নেকলেস

নেকলেস

গী দ্যা মোপাসাঁ


লেখক পরিচিতি :

নাম : গী দ্যা মোপাসাঁ।

পূর্ণ নাম : Henri-Renri-Albert-Guy de Maupassant.

পিতা : গুস্তাভ দ্য মোপাসাঁ।

মাতা : লরা লি পয়টিভিন (Laure Le Poittevin)।

জন্ম : ৫ই আগস্ট, ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ।

জন্মস্থান : ফ্রান্সের নর্মাণ্ডি শহর।

শিক্ষা : ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে নিম্নমাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি।

পেশা : সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চা।

খ্যাতি : গল্পকার হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন।

সাহিত্যকর্ম : উপন্যাস: Une Vie (১৮৮৩), Ble Ami (১৮৮৫), Mont-Oriol (১৮৮৭); গল্পগ্রন্থ: La Maison Tellier (১৮৮১), Miss Harrie (১৮৮৪), Clarir de Lune (১৮৮৪)।

মৃত্যু : ৬ জুলাই, ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দ।


অনুবাদক পরিচিতি :

নাম : পূর্ণেন্দু দস্তিদার।

পিতা : চন্দ্রকুমার দস্তিদার।

মাতা : কুমুদিনী দস্তিদার।

জন্ম : ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০এ জুন।

জন্মস্থান : চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে।

পেশা : তিনি ছিলেন একাধারে লেখক ও রাজনীতিবিদ। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন আইনজীবী; সমাজভাবুক লেখক হিসেবেও খ্যাতি ছিল তাঁর।

কারাবরণ : তিনি মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে অংশ নেওয়ায় কারাবরণ করেন। 

সাহিত্যকর্ম : গ্রন্থ : 'কবিয়াল রমেশ শীল’, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম’, ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা। অনুবাদ গ্ৰন্থ : ‘শেখভের গল্প' ও ‘মোপাসাঁর গল্প

মৃত্যু : তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।



সে ছিল চমৎকার এক সুন্দরী তরুণী। নিয়তির ভুলেই যেন এক কেরানির পরিবারে তার জন্ম হয়েছে। 🔒ব্যাখ্যা তার ছিল না কোনো আনন্দ, কোনো আশা। পরিচিত হবার, প্রশংসা পাওয়ার, প্রেমলাভ করার এবং কোনো ধনী অথবা বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে বিবাহিত হওয়ার কোনো উপায় তার ছিল না। 🔒ব্যাখ্যা তাই শিক্ষা পরিষদ আপিসের সামান্য এক কেরানির সঙ্গে বিবাহ সে স্বীকার করে নিয়েছিল। 🔒ব্যাখ্যা

নিজেকে সজ্জিত করার অক্ষমতার জন্য সে সাধারণভাবেই থাকত। কিন্তু তার শ্রেণির অন্যতম হিসেবে সে ছিল অসুখী 🔒ব্যাখ্যা । 🔒ব্যাখ্যা তাদের কোনো জাতিবর্ণ নেই। কারণ জন্মের পরে পরিবার থেকেই তারা শ্রী, সৌন্দর্য ও মাধুর্য সম্পর্কে সজাগ হয়ে ওঠে। সহজাত চাতুর্য, প্রকৃতিগত সুরুচি আর বুদ্ধির নমনীয়তাই হলো তাদের আভিজাত্য, 🔒ব্যাখ্যা যার ফলে অনেক সাধারণ পরিবারের মেয়েকেও বিশিষ্ট মহিলার সমকক্ষ করে তোলে।

সর্বদা তার মনে দুঃখ। 🔒ব্যাখ্যা তার ধারণা, যত সব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে, সেগুলির জন্যই তার জন্ম হয়েছে। তার বাসকক্ষের দারিদ্র্য, হতশ্রী দেওয়াল, জীর্ণ চেয়ার এবং বিবর্ণ জিনিসপত্রের জন্য সে ব্যথিত হতো। তার মতো অবস্থার অন্য কোনো মেয়ে এসব জিনিস যদিও লক্ষ করত না, সে এতে দুঃখিত ও ক্রুদ্ধ হতো। যে খর্বকায় ব্রেটন এই সাধারণ ঘরটি তৈরি করেছিল তাকে দেখলেই তার মনে বেদনাভরা দুঃখ আর বেপরোয়া সব স্বপ্ন 🔒ব্যাখ্যা জেগে উঠত। সে ভাবত তার থাকবে প্রাচ্য-চিত্র-শোভিত, উচ্চ ব্রোঞ্জ-এর আলোকমণ্ডিত পার্শ্বকক্ষ। আর থাকবে দুজন বেশ মোটাসোটা গৃহ-ভৃত্য। তারা খাটো পায়জামা পরে যেই বড় আরামকেদারা দুটি গরম করার যন্ত্র থেকে বিক্ষিপ্ত ভারি হাওয়ায় নিদ্রালু হয়ে উঠেছে, তাতে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকবে। সে কামনা করে একটি বৈঠকখানা, পুরানো রেশমি পর্দা সেখানে ঝুলবে। থাকবে তাতে বিভিন্ন চমৎকার আসবাব, যার ওপর শোভা পাবে অমূল্য সব প্রাচীন কৌতূহল-উদ্দীপক সামগ্রী। যেসব পরিচিত ও আকাঙ্ক্ষিত পুরুষ সব মেয়েদের কাম্য, সেসব অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে বিকাল পাঁচটায় গল্পগুজব করবার জন্য ছোট সুরভিত একটি কক্ষ সেখানে থাকবে। 🔒ব্যাখ্যা

