বায়ান্নর দিনগুলো

বায়ান্নর দিনগুলো

শেখ মুজিবুর রহমান

এদিকে জেলের ভেতর আমরা দুইজনে প্রস্তুত হচ্ছিলাম অনশন ধর্মঘট 🔒ব্যাখ্যা করার জন্য। আমরা আলোচনা করে ঠিক করেছি, যাই হোক না কেন, আমরা অনশন ভাঙব না। 🔒ব্যাখ্যা যদি এই পথেই মৃত্যু এসে থাকে তবে তাই হবে। 🔒ব্যাখ্যা জেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে সুপারিনটেনডেন্ট আমীর হোসেন সাহেব ও তখনকার দিনে রাজবন্দিদের ডেপুটি জেলার মোখলেসুর রহমান সাহেব আমাদের বুঝাতে অনেক চেষ্টা করলেন । আমরা তাঁদের বললাম, আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের বলবার কিছু নাই । 🔒ব্যাখ্যা আর আমরা সেজন্য অনশন করছি না। 🔒ব্যাখ্যা সরকার আমাদের বৎসরের পর বৎসর বিনা বিচারে আটক রাখছে, 🔒ব্যাখ্যা তারই প্রতিবাদ করার জন্য অনশন ধর্মঘট করছি। 🔒ব্যাখ্যা এতদিন জেল খাটলাম, আপনাদের সাথে আমাদের মনোমালিন্য হয় নাই । 🔒ব্যাখ্যা কারণ আমরা জানি যে, সরকারের হুকুমেই আপনাদের চলতে হয়। 🔒ব্যাখ্যা

১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে সকালবেলা আমাকে জেলগেটে নিয়ে যাওয়া হলো 🔒ব্যাখ্যা এই কথা বলে যে, আমার সাথে আলোচনা আছে অনশন ধর্মঘটের ব্যাপার নিয়ে। আমি যখন জেলগেটে পৌঁছালাম দেখি, একটু পরে মহিউদ্দিনকেও নিয়ে আসা হয়েছে একই কথা বলে । কয়েক মিনিট পরে আমার মালপত্র, কাপড়চোপড় ও বিছানা নিয়ে জমাদার সাহেব হাজির। বললাম, ব্যাপার কী? কর্তৃপক্ষ বললেন, আপনাদের অন্য জেলে পাঠানোর হুকুম হয়েছে। 🔒ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করলাম, কোন জেলে? কেউ কিছু বলেন না। এদিকে আর্মড পুলিশ, আইবি অফিসারও প্রস্তুত হয়ে এসেছে। খবর চাপা থাকে না। একজন আমাকে বলে দিল, ফরিদপুর জেলে। দুইজনকেই এক জেলে পাঠানো হচ্ছে। তখন নয়টা বেজে গেছে। এগারোটায় নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজ ছাড়ে, সেই জাহাজ আমাদের ধরতে হবে। আমি দেরি করতে শুরু করলাম, 🔒ব্যাখ্যা কারণ তা না হলে কেউই জানবে না আমাদের কোথায় পাঠাচ্ছে! প্রথমে আমার বইগুলি এক এক করে মেলাতে শুরু করলাম, তারপর কাপড়গুলি। হিসাব-নিকাশ, কত টাকা খরচ হয়েছে, কত টাকা আছে। দেরি করতে করতে দশটা বাজিয়ে দিলাম । রওয়ানা করতে আরও আধা ঘণ্টা লাগিয়ে দিলাম। আর্মড পুলিশের সুবেদার ও গোয়েন্দা কর্মচারীরা তাড়াতাড়ি করছিল। 🔒ব্যাখ্যা সুবেদার পাকিস্তান হওয়ার সময় গোপালগঞ্জে ছিল এবং সে একজন বেলুচি ভদ্রলোক। আমাকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত। আমাকে দেখেই বলে বসল, ইয়ে কেয়া বাত হ্যায়, আপ জেলখানা মে। 🔒ব্যাখ্যা আমি বললাম, কিসমত। 🔒ব্যাখ্যা আর কিছুই বললাম না । আমাদের জন্য বন্ধ ঘোড়ার গাড়ি আনা হয়েছে। গাড়ির ভেতর জানালা উঠিয়ে ও দরজার কপাট বন্ধ করে দিল । দুইজন ভেতরেই আমাদের সাথে বসল। আর একটা গাড়িতে অন্যরা পেছনে পেছনে ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে রোডের দিকে চলল। সেখানে যেয়ে দেখি পূর্বেই একজন আর্মড পুলিশ ট্যাক্সি রিজার্ভ করে দাঁড়িয়ে আছে । তখন ট্যাক্সি পাওয়া খুবই কষ্টকর ছিল। 🔒ব্যাখ্যা আমরা আস্তে আস্তে নামলাম ও উঠলাম । কোনো চেনা লোকের সাথে দেখা হলো না। যদিও এদিক ওদিক অনেকবার তাকিয়ে ছিলাম। ট্যাক্সি তাড়াতাড়ি চালাতে বলল। আমি ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, “বেশি জোরে চালাবেন না, 🔒ব্যাখ্যা কারণ বাবার কালের জীবনটা যেন রাস্তায় না যায়।”


আমরা পৌঁছে খবর পেলাম জাহাজ ছেড়ে চলে গেছে। এখন উপায়? কোথায় আমাদের নিয়ে যাবে? রাত একটায় আর একটা জাহাজ ছাড়বে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হলো । 🔒ব্যাখ্যা ওপরওলাদের টেলিফোন করল এবং হুকুম নিল থানায়ই রাখতে। আমাদের পুলিশ ব্যারাকের একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো ।

রাত এগারোটায় আমরা স্টেশনে আসলাম । জাহাজ ঘাটেই ছিল, আমরা উঠে পড়লাম । জাহাজ না ছাড়া পর্যন্ত

