১। না-বোধক অর্থে শব্দের আদিতে ‘অ’-এর বিবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
অনুচিত | অনুচিত্ | অভাব | অভাব্ |
২। শব্দের আদিতে (সহ, সহিত, সম, সমান প্রভৃতি) ‘সাথে’ অর্থে অ-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
সংযুক্ত | শঙ্জুক্তো | সসীম | শশিম্ |
৩। শব্দে অ-এর পরে যুক্তব্যঞ্জন থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
অন্ধ | অন্ধো | তত্ত্ব | তত্তো |
৪। শব্দে অ-এর পরে রেফযুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
অর্ক | অর্কো | খর্ব | খর্বো |
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
জল | জল্ | ফল | ফল্ |
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
অমানিশা | অমানিশা | শত | শতো |
কয়েক | কয়েক্ |
৭। দ্বিরুক্ত বিশেষণ বা অনুকার ধ্বনিবাচক শব্দের অ-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকবে। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
ঝরঝর | ঝর্ঝর্ | ছলছল | ছল্ছল্ |
১। শব্দে ‘অ’-এর পরে ‘ই,ঈ,উ,ঊ’ থাকলে সেই ‘অ’ -এর উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
অভিধান | ওভিধান্ | অধীন | ওধিন্ |
অনুমান | ওনুমান্ | বধূ | বোধু |
ব্যতিক্রম:
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
অনিত্য | অনিত্তো | অসীম | অশিম্ |
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি শব্দে ‘অ’ না-বোধক অর্থে শব্দের আদিতে আছে। আর না-বোধক অর্থে শব্দের আদিতে ‘অ’-এর বিবৃত উচ্চারণ হয়।
২। শব্দে ‘অ’-এর পরে য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে সেই ‘অ’-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
অত্যাচার | ওত্তাচার্ | বন্যা | বোন্না |
ব্যতিক্রম:
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
বন্ধ্যা | বন্ধা | কণ্ঠ্য | কন্ঠো |
মর্ত্য | মর্তো | অন্ত্যেষ্টি | অন্তেশ্টি |
অর্ঘ্য | অর্ঘো | বধ্যভূমি | বদ্ধোভুমি |
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি শব্দে (বধ্যভূমি ব্যতিরেকে) (য) ফলা যুক্ত হয়েছে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণে, ফলে উচ্চারণে তার কোনো ভূমিকা যেমন নেই, তেমনি আদ্য ‘অ’-কে ও পরিবর্তন করছে না।
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
অক্ষাংশ | ওক্খাঙ্শো | দক্ষ | দোক্খো |
ব্যতিক্রম:
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
লক্ষ্মণ | লক্খোঁন্ | যক্ষ্মা | জক্খাঁ |
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ‘ক্ষ’-এর সঙ্গে অন্য বর্ণ যুক্ত হয়েছে বলে তার পূর্বের ‘অ’ (ল, য, প- এর ‘অ’) ও-কার রূপে উচ্চারিত হচ্ছে না।
৪। শব্দে অ-এর পরবর্তী বর্ণে ঋ-কারযুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
বক্তৃতা | বোক্তৃতা | মসৃণ | মোস্সৃন্ |
৫। শব্দে ‘অ’ যুক্ত ‘র’-ফলা থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
প্রকাশ | প্রোকাশ্ | প্রয়োজনীয় | প্রোয়োজোনিয়ো |
ব্যতিক্রম:
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
ক্রয় | ক্রয়্ | ত্রয় | ত্রয়্ |
‘অ’ যুক্ত র-ফলার পরে ‘য়’ থাকলে সে ‘অ’-এর উচ্চারণ প্রায়শ অবিকৃত থাকে।
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
পর্যায় | পোর্জায়্ | পর্যন্ত | পোর্জোন্তো |
৭। একাক্ষর শব্দের প্রথমে ‘অ’ এবং পরে দন্ত্য-‘ন’ থাকলে কোথাও কোথাও সেই অ-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
মন | মোন্ | বন | বোন্ |
‘ণ’ থাকলে আদ্য ‘অ’ এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
পণ | পন্ | মণ | মন্ |
১। আদ্য অ-এর মতোই শব্দমধ্যস্থিত অ-এর পরে ই,ঈ,উ,ঊ,ঋ-কার থাকলে সেই শব্দমধ্যস্থিত অ-এর উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
জলধি | জলোধি | উপবৃত্ত | উপোবৃত্তো |
অতনু | অতোনু | তপস্বী | তপোশ্শী |
উপকূল | উপোকুল্ | লোকনৃত্য | লোকোনৃত্তো |
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
সুদক্ষ | শুদোক্খো | দৈবজ্ঞ | দোইবোগ্গোঁ |
সৌজন্য | শোউজোন্নো |
৩। তিন বা তার অধিক বর্ণে গঠিত শব্দের মধ্য অ-এর পূর্বে যদি ‘অ’, ‘আ’ ‘এ’ বা ‘ও’ থাকে তবে শব্দমধ্যস্থিত অ-এর উচ্চারণ সাধারণত সংবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
যতন | জতোন্ | কানন | কানোন্ |
বেতন | বেতোন্ | শোষণ | শোশোন্ |