তিনদিন ধরে ব্যবহৃত একখানা টেবিলক্লথ ঢাকা গোল একটি টেবিলে তার স্বামীর বিপরীত দিকে সে যখন সান্ধ্যভোজে বসে এবং খুশির আমেজে তার স্বামী বড় সুরুয়ার পাত্রটির ঢাকনা তুলতে তুলতে বলে : ’ও! কি ভালো মানুষ! এর চেয়ে ভালো কিছু আমি চাই না 🔒ব্যাখ্যা —’ তখন তার মনে পড়বে আড়ম্বরপূর্ণ সান্ধ্যভোজের কথা, উজ্জ্বল রৌপ্যপাত্রাদি, মায়াময় বনভূমির মধ্যে প্রাচীন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিরল পাখির চিত্রশোভিত কারুকার্যপূর্ণ পর্দা দিয়ে ঢাকা দেওয়াল-এর কামনা। সে ভাবে, অপরূপ পাত্রে পরিবেশিত হবে অপূর্ব খাদ্য আর গোলাপি রং-এর রোহিত মাছের টুকরা অথবা মুরগির পাখনা খেতে খেতে মুখে সিংহ-মানবীর হাসি নিয়ে কান পেতে শুনবে চুপি-চুপি-বলা প্রণয়লীলার কাহিনি।

তার কাছে ফ্রক বা জড়োয়া গহনা নেই—নেই বলতে কিছু নেই। অথচ ঐ সব বস্তুই তার প্রিয়। 🔒ব্যাখ্যা তার ধারণা ঐসবের জন্যই তার সৃষ্টি।  সুখী করার, কাম্য হওয়ার, চালাক ও প্রণয়যাচিকা হবার কতই না তার ইচ্ছা। 🔒ব্যাখ্যা তার ’কনভেন্ট’-এর সহপাঠিনী এক ধনী বান্ধবী ছিল। তার সঙ্গে দেখা করতে তার ভালো লাগত না। 🔒ব্যাখ্যা কারণ দেখা করে ফিরে এসে তার খুব কষ্ট লাগত। বিরক্তি, দুঃখ, হতাশা ও নৈরাশ্যে সমস্ত দিন ধরে সে কাঁদত। 🔒ব্যাখ্যা এক সন্ধ্যায় হাতে একটি বড় খাম নিয়ে বেশ উল্লসিত হয়ে তার স্বামী ঘরে ফিরল।

সে বলল, ’এই যে, তোমার জন্য এক জিনিস এনেছি।’ 🔒ব্যাখ্যা

মেয়েটি তাড়াতাড়ি খামটি ছিঁড়ে তার ভিতর থেকে একখানা ছাপানো কার্ড বের করল। তাতে নিচের কথাগুলি মুদ্রিত ছিল :

’জনশিক্ষা মন্ত্রী ও মাদাম জর্জ রেমপন্ন আগামী ১৮ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাঁহাদের নিজ বাসগৃহে মসিঁয়েমাদাম লোইসেলের উপস্থিতি কামনা করেন।

তার স্বামী যেমন আশা করেছিল তেমনভাবে খুশি হওয়ার পরিবর্তে মেয়েটি বিদ্বেষের ভাব নিয়ে আমন্ত্রণ-লিপিখানা টেবিলের উপর নিক্ষেপ করে, 🔒ব্যাখ্যা বিড় বিড় করে বলে :

’ওখানা নিয়ে তুমি আমায় কী করতে বল?’ 🔒ব্যাখ্যা

’কিন্তু লক্ষ্মীটি, আমি ভেবেছিলাম, এতে তুমি খুশি হবে। তুমি বাইরে কখনও যাও না, তাই এই এক সুযোগ, চমৎকার এক সুযোগ!

এটা জোগাড় করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সবাই একখানা চায়, কিন্তু খুব বেছে বেছে দেওয়া হচ্ছে। কর্মচারীদের বেশি দেওয়া হয়নি। সেখানে তুমি গোটা সরকারি মহলকে দেখতে পাবে। 🔒ব্যাখ্যা

বিরক্তির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি অধীরভাবে বলে উঠল :

’ঐ ঘটনার মতো একটি ব্যাপার কী পরে আমি যাব বলে তুমি মনে কর?’