সহকর্মীরা অপেক্ষা করল । রাত একটার সময় সকলের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বললাম, “জীবনে আর দেখা না হতেও পারে। 🔒ব্যাখ্যা সকলে যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়। দুঃখ আমার নাই। একদিন মরতেই হবে, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যদি মরতে পারি, সে মরাতেও শান্তি আছে।” 🔒ব্যাখ্যা

জাহাজ ছেড়ে দিল, আমরা বিছানা করে শুয়ে পড়লাম । সকালে দুইজনে পরামর্শ করে ঠিক করলাম, জাহাজে অনশন করি কী করে? আমাদের জেলে নিতে হবে অনশন শুরু করার পূর্বে। সমস্ত দিন জাহাজ চলল, রাতে গোয়ালন্দ ঘাটে এলাম। সেখান থেকে ট্রেনে রাত চারটায় ফরিদপুর পৌঁছালাম। রাতে আমাদের জেল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করল না। আমরা দুইজনে জেল সিপাহিদের ব্যারাকের বারান্দায় কাটালাম। 🔒ব্যাখ্যা সকালবেলা সুবেদার সাহেবকে বললাম, “জেল অফিসাররা না আসলে তো আমাদের জেলে নিবে না, চলেন কিছু নাশতা করে আসি । 🔒ব্যাখ্যা ” নাশতা খাবার ইচ্ছা আমাদের নাই। 🔒ব্যাখ্যা তবে যদি কারও সাথে দেখা হয়ে যায়, তাহলে ফরিদপুরের সহকর্মীরা জানতে পারবে, আমরা ফরিদপুর জেলে আছি এবং অনশন ধর্মঘট করছি। 🔒ব্যাখ্যা আধাঘণ্টা দেরি করলাম, কাউকেও দেখিনা—চায়ের দোকানের মালিক এসেছে, তাকে আমি আমার নাম বললাম এবং খবর দিতে বললাম আমার সহকর্মীদের। আমরা জেলের দিকে রওয়ানা করছি, এমন সময় আওয়ামী লীগের এক কর্মী, তার নামও মহিউদ্দিন—সকলে মহি বলে ডাকে, তার সঙ্গে দেখা। আমি যখন ফরিদপুরে ১৯৪৬ সালের ইলেকশনে ওয়ার্কার ইনচার্জ ছিলাম, তখন আমার সাথে সাথে কাজ করেছে। মহি সাইকেলে যাচ্ছিল, আমি তাকে দেখে ডাক দিলাম নাম ধরে, সে সাইকেল থেকে আমাকে দেখে এগিয়ে আসল। আইবি নিষেধ করছিল । আমি শুনলাম না, তাকে এক ধমক দিলাম এবং মহিকে বললাম, আমাদের ফরিদপুর জেলে এনেছে এবং আজ থেকে অনশন করছি সকলকে এ খবর দিতে। আমরা জেলগেটে এসে দেখি, জেলার সাহেব, ডেপুটি জেলার সাহেব এসে গেছেন। আমাদের তাড়াতাড়ি ভেতরে নিয়ে যেতে বললেন। তাঁরা পূর্বেই খবর পেয়েছিলেন। জায়গাও ঠিক করে রেখেছেন, তবে রাজবন্দিদের সাথে নয়, অন্য জায়গায়। 🔒ব্যাখ্যা আমরা তাড়াতাড়ি ঔষধ খেলাম পেট পরিষ্কার করবার জন্য। 🔒ব্যাখ্যা তারপর অনশন ধর্মঘট শুরু করলাম। দুই দিন পর অবস্থা খারাপ হলে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। 🔒ব্যাখ্যা আমাদের দুইজনেরই শরীর খারাপ। মহিউদ্দিন ভুগছে প্লূরিসিস রোগে, আর আমি ভুগছি নানা রোগে। চার দিন পরে আমাদের নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে শুরু করল। মহাবিপদ! নাকের ভিতর দিয়ে নল পেটের মধ্যে পর্যন্ত দেয়। 🔒ব্যাখ্যা তারপর নলের মুখে একটা কাপের মতো লাগিয়ে দেয়। একটা ছিদ্রও থাকে । সে কাপের মধ্যে দুধের মতো পাতলা করে খাবার তৈরি করে পেটের ভেতর ঢেলে দেয়। এদের কথা হলো, “মরতে দেব না।” 🔒ব্যাখ্যা