৪। ‘অ’ যদি না-বোধক অর্থে এবং ‘স’ যদি সহিত অর্থে শব্দের আদিতে ব্যবহৃত হয় তবে শব্দমধ্যস্থিত অ-এর উচ্চারণ বিবৃত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
অটল | অটল্ | সলজ্জ | শলজ্জো |
৫। বাংলা ভাষায় এমন কিছু সমাসবদ্ধ পদ রয়েছে যেগুলোর পৃথক উচ্চারণ ব্যঞ্জনান্ত হলেও সমাসবদ্ধ অবস্থায় পদমধ্যের অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
পথচারী | পথোচারি | দীনবন্ধু | দিনোবোন্ধু |
কিন্তু এ ধরনের বেশকিছু সমাসবদ্ধ পদ (বাংলা প্রমিত উচ্চারণেও) আর পূর্বরীতিতে উচ্চারিত হচ্ছে না, অর্থাৎ সাম্প্রতিক উচ্চারণে মধ্য ‘অ’-এর স্থানে হলন্ত উচ্চারণ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যথা-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
রাজপুত্র | রাজ্পুত্ত্রো | রাজহংস | রাজ্হঙ্শো |
শিবরাত্রি | শিব্রাত্ত্রি | দুর্গেশনন্দিনী | দুর্গেশ্নোন্দিনি |
মেঘদূত | মেঘদুত্ | লোকনাথ | লোক্নাথ্ |
ফুলশয্যা | ফুল্শোজ্জা | ন্যায়সঙ্গত | ন্যায়্শঙ্গতো |
১। দুই অক্ষরে গঠিত বিশেষণ পদের অন্তিম অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
কাল | কালো | খাট | খাটো |
২। এগারো হতে আঠার পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দের অন্তিম অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
এগার | অ্যাগারো | আঠার | আঠারো |
তের | ত্যারো |
৩। পদের শেষে হ কিংবা যুক্তব্যঞ্জনের অন্তিম অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
বিদ্রোহ | বিদ্দ্রোহো | গন্ধ | গন্ধো |
দেহ | দেহো |
৪। ত (ক্ত), ইত, তর, তম প্রত্যয়যোগে গঠিত বিশেষণ পদের অন্ত্য অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
হত | হতো | নিয়মিত | নিয়োমিতো |
উচ্চতম | উচ্চোতমো | অধিকতর | ওধিকোতরো |
৫। শব্দশেষের অ-এর পূর্বে যদি ঐ, ঔ, ং, ঃ, ঋ-কার থাকে, তবে অন্ত্য অ-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
বংশ | বঙ্শো | দুঃখ | দুক্খো |
মৃৃগ | মৃগো | তৈল | তোইলো |
গৌণ | গোউনো |
ব্যতিক্রম:
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
দৌড় | দৌউড়্ | পৌষ | পোউশ্ |
৬। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বেশ কিছু দ্বিরুক্ত শব্দ বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হলে প্রায়শ অন্তিম ‘অ’-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
কাঁদ-কাঁদ | কাঁদো-কাঁদো | পড়-পড় | পড়ো-পড়ো |
ব্যতিক্রম:
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
মড়মড় | মড়্মড়্ | তরতর | তর্তর্ |
৭। ‘আন’-প্রত্যয়ান্ত শব্দের অন্তিম ‘অ’-এর সংবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
লেখান | লেখানো | চালান | চালানো |
ব্যতিক্রম:
কিন্তু এর মধ্যে কোনো শব্দ যদি বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয় তাহলে অস্তিম ‘অ’ বিলুপ্ত হয়ে হলন্ত রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
গীত | গিত্ | পরীক্ষিত | পোরিক্খিত্ (জনমেজয়ের পিতার নাম) |
৮। ‘ই’, ‘ঈ’ কিংবা ‘এ’-কারের পর ‘য়’ থাকলে, সেই ‘য়’ হলন্তরূপে উচ্চারিত না হয়ে ‘ও’- এর মতো উচ্চারিত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
আত্মীয় | আত্তিঁয়ো | অজেয় | অজেয়ো |
তুলনীয় | তুলোনিয়ো | বিধেয় | বিধেয়ো |
খিয় | খিয়ো |
ব্যতিক্রম:
কিন্তু ‘ই’ অথবা ‘এ’ কারের পরিবর্তে ‘অ’ বা ‘আ’ ধ্বনি এলেই ‘য়’-এর ‘অ’ বিলুপ্ত হয়ে হলন্তরূপে উচ্চারিত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
জয় | জয়্ | ন্যায় | ন্যায়্ |
৯। ‘-ইর’, ‘-ইল’, ‘-ইতেছ’, ‘-ইয়াছ’, ‘-ইতেছিল’, ‘-ইয়াছিল’ ইত্যাদি প্রত্যযোগে গঠিত ক্রিয়াপদের অন্তিম ‘অ’ সাধারণত বিলুপ্ত হয় না, ও-কারের মতো উচ্চারিত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ |
বলিব | বোলিবো > বোল্বো |
করিতেছ | কোরিতেছো > কোর্ছো |
করিয়াছিল | কোরিয়াছিলো > কোরেছিলো |
বসিয়াছিল | বোশিয়াছিল > বোশেছিলো |
চলিতেছ | চলিতেছো > চোল্ছো |
জ্ঞ-এর সঙ্গে এবং য-ফলাযুক্ত ( ্য ) ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ‘আ’ সংযুক্ত হলে সেই ‘আ’ সাধারণত ‘অ্যা’-রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন-
বানান | উচ্চারণ | বানান | উচ্চারণ |
জ্ঞান | গ্যাঁন্ | বিজ্ঞান | বিগ্গ্যাঁন্ |
ব্যাকরণ | ব্যাকরোন্ | প্রজ্ঞা | প্রোগ্গাঁ |