সে ঐ সম্পর্কে কিছু ভাবেনি। তাই সে বিব্রতভাবে বলে :

’কেন আমরা থিয়েটারে যাবার সময় তুমি যেই পোশাকটা পর সেটা পরবে। ওটা আমার কাছে খুব সুন্দর লাগে—’

তার স্ত্রীকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে 🔒ব্যাখ্যা দেখে সে আতঙ্কে নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে গেল। 🔒ব্যাখ্যা তার চোখের পাশ থেকে বড় বড় দুফোঁটা অশ্রু তার গালের উপর গড়িয়ে পড়ল। সে থতমতভাবে বলল :

’কী হলো? কী হলো তোমার?”

প্রবল চেষ্টায় মেয়েটি নিজের বিরক্তি দমন করে, তার সিক্ত গণ্ড মুছে ফেলে শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয় :

’কিছুই না। শুধু আমার কোনো পোশাক নেই বলে আমি ঐ ব্যাপারে যেতে পারব না। তোমার যে কোনো সহকর্মীর স্ত্রীর পোশাক আমার চেয়ে যদি ভালো থাকে, কার্ডখানা নিয়ে তাকে দাও।’ 🔒ব্যাখ্যা

সে মনে মনে দুঃখ পায়। তারপর সে জবাব দেয় :

’মাতিলদা, বেশ তো চল আলাপ করি আমরা। 🔒ব্যাখ্যা এমন কোনো পোশাক, অন্য কোনো উপলক্ষেও যা দিয়ে কাজ চলবে অথচ বেশ সাদাসিধা, তার দাম কত আর হবে?’

কয়েক সেকেন্ড মেয়েটি চিন্তা করে দেখে এমন একটি সংখ্যার বিষয় স্থির করল যা চেয়ে বসলে হিসাবি কেরানির কাছ থেকে সঙ্গে সঙ্গে এক আতঙ্কিত প্রত্যাখ্যান যেন না আসে ৷

শেষপর্যন্ত ইতস্তত করে মেয়েটি বলল :

’আমি ঠিক বলতে পারছি না, তবে আমার মনে হয় চারশ ফ্রাঁ হলে তা কেনা যাবে।’

শুনে তার মুখ ম্লান হয়ে গেল। 🔒ব্যাখ্যা কারণ, তার যেসব বন্ধু গত রবিবারে নানতিয়ারের সমভূমিতে ভরতপাখি শিকারে গিয়েছিল, আগামী গ্রীষ্মে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছায় একটি বন্দুক কিনবার জন্য ঠিক ততটা অর্থই সে সঞ্চয় করেছিল। তা সত্ত্বেও জবাব দিল :

’বেশ ত। আমি তোমায় চারশত ফ্রাঁ দেব। 🔒ব্যাখ্যা কিন্তু বেশ সুন্দর একটি পোশাক কিনে নিও।

’বল’-নাচের দিন যতই এগিয়ে আসতে থাকে ততই মাদাম লোইসেলকে বিচলিত ও উদ্বিগ্ন মনে হয়। 🔒ব্যাখ্যা অবশ্য তার পোশাক প্রায় তৈরি হয়ে এসেছে। একদিন সন্ধ্যায় তার স্বামী তাকে বলল :

’তোমার হয়েছে কী? গত দুই-তিন দিন ধরে তোমার কাজকর্ম কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকছে।’

শুনে মেয়েটি জবাব দেয়, ’আমার কোনো মণিমুক্তা, একটি দামি পাথর কিছুই নেই যা দিয়ে আমি নিজেকে সাজাতে পারি। আমায় দেখলে কেমন গরিব গরিব মনে হবে। তাই এই অনুষ্ঠানে আমার না যাওয়াই ভালো হবে। 🔒ব্যাখ্যা

স্বামী বলল, “কিছু সত্যকার ফুল দিয়ে তুমি সাজতে পার। 🔒ব্যাখ্যা এই ঋতুতে তাতে বেশ সুরুচিপূর্ণ দেখায়। দশ ফ্রাঁ দিলে তুমি দুটি কি তিনটি অত্যন্ত চমৎকার গোলাপফুল পাবে।’

মেয়েটি ঐ কথায় আশ্বস্ত হলো না। 🔒ব্যাখ্যা সে জবাবে বলল, ’না, ধনী মেয়েদের মাঝখানে পোশাকে-পরিচ্ছদে ঐ রকম খেলো দেখানোর মতো আর বেশি কিছু অপমানজনক নেই।

তখন তার স্বামী চেঁচিয়ে উঠল : ’আচ্ছা, কী বোকা দেখত আমরা! যাও, তোমার বান্ধবী মাদার ফোরসটিয়ারের সঙ্গে দেখা করে তাকে বল তার জড়োয়া গহনা যেন তোমায় ধার দেয়। এটুকু আদায় করার তো তার সঙ্গে তোমার পরিচয় যথেষ্ট।’

সে আনন্দধ্বনি করে উঠল। তারপর সে বলল :