আমার নাকে একটা ব্যারাম ছিল। দুই-তিনবার দেবার পরেই ঘা হয়ে গেছে। 🔒ব্যাখ্যা রক্ত আসে আর যন্ত্রণা পাই। আমরা আপত্তি করতে লাগলাম। জেল কর্তৃপক্ষ শুনছে না। খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমার দুইটা নাকের ভেতরই ঘা হয়ে গেছে। তারা হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে। 🔒ব্যাখ্যা বাধা দিলে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে জোর করে ধরে খাওয়াবে। আমাদের শরীরও খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাঁচ-ছয় দিন পরে বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। আমরা ইচ্ছা করে কাগজি লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেতাম। 🔒ব্যাখ্যা কারণ এর মধ্যে কোনো ফুড ভ্যালু নাই। আমাদের ওজনও কমতে ছিল। নাকের মধ্য দিয়ে নল দিয়ে খাওয়ার সময় নলটা একটু এদিক ওদিক হলেই আর উপায় থাকবে না। সিভিল সার্জন সাহেব, ডাক্তার সাহেব ও জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো অসুবিধা না হয়, তার চেষ্টা করছিলেন। 🔒ব্যাখ্যা বার বার সিভিল সার্জন সাহেব অনশন করতে নিষেধ করছিলেন। আমার ও মহিউদ্দিনের শরীর অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন আর বিছানা থেকে উঠবার শক্তি নাই। আমার হার্টের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে বুঝতে পারলাম। প্যালপিটিশন হয় ভীষণভাবে। নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয় । ভাবলাম আর বেশি দিন নাই। একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনালাম। 🔒ব্যাখ্যা যদিও হাত কাঁপে তথাপি ছোট ছোট করে চারটা চিঠি লিখলাম। 🔒ব্যাখ্যা  আব্বার কাছে একটা, রেণুর কাছে একটা, আর দুইটা শহীদ সাহেব ও ভাসানী সাহেবের কাছে। দু-একদিন পরে আর লেখার শক্তি থাকবে না । একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম, 🔒ব্যাখ্যা রাতে সিপাহিরা ডিউটিতে এসে খবর দিল, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে। কয়েকজন লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে। 🔒ব্যাখ্যা রেডিওর খবর। ফরিদপুরে হরতাল হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসেছিল। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল, 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই', 🔒ব্যাখ্যা ‘বাঙালিদের শোষণ করা চলবে না’, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই', 'রাজবন্দিদের মুক্তি চাই' 🔒ব্যাখ্যা আরও অনেক স্লোগান। আমার খুব খারাপ লাগল । 🔒ব্যাখ্যা কারণ, ফরিদপুর আমার জেলা, মহিউদ্দিনের নামে কোনো স্লোগান দিচ্ছে না কেন? শুধু ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই' বললেই তো হতো। 🔒ব্যাখ্যা রাতে যখন ঢাকার খবর পেলাম তখন ভীষণ চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম। কত লোক মারা গেছে বলা কষ্টকর। তবে অনেক লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে শুনেছি । দুজনে পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে আছি। ডাক্তার সাহেব আমাদের নড়াচড়া করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু উত্তেজনায় উঠে বসলাম ।

২২ তারিখে সারা দিন ফরিদপুরে শোভাযাত্রা চলল। কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী এক জায়গায় হলেই স্লোগান দেয় । 🔒ব্যাখ্যা ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা রাস্তায় বেড়ায় আর স্লোগান দেয়। ২২ তারিখে খবরের কাগজ এল, কিছু কিছু খবর পেলাম। মুসলিম লীগ সরকার কত বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ করল। মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীতে এই প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল । 🔒ব্যাখ্যা দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নাই । জনাব নূরুল আমিন বুঝতে পারলেন না, আমলাতন্ত্র তাঁকে কোথায় নিয়ে গেল। 🔒ব্যাখ্যা গুলি হলো মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের এরিয়ার ভেতরে, রাস্তায়ও নয়। ১৪৪ ধারা 🔒ব্যাখ্যা ভঙ্গ করলেও গুলি না করে গ্রেফতার করলেই তো চলত । আমি ভাবলাম, দেখব কি না জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে আর উপায় নাই। 🔒ব্যাখ্যা মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে । 🔒ব্যাখ্যা


খবরের কাগজে দেখলাম, মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ এমএলএ, খয়রাত হোসেন এমএলএ, খান সাহেব ওসমান আলী এমএলএ এবং মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও খোন্দকার মোশতাক আহমদসহ শত শত ছাত্র ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। 🔒ব্যাখ্যা দু-একদিন পরে দেখলাম কয়েকজন প্রফেসর, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক সাহেব ও বহু আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। নারায়ণগঞ্জে খানসাহেব ওসমান আলীর বাড়ির ভেতরে ঢুকে ভীষণ মারপিট করেছে । বৃদ্ধ খান সাহেব ও তাঁর ছেলেমেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হয়েছে । সমস্ত ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। 🔒ব্যাখ্যা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মীই বোধহয় আর জেলখানার বাইরে নাই ৷

আমাদের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে, যে-কোনো মুহূর্তে মৃত্যুর শান্তি-ছ উ-ছায়ায় চিরদিনের জন্য স্থান পেতে পারি। সিভিল সার্জন সাহেব দিনের মধ্যে পাঁচ-সাতবার আমাদের দেখতে আসেন। ২৫ তারিখ সকালে যখন আমাকে তিনি পরীক্ষা করছিলেন হঠাৎ দেখলাম, তার মুখ গম্ভীর হয়ে গেছে। তিনি কোনো কথা না বলে, মুখ কালো করে বেরিয়ে গেলেন। আমি বুঝলাম, আমার দিন ফুরিয়ে গেছে। 🔒ব্যাখ্যা কিছু সময় পরে আবার ফিরে এসে বললেন, “এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে।” 🔒ব্যাখ্যা আমার কথা বলতে কষ্ট হয়, আস্তে আস্তে বললাম, “অনেক লোক আছে। কাজ পড়ে থাকবে না। দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি, তাদের জন্যই জীবন দিতে পারলাম, এই শান্তি ।” 🔒ব্যাখ্যা  ডেপুটি জেলার সাহেব বললেন, “কাউকে খবর দিতে হবে কি না? আপনার ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী কোথায়? আপনার আব্বার কাছে কোনো টেলিগ্রাম করবেন?” বললাম, “দরকার নাই। আর তাদের কষ্ট দিতে চাই না।” আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি, হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল। হার্টের দুর্বলতা না থাকলে এত তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে পড়তাম না। একজন কয়েদি ছিল, আমার হাত-পায়ে সরিষার তেল গরম করে মালিশ করতে শুরু করল। মাঝে মাঝে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল ।

