রানার
সুকান্ত ভট্টাচার্য
কবি পরিচিতি:
নাম: সুকান্ত ভট্টাচার্য।
পিতা: নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য।
মাতা: সুনীতি দেবী।
জন্ম: ১৫ ই আগস্ট, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ (বাংলা ৩০শে শ্রাবণ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ) কলকাতার
কালীঘাটে জন্মগ্রহণ করেন।
পৈতৃ: ক নিবাসগোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া।
পেশাগত জীবন: তিনি ‘দৈনিক স্বাধীনতা’র কিশোরসভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহিত্যকর্ম: সুকান্ত তাঁর কাব্যে অন্যায়-অবিচার শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বিপ্লব ও মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কালে তাঁর কবিতা মুক্তিকামী বাঙালির মনে বিশেষ শক্তি সাহস জুগিয়েছিল।
কাব্যগ্রন্থ: ছাড়পত্র, ঘুম নেই, পূর্বাভাস;
অন্যান্য রচনা: মিঠেকড়া, অভিযান, হরতাল প্রভৃতি।
ফ্যাসি বিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের পক্ষে ‘অকাল’ কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন।
মৃত্যু: ১৩ মে, ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ; (২৯বৈশাখ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ) মাত্র একুশ বছর বয়সে কবি মৃত্যুবরণ করেন।
রানার🔒ব্যাখ্যা ছুটেছে তাই ঝুম্ঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতে🔒ব্যাখ্যা
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,🔒ব্যাখ্যা
রানার চলেছে, রানার!
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার ।🔒ব্যাখ্যা
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার -🔒ব্যাখ্যা
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার ।
রানার ! রানার !
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে, এ রানার দুর্বার দুর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মতো পিছে সরে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ – বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ ।
অবাক রাতের তারারা, আকাশে মিটমিট করে চায়;
কেমন করে এ রানার সবেগে হরিণের মতো যায়!
কত গ্রাম কত পথ যায় সরে সরে -
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে লণ্ঠন করে ঠনঠন, জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ রানার ! এখনো রাতের কালো ।
এমনি করেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে ‘মেলে'।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে ।
অনেক দুঃখে, বহু বেদনায়, অভিমানে, অনুরাগে,
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে ।
রানার! রানার!
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে ।
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে ।
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেবল জানবে পথের তৃণ,
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে।
দরদে তারার চোখ কাঁপে মিটিমিটি,-
এ-কে যে ভোরের আকাশ পাঠাবে সহানুভূতির চিঠি-
রানার! রানার! কী হবে এ বোঝা বয়ে?
কী হবে ক্ষুধার ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে?
রানার! রানার! ভোর তো হয়েছে – আকাশ হয়েছে লাল
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল?
রানার! গ্রামের রানার!
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চলো আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে -
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর,
অগ্রগতির ‘মেলে’,
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি-
নেই, দেরি নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো, আরো বেগে
দুর্দম, হে রানার ॥
রানার’ কবিতাটি শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে লেখা।
চিঠি মানেই হচ্ছে সুখে-আনন্দে, দুঃখে-শোকে ভরা সংবাদ।
রানারের হাতে খবরের বোঝা।