’সত্যিই তো! এটা আমি ভাবিনি।’ 🔒ব্যাখ্যা

পরদিন সে তার বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে তার দুঃখের কাহিনি তাকে বলল। 🔒ব্যাখ্যা মাদাম ফোরসটিয়ার তার কাচের দরজা লাগানো গোপনকক্ষে গিয়ে বড় একটি জড়োয়া গহনার বাক্স বের করে এনে তা খুলে বলল : ’ভাই, যা ইচ্ছা এখান থেকে নাও।’

সে প্রথমে দেখল কয়েকটি কঙ্কন, তারপর একটি মুক্তার মালা ও মণিমুক্তা-খচিত চমৎকার কারুকার্য-ভরা একটি সোনার ভিনিশার ’ক্রুশ’। আয়নার সামনে গিয়ে সে জড়োয়া গহনাগুলি পরে পরে দেখে আর ইতস্তত করে, কিন্তু ওগুলি নেওয়ার সিদ্ধান্তও করতে ছেড়ে যেতেও পারে না। তারপর সে জিজ্ঞাসা করে :

’আর কিছু তোমার নেই?

’কেন? আছে, তোমার যা পছন্দ তুমি তা বেছে নাও।’

হঠাৎ সে কালো স্যাটিনের একটি বাক্সে দেখল অপরূপ একখানা হীরার হার। অদম্য কামনায় তার বুক দুর দুর করে 🔒ব্যাখ্যা । 🔒ব্যাখ্যা সেটা তুলে নিতে গিয়ে তার হাত কাঁপে। 🔒ব্যাখ্যা সে তার পোশাকের উপর দিয়ে সেটা গলায় তুলে নেয় এবং সেগুলো দেখে আনন্দে বিহ্বল হয়ে যায়। তারপর উদ্বেগভরা, ইতস্ততভাবে সে জিজ্ঞাসা করল :

’তুমি ঐখানা আমায় ধার দেবে? শুধু এটা?’

’কেন দেব না? নিশ্চয়ই দেব।’ 🔒ব্যাখ্যা

সে সবেগে তার বান্ধবীর গলা জড়িয়ে ধরে, পরম আবেগে তাকে বুকে চেপে ধরে। 🔒ব্যাখ্যা তারপর তার সম্পদ নিয়ে সে চলে আসে। 🔒ব্যাখ্যা

’বল’ নাচের দিন এসে গেল। মাদাম লোইসেলের জয়জয়কার। 🔒ব্যাখ্যা সে ছিল সবচেয়ে সুন্দরী, সুরুচিময়ী, সুদর্শনা, হাস্যময়ী ও আনন্দপূর্ণ। সব পুরুষ তাকে লক্ষ করছিল, তার নাম জিজ্ঞাসা করে তার সঙ্গে আলাপের আগ্রহ প্রকাশ করছিল। মন্ত্রিসভার সব সদস্যের তার সঙ্গে ’ওয়ালটজ’ নৃত্য করতে ইচ্ছা হচ্ছিল। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী তার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন।

আনন্দে মত্ত হয়ে আবেগ ও উৎসাহ নিয়ে সে নৃত্য করছিল। তার রূপের বিজয়গর্বে, সাফল্যের গৌরবে সে আর কিছুই ভাবে না। এক আনন্দের মেঘের ওপর দিয়ে যেন ভেসে আসছিল এই সব আহুতি ও মুগ্ধতা আর জাগ্রত সব কামনা। যে কোনো মেয়ের অন্তরে এই পরিপূর্ণ বিজয় কত মধুর! 🔒ব্যাখ্যা

ভোর চারটার দিকে সে বাড়ি ফিরে গেল। অন্য সেই তিনজন ভদ্রলোকের স্ত্রী খুব বেশি ফুর্তিতে মত্ত ছিল, তাদের সঙ্গে তার স্বামী ছোট একটি বিশ্রামকক্ষে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত আধঘুমে বসেছিল।

বাড়ি ফিরবার পথে গায়ে জড়াবার জন্য তারা যে আটপৌরে সাধারণ চাদর নিয়ে এসেছিল সে তার কাঁধের ওপর সেটি ছড়িয়ে দেয়। ’বল’ নাচের পোশাকে অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে ঐটির দারিদ্র্য সুপরিস্ফুট হয়ে উঠছিল। 🔒ব্যাখ্যা মেয়েটি তা অনুভব করতে পারে তাই অন্য যেসব ধনী মেয়ে দামি পশমি চাদর দিয়ে গা ঢেকেছিল তাদের চোখে না পড়বার জন্য সে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যেতে লাগল।

লোইসেল তাকে টেনে ধরে বলল : ’থামো, তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে ওখানে। 🔒ব্যাখ্যা আমি একখানা গাড়ি ডেকে আনি।’ কিন্তু মেয়েটি কোনো কথায় কান না দিয়ে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। রাস্তায় যখন তারা পৌঁছে গেল, সেখানে কোনো গাড়ি পাওয়া গেল না। তারা গাড়ির খোঁজ করতে করতে দূরে কোনো একখানাকে দেখে তার গাড়োয়ানকে ডাকতে থাকে।