মহিউদ্দিনের অবস্থাও ভালো না, কারণ প্লূরিসিস আবার আক্রমণ করে বসেছে। আমার চিঠি চারখানা একজন কর্মচারীকে ডেকে তাঁর কাছে দিয়ে বললাম, আমার মৃত্যুর পরে চিঠি চারখানা ফরিদপুরে আমার এক আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দিতে । তিনি কথা দিলেন, আমি তাঁর কাছ থেকে ওয়াদা নিলাম । বার বার আব্বা, মা , ভাইবোনদের চেহারা ভেসে আসছিল আমার চোখের সামনে। 🔒ব্যাখ্যা রেণুর দশা কী হবে? তার তো কেউ নাই দুনিয়ায়। ছোট ছেলেমেয়ে দুইটার অবস্থাই বা কী হবে? তবে আমার আব্বা ও ছোট ভাই ওদের ফেলবে না, এ বিশ্বাস আমার ছিল। চিন্তাশক্তিও হারিয়ে ফেলছিলাম। 🔒ব্যাখ্যা হাচিনা, কামালকে একবার দেখতেও পারলাম না। বাড়ির কেউ খবর পায় নাই, পেলে নিশ্চয়ই আসত। মহিউদ্দিন ও আমি পাশাপাশি দুইটা খাট পেতে নিয়েছিলাম। একজন আরেকজনের হাত ধরে শুয়ে থাকতাম। দুজনেই চুপচাপ পড়ে থাকি । আমার বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। সিভিল সার্জন সাহেবের কোনো সময়-অসময় ছিল না। আসছেন, দেখছেন, চলে যাচ্ছেন। ২৭ তারিখ দিনের বেলা আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ল। বোধহয় আর দু-একদিন বাঁচতে পারি।


২৭ তারিখ রাত আটটার সময় আমরা দুইজন চুপচাপ শুয়ে আছি। কারও সাথে কথা বলার ইচ্ছাও নাই, শক্তিও নাই । দুইজনেই শুয়ে শুয়ে কয়েদির সাহায্যে ওজু করে খোদার কাছে মাপ চেয়ে নিয়েছি। দরজা খুলে বাইরে থেকে ডেপুটি জেলার এসে আমার কাছে বসলেন এবং বললেন, “আপনাকে যদি মুক্তি দেওয়া হয়, তবে খাবেন তো?”  🔒ব্যাখ্যা বললাম, “মুক্তি দিলে খাব, না দিলে খাব না। 🔒ব্যাখ্যা তবে আমার লাশ মুক্তি পেয়ে যাবে।” 🔒ব্যাখ্যা  ডাক্তার সাহেব এবং আরও কয়েকজন কর্মচারী এসে গেছে, চেয়ে দেখলাম। ডেপুটি জেলার সাহেব বললেন, “আমি পড়ে শোনাই, আপনার মুক্তির অর্ডার এসে গেছে রেডিওগ্রামে এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের অফিস থেকেও অর্ডার এসেছে। দুইটা অর্ডার পেয়েছি।” তিনি পড়ে শোনালেন, আমি বিশ্বাস করতে চাইলাম না। মহিউদ্দিন শুয়ে শুয়ে অর্ডারটা দেখল এবং বলল যে, “তোমার অর্ডার এসেছে।” আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল । ডেপুটি সাহেব বললেন, “আমাকে অবিশ্বাস করার কিছুই নাই। 🔒ব্যাখ্যা  কারণ, আমার কোনো স্বার্থ নাই; আপনার মুক্তির আদেশ সত্যিই এসেছে।” ডাক্তার সাহেব ডাবের পানি আনিয়েছেন। মহিউদ্দিনকে দুইজন ধরে বসিয়ে দিলেন। সে আমাকে বলল, “তোমাকে ডাবের পানি আমি খাইয়ে দিব।” দুই চামচ ডাবের পানি দিয়ে মহিউদ্দিন আমার অনশন ভাঙিয়ে দিল ।

সকাল দশটার দিকে খবর পেলাম, আব্বা এসেছেন। জেলগেটে আমাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই কৰ্তৃপক্ষ তাঁকে ভিতরে নিয়ে আসলেন। আমাকে দেখেই আব্বার চোখে পানি এসে গেছে। 🔒ব্যাখ্যা আব্বার সহ্যশক্তি খুব বেশি । কোনোমতে চোখের পানি মুছে ফেললেন । কাছে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমার মুক্তির আদেশ হয়েছে, তোমাকে আমি নিয়ে যাব বাড়িতে। আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম তোমার মা, রেণু, হাচিনা ও কামালকে নিয়ে, দুই দিন বসে রইলাম, কেউ খবর দেয় না, তোমাকে কোথায় নিয়ে গেছে। তুমি ঢাকায় নাই একথা জেলগেট থেকে বলেছে। যদিও পরে খবর পেলাম, তুমি ফরিদপুর জেলে আছ । তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। নারায়ণগঞ্জ এসে যে জাহাজ ধরব তারও উপায় নেই। তোমার মা ও রেণুকে ঢাকায় রেখে আমি চলে এসেছি। কারণ, আমার সন্দেহ হয়েছিল তোমাকে ফরিদপুর নেওয়া হয়েছে কি না! আজই টেলিগ্রাম করব, তারা যেন বাড়িতে রওয়ানা হয়ে যায়। আমি আগামীকাল বা পরশু তোমাকে নিয়ে রওয়ানা করব, বাকি খোদা ভরসা । সিভিল সার্জন সাহেব বলেছেন, তোমাকে নিয়ে যেতে হলে লিখে দিতে হবে যে, “আমার দায়িত্বে নিয়ে যাচ্ছি।” আব্বা আমাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং বললেন, তিনি খবর পেয়েছেন মহিউদ্দিনও মুক্তি পাবে, তবে একসাথে ছাড়বে না, একদিন পরে ছাড়বে।

পরের দিন আব্বা আমাকে নিতে আসলেন। অনেক লোক জেলগেটে হাজির । আমাকে স্ট্রেচারে করে জেলগেটে নিয়ে যাওয়া হলো 🔒ব্যাখ্যা এবং গেটের বাইরে রেখে দিল, যদি কিছু হয় বাইরে গিয়ে হোক, এই তাদের ধারণা ।

