বোন্

‘ণ’ থাকলে আদ্য ‘অ’ এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
পণ
পন্
মণ
মন্

১।  আদ্য অ-এর মতোই শব্দমধ্যস্থিত অ-এর পরে ই,ঈ,উ,ঊ,ঋ-কার থাকলে সেই শব্দমধ্যস্থিত অ-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
জলধি
জলোধি
উপবৃত্ত
উপোবৃত্‌তো
অতনু
অতোনু
তপস্বী
তপোশ্‌শী
উপকূল
উপোকুল্
লোকনৃত্য
লোকোনৃত্‌তো
২।  আদ্য অ-এর মতোই শব্দমধ্যস্থিত অ-এর পরে ‘ক্ষ’, ‘জ্ঞ’ বা ‘য’-ফলা থাকলে সেই শব্দমধ্যস্থিত অ-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
সুদক্ষ
শুদোক্‌খো
দৈবজ্ঞ
দোইবোগ্‌গোঁ
সৌজন্য
শোউজোন্‌নো


৩।  তিন বা তার অধিক বর্ণে গঠিত শব্দের মধ্য অ-এর পূর্বে যদি ‘অ’, ‘আ’ ‘এ’ বা ‘ও’ থাকে তবে শব্দমধ্যস্থিত অ-এর উচ্চারণ সাধারণত সংবৃত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
যতন
জতোন্
কানন
কানোন্
বেতন
বেতোন্
শোষণ
শোশোন্

৪।  ‘অ’ যদি না-বোধক অর্থে এবং ‘স’ যদি সহিত অর্থে শব্দের আদিতে ব্যবহৃত হয় তবে শব্দমধ্যস্থিত অ-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
অটল
অটল্
সলজ্জ
শলজ্‌জো

৫।  বাংলা ভাষায় এমন কিছু সমাসবদ্ধ পদ রয়েছে যেগুলোর পৃথক উচ্চারণ ব্যঞ্জনান্ত হলেও সমাসবদ্ধ অবস্থায় পদমধ্যের অ-এর সংবৃত উচ্চারণ  হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
পথচারী
পথোচারি
দীনবন্ধু
দিনোবোন্‌ধু

কিন্তু এ ধরনের বেশকিছু সমাসবদ্ধ পদ (বাংলা প্রমিত উচ্চারণেও) আর পূর্বরীতিতে উচ্চারিত হচ্ছে না, অর্থাৎ সাম্প্রতিক উচ্চারণে মধ্য ‘অ’-এর স্থানে হলন্ত উচ্চারণ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যথা-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
রাজপুত্র
রাজ্‌পুত্‌ত্রো
রাজহংস
রাজ্‌হঙ্‌শো
শিবরাত্রি
শিব্‌রাত্‌ত্রি
দুর্গেশনন্দিনী
দুর্‌গেশ্‌নোন্‌দিনি
মেঘদূত
মেঘদুত্
লোকনাথ
লোক্‌নাথ্
ফুলশয্যা
ফুল্‌শোজ্‌জা
ন্যায়সঙ্গত
ন্যায়্‌শঙ্‌গতো

১। দুই অক্ষরে গঠিত বিশেষণ পদের অন্তিম অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
কাল
কালো
খাট
খাটো

২। এগারো হতে আঠার পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দের অন্তিম অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
এগার
অ্যাগারো
আঠার
আঠারো
তের
ত্যারো


৩। পদের শেষে হ কিংবা যুক্তব্যঞ্জনের অন্তিম অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
বিদ্রোহ
বিদ্‌দ্রোহো
গন্ধ
গন্‌ধো
দেহ
দেহো


৪। ত (ক্ত), ইত, তর, তম প্রত্যয়যোগে গঠিত বিশেষণ পদের অন্ত্য  অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
হত
হতো
নিয়মিত
নিয়োমিতো
উচ্চতম
উচ্চোতমো
অধিকতর
ওধিকোতরো

৫। শব্দশেষের অ-এর পূর্বে যদি ঐ, ঔ, ং, ঃ, ঋ-কার থাকে, তবে অন্ত্য অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
বংশ
বঙ্‌শো
দুঃখ
দুক্‌খো
মৃৃগ
মৃগো
তৈল
তোইলো
গৌণ
গোউনো


ব্যতিক্রম:

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
দৌড়
দৌউড়্
পৌষ
পোউশ্

৬। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বেশ কিছু দ্বিরুক্ত শব্দ বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হলে প্রায়শ অন্তিম ‘অ’-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
কাঁদ-কাঁদ
কাঁদো-কাঁদো
পড়-পড়
পড়ো-পড়ো

ব্যতিক্রম:

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
মড়মড়
মড়্মড়্
তরতর
তর্‌তর্‌

৭। ‘আন’-প্রত্যয়ান্ত শব্দের অন্তিম ‘অ’-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
লেখান
লেখানো
চালান
চালানো

ব্যতিক্রম:
কিন্তু এর মধ্যে কোনো শব্দ যদি বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয় তাহলে অস্তিম ‘অ’ বিলুপ্ত হয়ে হলন্ত রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
গীত
গিত্
পরীক্ষিত
পোরিক্‌খিত্ (জনমেজয়ের পিতার নাম)

৮। ‘ই’, ‘ঈ’ কিংবা ‘এ’-কারের পর ‘য়’ থাকলে, সেই ‘য়’ হলন্তরূপে উচ্চারিত না হয়ে ‘ও’- এর মতো উচ্চারিত হয়। যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
আত্মীয়
আত্‌তিঁয়ো
অজেয়
অজেয়ো
তুলনীয়
তুলোনিয়ো
বিধেয়
বিধেয়ো
খিয়
খিয়ো


ব্যতিক্রম:
কিন্তু ‘ই’ অথবা ‘এ’ কারের পরিবর্তে ‘অ’ বা ‘আ’ ধ্বনি এলেই ‘য়’-এর ‘অ’ বিলুপ্ত হয়ে হলন্তরূপে উচ্চারিত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
জয়
জয়্
ন্যায়
ন্যায়্

৯।  ‘-ইর’, ‘-ইল’, ‘-ইতেছ’, ‘-ইয়াছ’, ‘-ইতেছিল’, ‘-ইয়াছিল’ ইত্যাদি প্রত্যযোগে গঠিত ক্রিয়াপদের অন্তিম ‘অ’ সাধারণত বিলুপ্ত হয় না, ও-কারের মতো উচ্চারিত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বলিব
বোলিবো > বোল্‌বো
করিতেছ
কোরিতেছো > কোর্‌ছো
করিয়াছিল
কোরিয়াছিলো > কোরেছিলো
বসিয়াছিল
বোশিয়াছিল > বোশেছিলো
চলিতেছ
চলিতেছো > চোল্‌ছো

জ্ঞ-এর সঙ্গে এবং য-ফলাযুক্ত ( ্য ) ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ‘আ’ সংযুক্ত হলে সেই ‘আ’ সাধারণত ‘অ্যা’-রূপে উচ্চারিত হয়।  যেমন-

বানান
উচ্চারণ
বানান
উচ্চারণ
জ্ঞান
গ্যাঁন্
বিজ্ঞান
বিগ্‌গ্যাঁন্
ব্যাকরণ
ব্যাকরোন্
প্রজ্ঞা
প্রোগ্‌গাঁ
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, শব্দের শেষে জ্ঞ-এর সাথে আ-কারের উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে।


_

-