হতাশ হয়ে কাঁপতে কাঁপতে তারা সিন নদীর দিকে হাঁটতে থাকে। 🔒ব্যাখ্যা শেষ পর্যন্ত যে পুরাতন একখানা তারা পায়, তাহলো সেই নিশাচর দুই-যাত্রীর গাড়ি যা প্যারিতে সন্ধ্যার পর লোকের চোখে পড়ে, তার একখানা, যেইদিনে এইগুলি নিজের দুর্দশা দেখাতে লজ্জা পায়।

ঐ খানি তাদের মার্টার স্ট্রিটে ঘরের দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেল। তারা ক্লান্তভাবে তাদের কক্ষে গেল। মেয়েটির সব কাজ শেষ। কিন্তু স্বামীর ব্যাপারে, তার মনে পড়ল যে দশটায় তাকে আপিসে গিয়ে পৌঁছাতে হবে।

নিজেকে গৌরবমণ্ডিত রূপে শেষ একবার দেখার জন্য সে আয়নার সামনে গিয়ে তার গলার চাদরখানা খোলে ৷ হঠাৎ সে আর্তনাদ করে উঠল। 🔒ব্যাখ্যা তার হারখানা গলায় জড়ানো নেই।

তার স্বামীর পোশাক তখন অর্ধেক মাত্র খোলা হয়েছে। সে জিজ্ঞাসা করল : ’কী হয়েছে?’

উত্তেজিতভাবে মেয়েটি তার দিকে ফিরে বলল :

’আমার–আমার কাছে—মাদাম ফোরস্টিয়ারের হারখানা নেই।

আতঙ্কিতভাবে সে উঠে দাঁড়াল : ’কী বললে! তা কী করে হবে? এটা সম্ভব নয়।’

পোশাকের ও বহির্বাসের ভাঁজের মধ্যে, পকেটে, সব জায়গায় তারা খোঁজ করে। কিন্তু তা পাওয়া গেল না। স্বামী জিজ্ঞাসা করল : ’ঐ বাড়ি থেকে চলে আসবার সময় তা যে তোমার গলায় ছিল, তোমার ঠিক মনে আছে?

’হ্যাঁ, আমরা যখন বিশ্রামকক্ষ দিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম, তখনও তা ছিল আমার খেয়াল আছে।’

’কিন্তু তুমি যদি ওটা রাস্তায় হারাতে, ওটা পড়বার শব্দ আমাদের শোনা উচিত ছিল। গাড়ির মধ্যেই নিশ্চয়ই পড়েছে মনে হয়।’

’হ্যাঁ, সম্ভবত তাই। তুমি গাড়ির নম্বরটি টুকে নিয়েছিলে?’

’না। আর তুমি কি তা লক্ষ করেছিলে?’

’না ৷’

হতাশভাবে তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। 🔒ব্যাখ্যা শেষ পর্যন্ত লোইসেল আবার পোশাক পরে নিল।

সে বলল, ’আমি যাচ্ছি। দেখি যতটা রাস্তা আমরা হেঁটেছিলাম, সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় কিনা।’

তারপর সে গেল। মেয়েটি তার সান্ধ্য গাউন পরেই রয়ে গেল। বিছানায় শুতে যাবার শক্তি তার নেই। কোনো উচ্চাশা বা ভাবনা ছাড়াই সে একখানা চেয়ারে গা এলিয়ে পড়ে রইল।

সকাল সাতটার দিকে তার স্বামী ফিরে এল। কিছুই সে খুঁজে পায়নি।

সে পুলিশের কাছে ও গাড়ির আপিসে গিয়েছিল এবং পুরস্কার ঘোষণা করে একটা বিজ্ঞাপনও দিয়ে এসেছে। সে যথাসাধ্য করে এসেছে বলে তাদের মনে কিছুটা আশা হলো।

ঐ ভয়ানক বিপর্যয়ে মেয়েটি সারাদিন এক বিভ্রান্ত অবস্থায় কাটাল। সন্ধ্যাবেলা যখন লোইসেল ফিরে এল তখন তার মুখে যন্ত্রণার মলিন ছাপ, কিছুই সে খুঁজে পায়নি।

সে বলল, ’তোমার বান্ধবীকে লিখে দিতে হবে যে হারখানার আংটা তুমি ভেঙে ফেলেছ, তাই তা তুমি মেরামত করতে দিয়েছ। তাতে আমরা ভেবে দেখবার সময় পাব।’

তার নির্দেশমত মেয়েটি লিখে দিল।

এক সপ্তাহ শেষ হওয়ায় তারা সব আশা ত্যাগ করল। বয়সে পাঁচ বছরের বড় লোইসেল ঘোষণা করল :

’ঐ জড়োয়া গহনা ফেরত দেবার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।’ 🔒ব্যাখ্যা

পরদিন যেই বাক্সে ওটা ছিল, তার ভিতরে যেই স্বর্ণকারের নাম ছিল, তার কাছে তারা সেটা নিয়ে গেল। সে তার খাতাপত্র ঘেঁটে বলল :