পাঁচদিন পর বাড়ি পৌছালাম। মাকে তো বোঝানো কষ্টকর। হাচু আমার গলা ধরে প্রথমেই বলল, “আব্বা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।” একুশে ফেব্রুয়ারি ওরা ঢাকায় ছিল, যা শুনেছে তাই বলে চলেছে। কামাল আমার কাছে আসল না, তবে আমার দিকে চেয়ে রইল। আমি খুব দুর্বল, বিছানায় শুয়ে পড়লাম। গতকাল রেণু ও মা ঢাকা থেকে বাড়ি এসে আমার প্রতীক্ষায় দিন কাটাচ্ছিল। এক এক করে সকলে যখন আমার কামরা থেকে বিদায় নিল, তখন রেণু কেঁদে ফেলল এবং বলল, তোমার চিঠি পেয়ে আমি বুঝেছিলাম, তুমি কিছু একটা করে ফেলবা। আমি তোমাকে দেখবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কাকে বলব নিয়ে যেতে, আব্বাকে বলতে পারি না লজ্জায়। নাসের ভাই বাড়ি নাই। যখন খবর পেলাম খবরের কাগজে, তখন লজ্জা শরম ত্যাগ করে আব্বাকে বললাম। আব্বা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তাই রওয়ানা করলাম ঢাকায়, সোজা আমাদের বড় নৌকায় তিনজন মাল্লা নিয়ে। কেন তুমি অনশন করতে গিয়েছিলে? এদের কি দয়া মায়া আছে? 🔒ব্যাখ্যা আমাদের কারও কথাও তোমার মনে ছিল না? কিছু একটা হলে কী উপায় হতো? আমি এই দুইটা দুধের বাচ্চা নিয়ে কী করে বাঁচতাম? হাচিনা, কামালের অবস্থা কী হতো? তুমি বলবা, খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট তো হতো না? মানুষ কি শুধু খাওয়া-পরা নিয়েই বেঁচে থাকতে চায়? আর মরে গেলে দেশের কাজই-বা কীভাবে করতা?”  🔒ব্যাখ্যা আমি তাকে কিছুই বললাম না । তাকে বলতে দিলাম, কারণ মনের কথা প্রকাশ করতে পারলে ব্যথাটা কিছু কমে যায়। 🔒ব্যাখ্যা রেণু খুব চাপা, আজ যেন কথার বাঁধ ভেঙে গেছে। 🔒ব্যাখ্যা শুধু বললাম, “উপায় ছিল না।” বাচ্চা দুইটা ঘুমিয়ে পড়েছে। শুয়ে পড়লাম। সাতাশ-আটাশ মাস পরে আমার সেই পুরানা জায়গায়, পুরানা কামরায়, পুরানা বিছানায় শুয়ে কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠের দিনগুলির কথা মনে পড়ল। ঢাকার খবর সবই পেয়েছিলাম । মহিউদ্দিনও মুক্তি পেয়েছে। আমি বাইরে এলাম আর আমার সহকর্মীরা আবার জেলে গিয়েছে।

পরের দিন সকালে আব্বা ডাক্তার আনালেন। সিভিল সার্জন সাহেবের প্রেসক্রিপশনও ছিল। ডাক্তার সকলকে বললেন, আমাকে যেন বিছানা থেকে উঠতে না দেওয়া হয়। দিন দশেক পরে আমাকে হাঁটতে হুকুম দিল শুধু বিকেলবেলা। আমাকে দেখতে রোজই অনেক লোক বাড়িতে আসত । গোপালগঞ্জ, খুলনা ও বরিশাল থেকেও আমার কিছু সংখ্যক সহকর্মী এসেছিল। 

একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা' বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, “হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি ।” আমি আর রেণু দুজনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, “আমি তো তোমারও আব্বা।” কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না । আজ গলা ধরে পড়ে রইল । বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়! 🔒ব্যাখ্যা আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায় । 🔒ব্যাখ্যা আজ দুইশত বৎসর পরে আমরা স্বাধীন হয়েছি । সামান্য হলেও কিছু আন্দোলনও করেছি স্বাধীনতার জন্য । ভাগ্যের নিষ্ঠূর পরিহাস, আজ আমাকে ও আমার সহকর্মীদের বছরের পর বছর জেল খাটতে হচ্ছে। 🔒ব্যাখ্যা আরও কতকাল খাটতে হয়, কেইবা জানে? একেই কি বলে স্বাধীনতা? ভয় আমি পাই না, আর মনও শক্ত হয়েছে। ১৯৫২ সালে ঢাকায় গুলি হওয়ার পরে গ্রামে গ্রামে জনসাধারণ বুঝতে আরম্ভ করেছে যে, যারা শাসন করছে তারা জনগণের আপনজন নয়। খবর নিয়ে জানতে পারলাম, একুশে ফেব্রুয়ারি গুলি হওয়ার খবর বাতাসের সাথে সাথে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে এবং ছোট ছোট হাটবাজারে পর্যন্ত হরতাল হয়েছে। মানুষ বুঝতে আরম্ভ করেছে যে, বিশেষ একটা গোষ্ঠী (দল) বাঙালিদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায় ৷ 🔒ব্যাখ্যা

ভরসা হলো, আর দমাতে পারবে না। 🔒ব্যাখ্যা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে উপায় নাই। 🔒ব্যাখ্যা এই আন্দোলনে দেশের লোক সাড়া দিয়েছে ও এগিয়ে এসেছে। কোনো কোনো মাওলানা সাহেবরা ফতোয়া দিয়েছিলেন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে। তাঁরাও ভয় পেয়ে গেছেন । এখন আর প্রকাশ্যে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না । জনমত সৃষ্টি হয়েছে, জনমতের বিরুদ্ধে যেতে শোষকরাও ভয় পায়। 🔒ব্যাখ্যা শাসকরা যখন শোষক হয় অথবা শোষকদের সাহায্য করতে আরম্ভ করে তখন দেশের ও জনগণের মঙ্গল হওয়ার চেয়ে অমঙ্গলই বেশি হয়। 🔒ব্যাখ্যা