’মাদাম, ঐ হারখানা আমি বিক্রি করিনি, আমি শুধু বাক্সটা দিয়েছিলাম।’

তারপর তারা সেই হারটির মত হার খোঁজ করার জন্য, তাদের স্মৃতির উপর নির্ভর করে এক স্বর্ণকার থেকে অন্য স্বর্ণকারের কাছে যেতে থাকে। 🔒ব্যাখ্যা দু’জনেরই শরীর বিরক্তি ও উদ্বেগে খারাপ হয়ে গেছে। 🔒ব্যাখ্যা

প্যালেস রয়েলে তারা এমন এক হীরার কণ্ঠহার দেখল সেটা ঠিক তাদের হারানো হারের মতো। তার দাম চল্লিশ হাজার ফ্রাঁ। ছত্রিশ হাজার ফ্রাঁতে তারা তা পেতে পারে।

তিন দিন যেন ওটা বিক্রি না করে সে জন্য তারা স্বর্ণকারকে বিশেষভাবে অনুরোধ করল। তারা আরও ব্যবস্থা করল যে, যদি ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হওয়ার আগে ঐ হারটি খুঁজে পাওয়া যায়, তারা এটা ফেরত দিলে চৌত্রিশ হাজার ফ্রাঁ ফেরত নিতে পারবে।

লোইসেলের কাছে তার বাবার মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত আঠারো হাজার ফ্রাঁ ছিল। বাকিটা সে ধার করল।

মাদাম লোইসেল যখন জড়োয়া গহনা মাদাম ফোরস্টিয়ারকে ফেরত দিতে গেল তখন শেষোক্ত মেয়েটি নির্জীবকণ্ঠে বলল :

’ওটা আরও আগে তোমায় ফেরত দেওয়া উচিত ছিল; কারণ, তা আমারও দরকার হতে পারত।’

তার বান্ধবী সেই ভয় করেছিল, তেমনভাবে সে গহনার বাক্সটি খুলল না। 🔒ব্যাখ্যা যদি বদলে দেওয়া হয়েছে সে টের পেত, সে কী মনে করত? সে কী বলত? সে কি তাকে অপহারক ভাবত ?

এবার মাদাম লোইসেল দারিদ্র্যের জীবনের ভয়াবহতা বুঝতে পারে। 🔒ব্যাখ্যা সে তার নিজের কাজ সম্পূর্ণ সাহসের সঙ্গেই করে যায়। ঐ দুঃখজনক দেনা শোধ করা প্রয়োজন। সে তা দেবে। দাসীকে তারা বিদায় করে দিল। 🔒ব্যাখ্যা তারা তাদের বাসা পরিবর্তন করল। নিচু ছাদের কয়েকটি কামরা তারা ভাড়া করল।

ঘরকন্নার কঠিন সব কাজ ও রান্নাঘরের বিরক্তিকর কাজকর্ম সে শিখে নিল। তার গোলাপি নখ দিয়ে সে বাসন ধোয়, তৈলাক্ত পাত্র ও ঝোল রাঁধার কড়াই মাজে। ময়লা কাপড়-চোপড়, শেমিজ, বাসন মোছার গামছা সে পরিষ্কার করে দড়িতে শুকাতে দেয়। রোজ সকালে সে আবর্জনা নিয়ে রাস্তায় ফেলে। সিঁড়ির প্রত্যেক ধাপে শ্বাস নেবার জন্য থেমে থেমে সে জল তোলে। সাধারণ পরিবারের মেয়ের মতো পোশাক পরে সে হাতে ঝুড়ি নিয়ে মুদি, কসাই ও ফলের দোকানে যায় এবং তার দুঃখের পয়সার একটির জন্য পর্যন্ত দর কষাকষি করে। প্রত্যেক মাসেই সময় চেয়ে কিছু দলিল বদল করতে হয়, কাউকে কিছু শোধ দিতে হয়।

তার স্বামীও সন্ধ্যাবেলা কাজ করে। সে কয়েকজন ব্যবসায়ীর হিসাবের খাতা ঠিক করে। 🔒ব্যাখ্যা রাত্রে এক পাতা পাঁচ ’সাও’ হিসেবে সে প্রায়ই লেখা নকল করে।

এরকম জীবন দশ বছর ধরে চলল। 🔒ব্যাখ্যা

দশ বছরের শেষে তারা সব কিছু মহাজনের সুদসহ প্রাপ্য নিয়ে সব ক্ষতিপূরণ করে ফেলতে পারে। তাছাড়া কিছু তাদের সঞ্চয়ও হলো।

মাদাম লোইসেলকে দেখলে এখন বয়স্কা বলে মনে হয়। 🔒ব্যাখ্যা সে এখন গরিব গৃহস্থঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতো হয়ে গেছে। তার চুল অবিন্যস্ত, ঘাঘরা একপাশে মোচড়ানো, হাতগুলো লাল। সে চড়াগলায় কথা বলে এবং বড় বড় কলসিতে জল এনে মেঝে ধোয়। কিন্তু কখনও, তার স্বামী যখন আপিসে থাকে, জানালার ধারে বসে বিগত দিনের সেই সান্ধ্য অনুষ্ঠান ও সেই ’বল’ নাচে তাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছিল ও এমন অতিরিক্ত প্রশংসা পেয়েছিল, তার কথা সে ভাবে।

যদি সে গলার সেই হারখানা না হারাত তাহলে কেমন হতো? কে জানে কে বলতে পারে? কী অনন্যসাধারণ এই জীবন আর তার মধ্যে কত বৈচিত্র্য! সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে আবার বাঁচতেও পারে। 🔒ব্যাখ্যা এক রবিবারে সারা সপ্তাহের নানা দুশ্চিন্তা মন থেকে দূর করার জন্য সে যখন চামপস্-এলিসিস-এ ঘুরে বেড়াচ্ছিল, 🔒ব্যাখ্যা হঠাৎ একটি শিশু নিয়ে ভ্রমণরতা একজন মেয়ে তার চোখে পড়ল। সে হলো মাদাম ফোরস্টিয়ার। সে এখনও যুবতী, সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া। দেখে মাদাম লোইসেলের মন খারাপ হয়ে গেল। 🔒ব্যাখ্যা সে কি ঐ মেয়েটির সঙ্গে কথা বলবে? হ্যাঁ, অবশ্যই বলবে। তাকে যখন সব শোধ করা হয়েছে তখন সব কিছু খুলে সে বলবে। কেন বলবে না?

সে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল : ’সুপ্রভাত, জেনি।’

তার বন্ধু তাকে চিনতে পারল না। 🔒ব্যাখ্যা এক সাধারণ মানুষ তাকে এমন অন্তরঙ্গভাবে সম্বোধন করায় সে অবাক হলো। সে বিব্রতভাবে বলল :

’কিন্তু মাদাম-আপনাকে তো চিনলাম না-বোধহয় আপনার ভুল হয়েছে—’

’না, আমি মাতিলদা লোইসেল।’

তার বান্ধবী বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল 🔒ব্যাখ্যা : ’হায়, আমার বেচারী মাতিলদা! 🔒ব্যাখ্যা এমনভাবে কী করে তুমি বদলে গেলে—’ 🔒ব্যাখ্যা

’হ্যাঁ, তোমার সঙ্গে দেখা হবার পর থেকে আমার দুর্দিন যাচ্ছে—বেশ কিছু দুঃখের দিন গেছে—আর সেটা হয়েছে শুধু তোমার জন্য- ’

’আমার জন্য? তা কী করে হলো?

’সেই যে কমিশনারের ’বল’ নাচের দিন তুমি আমাকে তোমার হীরার হার পরতে দিয়েছিলে, মনে পড়ে? ’হ্যাঁ, বেশ মনে আছে।’

’কথা হচ্ছে, সেখানা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।’

’কী বলছ তুমি? কী করে তা আমায় তুমি ফেরত দিয়েছিলে?’

“ঠিক সেখানার মতো একটি তোমাকে আমি ফেরত দিয়েছিলাম। তার দাম দিতে দশ বছর লেগেছে। তুমি বুঝতেই পার, আমাদের মতো লোক যাদের কিছুই ছিল না, তাদের পক্ষে তা সহজ ছিল না। কিন্তু তা শেষ হয়েছে এবং সেজন্য আমি এখন ভালোভাবেই নিশ্চিন্ত হয়েছি।’

মাদাম ফোরস্টিয়ার তাকে কথার মাঝপথে থামিয়ে বলল :

’তুমি বলছ যে, আমারটা ফিরিয়ে দেবার জন্য তুমি একখানা হীরার হার কিনেছিলে?’

’হ্যাঁ। তা তুমি খেয়াল করনি? ঐ দুটি এক রকম ছিল।’

বলে সে গর্বের ভাবে ও সরল আনন্দে একটু হাসল। দেখে মাদাম ফোরস্টিয়ার-এর মনে খুব লাগল। সে তার

দুটি হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল :

’হায়, আমার বেচারী মাতিলদা! আমারটি ছিল নকল। তার দাম পাঁচশত ফ্রাঁর বেশি হবে না ৷’   

              

উত্তর : শিক্ষা পরিষদ অফিসের কেরানি।   

উত্তর : মসিঁয়ে ও মাদাম লোইসেল ১৮ তারিখে আমন্ত্রণ পায়।  

উত্তর : ওয়ালটজ।  

উত্তর : দীর্ঘদিন পর মাদাম ফোরস্টিয়ারের সাথে মাদাম লোইসেলের চামপস্-এলিসিসে-এ দেখা হয়েছিল।  

উত্তর : খ্রিষ্টান মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলকে কনভেন্ট বলা হয়।  