কবি-পরিচিতি

bvg

 †kL gywReyi ingvb| 

wcZv

‡kL jyrdi ingvb| 

gvZv

mv‡qiv LvZzb|

mnawg©Yx

‡kL dwRjvZz‡bœmv gywRe (WvKbvg: †iYy)

Rb¥

17B gvP©, 1920 wLªóvã

Rb¥¯’vb

‡MvcvjMÄ †Rjvi Uzw½cvov|

wkÿv

KwjKvZv wek^we`¨vjq †_‡K weG wWwMÖ jvf Ges XvKv wek^we`¨vj‡q AvBb wefv‡M Aa¨qb

Dcvwa

RvwZi RbK e½eÜz|

HwZnvwmK fvlY

1971 mv‡ji 7B gvP© †im‡Kvm© gq`vb (eZ©gv‡b †mvnivIqv`©x D`¨vb)|

¯^vaxbZv †NvlYv

1971 mv‡ji 26 gvP© cÖ_g cÖn‡i evsjv‡`‡ki ¯^vaxbZv †NvlYv|

c`K

RywjI Kzwi (1973)|

g„Zz¨

1975 mv‡ji 15B AvM÷ †`wk-we‡`wk loh‡š¿ mvgwiK evwnbxi KwZcq m`‡m¨i nv‡Z RvwZi RbK e½eÜz †kL gywReyi ingvb mcwiev‡i wbnZ nb|


উত্তর : ‘বোধ হয় আর দু-একদিন বাঁচতে পারি’-শেখ মুজিবুর রহমানের এই বোধ হয়েছিল ২৭ তারিখে।

উত্তর : ফরিদপুরে ২২ তারিখে শোভাযাত্রা চলল।

উত্তর : বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবরের ডাক নাম রেণু।

উত্তর : শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রথম প্রকাশিক হয় ২০১২ সালে।

উত্তর : বঙ্গবন্ধুকে ডাবের পানি খাইয়ে অনশন ভাঙান সহবন্দি মহিউদ্দিন আহমদ। 

উত্তর : রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সরকারি কর্মচারীদের কর্তৃত্বমূলক ব্যবস্থা। 

উত্তর : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

উত্তর : ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ (২০১২) থেকে। 

উত্তর : রেণু (শেখ ফজিলাতুন্নেসা) কে?

উত্তর : ভিক্টোরিয়া পার্কের বর্তমান নাম বাহাদুর শাহ পার্ক।

উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলে অনশনরত অবস্থায় ডেপুটি জেলার তাঁকে অনশন ভাঙাতে চাইলে তিনি বলেন। “মুক্ত দিলে খাব, না দিলে খাব না। তবে আমার লাশ মুক্তি পেয়ে যাবে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে অনড় ও অবিচল এক মানুষ। তিনি এবং মহিউদ্দিন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক রাজবন্দিদের বন্দি রাখার প্রদিবাদে অনশন-ধর্মঘট পালন করেছিলেন। ২৭ তারিখ রাত আটটায় দুইজন চুপচাপ শুয়ে আছেন। তাঁর কেউ কারো সাথে কথা বলছেন না। কথা বলার ইচ্ছাও তাঁদের নেই। কারণ তাঁদের গাঁয়ে কথা বলার মতো শক্তি নেই। এমন সময় ডেপুটি জেলার এসে বঙ্গবন্ধুকে বললেন, “আপনাকে যদি মুক্ত দেওয়া হয়, তবে খাবেন তো?” ডেপুটি জেলারের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেন।

উত্তর : ভাষা আন্দোলনের সময় তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার আন্দোলনকারী বাঙালিদের হত্যা করে যে চরম ভুল করেছে সেই প্রসঙ্গে লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন।
তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন তার চূড়ান্ত পতনের আগে বেশকিছু অপরিণামদর্শী কাজ করেন। তার সবচেয়ে ভূল ছিল ভাষা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া। এছাড়াও অন্দোলন দমানোর জন্য বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ নির্বিশেষে সবাইকে তিনি অযথা গ্রেফতার করে নির্যাতন চালিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ তার পতনের আগ মুহূর্তে যে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে একের পর এক ভুল করতে থাকে, এটা তারই ইঙ্গিত। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।

উত্তর : “মুক্ত দিলে খাব, না দিলে খাব না”- উক্তিটি দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, মুক্তি দেওয়া না হলে তিনি অনশন ভাঙবেন না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কারাবন্দি ও সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে ধরেছেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায়। বাংলার নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি হয়ে তিনি তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় আচরণ এবং অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখার প্রতিবাদে জেলখানায় অনশন ধর্মঘট করেন। অনশনের ফলে  তাঁর শারীরিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়লে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে অনশন ভেঙে খাওয়া দাওয়া করতে বলেন। তখন তিনি বলেন মুক্তি দিলে খাব, না দিলে খাব না। 

উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেরি করে জাহাজ ঘাটে যাবার জন্য কৌশল করে ট্যাক্সিচালককে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনকে গোপনে ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চাচ্ছিলেন এই খবর নেতাকর্মীরা যেন জানতে পারে। ট্যাক্সিচালক খুব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলেন রাতে জাহাজ ধরার জন্য। বঙ্গবন্ধু কৌশল করে ট্যাক্সি ধীরে চালাতে বলেন, যেন জাহাজ ধরতে না পারেন। কেননা, জাহাজ ছেড়ে দিলে নেতাকর্মীদের  কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবসা নেই। আর তাই দেরি করে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কৌশল করে আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন।

উত্তর :
তৎকালীন সরকারের ভাষা আন্দোলনকারীদের হত্যা করে চরম ভুল করা প্রসঙ্গে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার লেখক এ কথা বলেছিলেন। 

তৎকালীন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন তার চূড়ান্ত পতনের আগে বেশকিছু অপরিণামদর্শী কাজ করেছিলেন। তার সর্বশেষ ভুল ছিল ভাষা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার দাবিতে বাঙালি আন্দোলন করলে তিনি তাদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন এবং নির্বিচারে গ্রেফতার করার আদেশ দেন। লেখক সেই প্রসঙ্গেই বলেছেন-“মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।

উত্তর : বিনা বিচারে দীর্ঘকাল জেলে আটক রাখার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু জেলখানায় অনশন করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বহুবার তিনি জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রাক্কালে আরও কয়েকজন রাজবন্দির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জেলে আটক ছিলেন। বিনা বিচারে তিনি দীর্ঘকাল আটক ছিলেন। এরই প্রতিবাদ করার জন্য বঙ্গবন্ধু জেলখানায় আমরণ অনশন করেন।

উত্তর : এখানে রাজবন্দিদের কারামুক্তির সংগ্রামী দৃঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে।
১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  ও তাঁর সঙ্গীদের জেলে বন্দি করে রাখে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। তাই শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ও বিনাবিচারে বছরের পর বছর রাজবন্দিদের কারাগারে আটক রাখার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহকর্মী মহিউদ্দিন আহমেদ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তাঁরা আলোচনা করে ঠিক করেন ‘যাই হোক না কেন, আমরা অনশন ভাঙব না’। অর্থাৎ তাঁদের ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা অনশন ভাঙবেন না।

উত্তর : এখানে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান সরকারের শোষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন।
অন্যায়ের প্রতিবাদে যদি মৃত্যু আসে তা হাসিমুখে বরণ করে নেওয়ার উদার ও শক্ত মানসিকতা খুব কম সংখ্যক মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। সেই গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে একজন হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বিনা বিচারে বছরের পর বছর রাজবন্দিদের কারাগারে আটক করে রাখত। অনশনের মাধ্যমে এরই প্রতিবাদ শুরু হয় তখন। ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রাজনীতিবিদ মহিউদ্দিন আহমেদ কারাবন্দি অবস্থায় অনশন ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাঁদের এ অনশন যেন এক আমৃত্যু সংগ্রাম। মৃত্যু হলেও এ অনশনের পথ থেকে তাঁরা এক পাও নড়বেন না। কারণ কাপুরুষতার চেয়ে সাহসিকতার সাথে মরণই তাঁদের কাম্য।

উত্তর : জেল কর্তৃপক্ষ অনশন না করার বিষয়ে যখন বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তখন বঙ্গবন্ধু আলোচ্য উক্তিটি করেন।
জেল সুপারিনটেনডেন্ট আমীর হোসেন ও ডেপুটি জেলার মোখলেসুর রহমান যখন দেখলেন, বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন আহমেদ অনশন ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তাঁরা তাঁদের বোঝালেন এরকম অনশন না করার জন্য। কিন্তু তাঁরা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন। তাতে মৃত্যু হলেও দুঃখ নেই। তিনি আরও বলেন, “আমাদের এই অনশন সরকারের অবিচারের জন্য, বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলখানায় আটক রাখার জন্য। এ অনশন আপনাদের বিরুদ্ধে নয়।”

উত্তর : এখানে বঙ্গবন্ধু যে সুপারিনটেনডেন্ট আমীর হোসেন সাহেব ও ডেপুটি জেলার মোখলেসুর রহমান সাহেবের উপর ক্ষোভবশত অনশন করছেন না তাই বলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন যখন নিজেদেরসহ অন্যান্য রাজবন্দির মুক্তির জন্য অনশন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন সুপারিনটেনডেন্ট আমীর হোসেন তাঁদের অনেক বোঝালেন  অনশন না করার জন্য। কারণ জেল কর্তৃপক্ষ ভেবেছিলেন তাদের কারণেই জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না রাজবন্দিরা। তখন বঙ্গবন্ধু দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন-“আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের বলবার কিছু নেই। এই অনশন করছি শুধু সরকারের জন্য,  যারা দিনের পর দিন বিনা বিচারে আমাদের আটকে রেখেছে। তারই প্রতিবাদ জানাতে আমরা অনশন ধর্মঘট করছি।”

ক) ২০২১ সালে
খ) ২০২২ সালে
গ) ২০১৯ সালে
ঘ) ২০২০ সালে

উত্তর : ঘ
_

ক) ১০ জানুয়ারি
খ) ১৭ মার্চ
গ) ১৪ এপ্রিল
ঘ) ২৩ জুন

উত্তর : খ
_

ক) ১৫ মার্চ
খ) ১৫ ফেব্রুয়ারি
গ) ১৫ এপ্রিল
ঘ) ১৫ জুন

উত্তর : খ
_

ক) ২৭ শে ফেব্রুয়ারি
খ) ২১ শে ফেব্রুয়ারি
গ) ১৫ ই ফেব্রুয়ারি
ঘ) ২২ শে ফেব্রুয়ারি

উত্তর : গ
_

ক) ভাষা সংগ্রাম
খ) জেলারের দুর্ব্যবহার
গ) সরকারের দমন পীড়ন
ঘ) বিনা বিচারে আটক রাখা

উত্তর : ঘ
_

Score Board

_









_

_









_

_









_

_









_

_









_
Score Board

উত্তর :

ক) রেণু হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী।

খ) প্রশ্নোক্ত উক্তির মাধ্যমে শেখ মুজিবের আপসহীন ও দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।

বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বর্ণিত হয়েছে ১৯৫২ সালে সরকার বিনাবিচারে এদেশের অনেক নেতাকর্মীকে জেলে আটকে রাখে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সরকারের এরূপ নীতির প্রতিবাদে অনশন ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেন। সরকার যতদিন না এদেশের নেকতাকর্শীদের মুক্তি দেবে ততদিন তাদের এ অনশন ধর্মঘট অব্যাহত রাখতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। আর এজন্য যে তারা জীবন দিতেও প্রস্তুত প্রশ্নোক্ত উক্তির মাধ্যমে সে বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।