উত্তর : প্রশ্নোক্ত বাক্যটিতে মাদাম লোইসেলের বিলাসবহুল জীবনাকাক্সক্ষাকে তুলে ধরেছেন।  
নিজের রূপসৌন্দর্যে যারা অন্ধ তারা পৃথিবীতে শুধু নিজেকেই চিনে।   নিজের রূপের অহমিকায় তারা ভুলে যায় তাদের শিকড়ের কথা।   মাতিলদা এক অপ্সরী।   কিন্তু অপরাধ তার জন্ম এক কেরানির ঘরে।   এই পরিচয় তার জীবনকে যেন একরাশ অভিশপ্তের কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।   নিজ রূপের অহমিকায় নিমজ্জিত বিবেক তার শিরায় শিরায় ঘুরে।   তার সেই বিবেক তাকে ক্ষণে ক্ষণে ধিক্কার দেয়।   এ রূপ যেন অমাবস্যার অন্ধকারে হঠাৎ করে জেগে উঠা মায়ামায়ী জ্যোৎস্না, যাকে পৃথিবীর বুকে মানায় না।   দরিদ্র পরিবারের ছোট্ট কুটির তার চিরায়ত সৌন্দর্যকে কেন জানি গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক।   নিছক নিয়তির ভুলেই যেন তার জন্ম হয়েছে দরিদ্র কেরানির পরিবারে। 

উত্তর : মাদাম লোইসেলের জন্ম কেরানির পরিবারে।   তাই বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে হওয়ার উপায় ছিল না।  
‘নেকলেস’ গল্পটিতে মাদাম লোইসেল গরিব ঘরের এক সুন্দরী মেয়ে।   সে উচ্চাভিলাষী, স্বপ্নময় ও সুখী জীবন প্রত্যাশায় দিন-রাত নিজেকে ব্যস্ত রাখে আর নিজের দারিদ্র্যকে চরম ঘৃণা করে।   সে কল্পনার চোখে এমন একজন পুরুষ কামনা করে, যে তার জীবনের সমস্ত আকাক্সক্ষা পূরণ করবে।   কিন্তু দরিদ্র পরিবারের গণ্ডি থেকে সে কখনই বের হতে পারেনি, সন্ধান পায়নি কোনো বিখ্যাত পুরুষের।   মূলত দরিদ্র কেরানির পরিবারের জন্ম নেওয়ার কারণেই মাদাম লোইসেলের বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে বিয়ে হওয়ার উপায় ছিল না।

উত্তর : মাতিলদার দরিদ্রতাই কেরানির সাথে বিয়ে মেনে নিতে বাধ্য করেছিল।  
মাতিলদা ছিল এক চমৎকার সুন্দরী তরুণী।   নিয়তির ভুলেই যেন তার এক কেরানির পরিবারে জন্ম হয়েছিল মাতিলদার।   তার ছিল না কোনো আনন্দ, কোনো আশা।   নিজেকে উচ্চবিত্ত মহলে পরিচিত করার কিংবা প্রশংসা পাওয়ার কোনো উপায় ছিল না তার।   আর এজন্যই ধনী দেখে প্রেমলাভ করার কিংবা বিয়ে করবার মনোভাব অনেক আগ থেকেই মরে গিয়েছিল।   তাই শিক্ষা পরিষদ অফিসের সামান্য এক কেরানির সাথে বিয়ে সে স্বীকার করে নিয়েছিল।

উত্তর : আলোচ্য অংশে মাদাম লোইসেলের দারিদ্র্যের কারণেই যে তিনি অসুখী- এ কথাটিই ব্যক্ত হয়েছে।  
মাদাম লোইসেল ছিলেন অতি সুন্দরী এক তরুণী।   তিনি ভাবতেন, নিয়তির ভুলেই কেরানির পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছে।   তাঁর শ্রেণি অবস্থান নিম্নবিত্ত হলেও শ্রেণি চেতনা ছিল উচ্চবিত্তের।   তাঁর রূপ, সৌন্দর্য ও মাধুর্য সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন।   এজন্যেই নিম্নবিত্তপরিবারের চমৎকার সুন্দরী মেয়ে হিসেবে তিনি অসুখী ছিলেন।

উত্তর : ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল অসুখী ছিল, কারণ তার জন্ম হয়েছিল কেরানি পরিবারে।  
‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল ছিল সুন্দরী তরুণী।   সুন্দরী তরুণী হওয়ার পরও  তার ছিল না কোনো আশা।   পরিচিত হবার, প্রশংসা পাওয়ার, প্রেমলাভ করার কোনো উপায় তার ছিল না।   নিজেকে সে সাজাতে পারে না আর এজন্য সে সাধারণভাবে থাকে।   তার শ্রেণির মধ্যে ছিল অন্যতম।   আর এজন্য মাদাম লোইসেল অসুখী ছিল।

Score Board

_









_

_









_

উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের যেসব ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে তা হলো-
i. মানসিক দৃঢ়তা  
ii. পরশ্রীকাতরতা
iii. আত্ম-সচেতনতা
নিচের কোনটি সঠিক?










_

_









_

_









_
Score Board