গ) উদ্দীপকে সাদা চামড়ার মানুষেরা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর শোষণ চালাতে থাকে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হয় বাঙালিদের বঞ্চিত হতে হয় স্বাধীন রাষ্ট্রের সুফল থেকে উদ্দীপকে মার্কিন সমাজে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের সাদা চামড়ার মানুষদের শাসন শোষণের ফলে করুণ জীবন কাটাতে হত। কৃষ্ণাঙ্গদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কোনো অধিকার ছিল না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫৬) রচিত ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শোষণের নীতি অবলম্বন করে। তারা বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার পাশাপাশি বাঙালিদের ওপর দমন নিপীড়নও চালিয়েছে।

তাই বলা যায়, শোষণ - নির্যাতনের দিক থেকে সাদা চামড়ার মানুষদের সাথে পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠীর সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ) “উদ্দীপকের মার্টিন লুথার কিং এবং ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার শেখ মুজিবের কর্মকাণ্ডযেন একই সূত্রে গাঁথা।” মন্তব্যটি যথার্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্ভীক অপসহীন নেতৃত্ব। পাক শ্বাসকের অপশাসকের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। একই ভাবে উদ্দীপকের মার্টিন লুথার কিং বর্ণবৈষ্যম্যের বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে তাঁর ওপর বারবার সীমাহীন নির্যাতন নেমে আসলেও তিনি তা নির্ভিকচিত্তে মোকাবেলা করেন।

উদ্দীপকে মার্টিন লুথার কিং বর্ণবৈষ্যম্যের বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার ছিলেন। কালো মানুষদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করলে তার ওপর নেমে আসে সীমাহীন নির্যাতন। কিন্তু তিনি তা নির্ভীকচিত্তে মোকাবেলা কারন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫৬) রচিত ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পূর্বের এবং আন্দোলন চলাকালীন বাঙালির আর্য সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার চিত্র আঙ্কিত হয়েছে। বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পাক বাহিনী বাঙালিদের ওপর চড়াও হলে বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদ করেন। উদ্দীপকে মার্টিন লুথার কিং ও রচনার বঙ্গবন্ধু উভয়োি অন্যায়ভাবে শাসন শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেন।

    সুতরাং আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।


উত্তর :

ক) আমলান্ত্র হলো রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সরকারী কর্মচারীদের কর্তৃত্বমূলক ব্যবস্থা। 

 খ) ভাষা আন্দোলনের সময় তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার আন্দোলনকারী বাঙালিদের হত্যা করে যে চরম ভুল করেছে সেই প্রসঙ্গে লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন।

তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন তার চূড়ান্ত পতনের আগে বেশ কিছু অপরিনামদর্শী কাজ করেন। তার সর্বশেষ ভুল ছিল ভাষা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া। এছাড়াও আন্দোলন দমানোর জন্য বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ নির্বিশেষে সবাইকে তিনি অযথা গ্রেফতার করে নির্যাতন চালিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার পতনের আগ মুহূর্তে যে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে একের পর এক ভুল করতে থাকে, এটা তারই ইঙ্গিত। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন 

গ) উদ্দীপকের শেষ দুই চরণে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বর্বরতার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

দেশ ভাগের থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলার সাধারণ মানুষের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করে থাকে। শাসন ও শোষন করতে থাকে বাংলার মানুষকে। এমনকি নির্বিচারে হত্যা করতেও দিধা বোধ করে না। তাদের দীর্ঘ শোষনে বাঙালি অতিষ্ঠ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে পা বাড়ায়।

উদ্দীপকের শেষ দুই চরণের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বীবৎস ও ভয়ংকর আক্রমণের দিকটি ফুটে উঠেছে। দানবের মতো ট্যাংঙ্ক দিয়ে তারা সাধারণ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করে। তারা শহরের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গণহত্যা চালায়। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় ১৯৫২ সালের হত্যাকাÐ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সঙ্গীদের অবৈধভাবে জেলে আটকে রাখা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্মমতার কথাই মনে করিয়ে দেয়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করলে পাকিস্তানি  শাসকগোষ্ঠী সেই শেষ দুই চরণে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বর্বরতার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। 

ঘ) “উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মূলসুর একই ধারায় প্রবাহিত” মন্তব্যটি যথার্থ।

ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগ বিশ্বের বুকে অতুলনীয়। পৃথিবীতে আর কোনো দেশ বা জাতি ভাষার জন্য এভাবে জীবন দান করেনি। শুধু ভাষার জন্যই নয় আরো অনেক সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে বাঙালি অবশেষে পেয়েছে স্বাধীনতা দেশ, নিজস্ব পতাকা।

উদ্দীপকে স্বাধীনতার জন্য সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের চিত্র আমরা দেখতে পাই। এ স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে অনেকে হারান স্বামী ও সন্তান। শাসকগোষ্ঠীর সেনাবাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা ও নির্যাতন করে। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মু্িজবুর রহমানের লেখা থেকেও আমরা তাঁর ও তাঁর সহকর্মীদের ওপর শাসকগোষ্ঠীর নিযার্তন ও নির্মমতার কথা জানতে পারি। জানতে পারি এদেশের সাধারণ মানুষের ওপর করা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের কথা।

উদ্দীপক ও আলোচ্য রচনা উভয় জায়গায় বাঙালির দেশপ্রেম আত্মত্যাগ ও শাসিত শোষিত হওয়ার কথা প্রকাশ পেয়েছে। আরও প্রকাশ পেয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা ও  নিষ্ঠুরতার কথা। তাই আমরা বলতে পারি, উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মূল সুর একই ধারায় প্রবাহিত।   

উত্তর : -

উত্তর : -