গৃহ

গৃহ
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

গৃহ বলিলে একটা আরাম বিরামের শান্তি-নিকেতন বুঝায়— যেখানে দিবাশেষে গৃহী কর্মক্লান্ত শ্রান্ত অবস্থায় ফিরিয়া আসিয়া বিশ্রাম করিতে পারে। গৃহ গৃহীকে রৌদ্র বৃষ্টি হিম হইতে রক্ষা করে। পশু পক্ষীদেরও গৃহ আছে। তাহারাও স্ব স্ব গৃহে আপনাকে নিরাপদ মনে করে ।
পিপাসা না থাকিলে জল যেমন উপাদেয় বোধ হয় না, সম্ভবত সেইরূপ গৃহ ছাড়িয়া কতকদিন বিদেশে না থাকিলে গৃহসুখ মিষ্টি বোধ হয় না। পুরুষেরা যদিও সর্বদা বিদেশে যায় না, তবু সমস্ত দিন বাহিরে সংসারক্ষেত্রে থাকিয়া অপরাহ্নে গৃহে ফিরিয়া আসিবার জন্য উৎসুক হয়- বাড়ি আসিলে যেন হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচে।
এখন আমাদের গৃহ সম্বন্ধে দুই একটি কথা বলিতে চাই। আমাদের সামাজিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে দেখি, অধিকাংশ ভারত নারী গৃহসুখে বঞ্চিতা। যাহারা অপরের অধীনে থাকে, অভিভাবকদের বাটীকে আপন ভবন মনে করিতে যাহাদের অধিকার নাই, গৃহ তাহাদের নিকট কারাগার তুল্য বোধ হয়। পারিবারিক জীবনে যে সুখী নহে, সে নিজেকে পরিবারের একজন গণ্য বলিয়া মনে করিতে সাহসী নহে, তাহার নিকট গৃহ শান্তিনিকেতন বোধ হইতে পারে না। কুমারী, সধবা, বিধবা- সকল শ্রেণির অবলার অবস্থাই শোচনীয় । প্ৰমাণ স্বরূপ কয়েকটি অন্তঃপুরের একটু একটু নমুনা দিতেছি। এরূপে অন্তঃপুরের পর্দা উঠাইয়া ভিতরের দৃশ্য দেখাইলে আমার ভ্রাতৃগণ অত্যন্ত ব্যথিত হইবেন, সন্দেহ নাই ।
আমরা একবার (বেহারে) জামালপুরের নিকটবর্তী কোন শহরে বেড়াইতে গিয়াছিলাম। সেখানে আমাদের জনৈক বন্ধুর বাড়ি আছে। সে বাটীর পুরুষের সহিত আমাদের আত্মীয় পুরুষদের বন্ধুত্ব আছে বলিয়া শরাফত উকিলের বাড়ীর স্ত্রীলোদিগকে দেখিতে আমাদের আগ্রহ হয়। দেখিলাম, মহিলা কয়টি অতিশয় শান্ত শিষ্ট মিষ্টভাষিণী, যদিও কূপমণ্ডূক! তাঁহারা আমাদের যথোচিত অভ্যর্থনা করিলেন। সেখানে শরাফতের পত্নী হসিনা,ভগ্নী জমিলা, জমিলার কন্যা ও পুত্রবধূ প্রভৃতি উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর জমিলাকে যখন আমাদের বাসায় যাইতে অনুরোধ করিলাম, তখন তিনি বলিলেন যে তাঁহারা কোন কালে বাড়ির বাহির হন না, ইহাই তাঁহাদের বংশগৌরব। কখনও ঘোড়ার গাড়ি বা অন্য কোন যানবাহনে আরোহণ করেন নাই। আমি সবিস্ময়ে বলিলাম, “তবে আপনারা বিবাহ করিয়া শ্বশুরবাড়ি যান কিরূপে? আপনার ভ্রাতৃবধূ আসিলেন কি করিয়া?” জমিলা উত্তর দিলেন, “ইনি আমাদের আত্মীয়-কন্যা- এ পাড়ায় কেবল আমাদেরই গোষ্ঠীর বাড়ি পাশাপাশি দেখিবে।” এই বলিয়া তিনি আমাকে অন্য একটা ঘরে লইয়া গিয়া বলিলেন, “এই আমার কন্যার বাড়ি; এখন আমার বাড়ি চল।” তিনি আমাকে একটা অপ্রশস্ত গলির ভিতর দিয়া ঘুরাইয়া ফিরাইয়া লইয়া গেলেন। তাঁহার সকলগুলি কক্ষ দেখাইলেন। কক্ষগুলি “অসূৰ্য্যম্পশ্য” বলিয়া বোধ হইল। অতঃপর একটি দ্বার খুলিলে দেখিলাম অপরদিকে হসিনার পুত্রবধূ আছে! – জমিলা বলিলেন, “দেখিলে এই দ্বারের ওপার্শ্বে আমার ভাইয়ের বাড়ি, এপার্শ্বে আমার বাড়ি। ও কক্ষে বধূ থাকেন বলিয়া এ দ্বারটি বন্ধ রাখি। আমাদের সওয়ারির দরকার হয় না কেন, তাহা এখন বুঝিলে?” ঐরূপে সকল বাড়িই প্রদক্ষিণ করা যায়।
পাঠিকা কি মনে করেন যে হসিনা বা জমিলা গৃহে আছেন? অবশ্য না; কেবল চারি প্রাচীরের ভিতর থাকিলেই গৃহে থাকা হয় না । এদেশে বাসরঘরকে “কোর” বলে, কিন্তু “কবর” বলা উচিত!! বাড়িখানা ত শরাফতের, সেখানে যেমন এক পাল ছাগল আছে, হংস কুক্কুট আছে, সেইরূপ একদল স্ত্রীলোকও আছেন! অথবা স্ত্রীলোকদের “বন্দিনী” বলা যাইতে পারে ! সাধারণত পরিবারের প্রধান পুরুষটি মনে করেন গৃহখানা কেবল “আমার বাটী”- পরিবারস্থ অন্যান্য লোকেরা তাঁহার আশ্রিতা। মালদহে কয়েকবার আমরা এক বাটীতে যাতায়াত করিয়াছি। গৃহস্বামী কলিমের স্ত্রীকে আমরা কখনও প্রফুল্লমুখী দেখি নাই । তাঁহার ম্লান মুখখানি নীরবে আমাদের আন্তরিক সহানুভূতি আকর্ষণ করিত । ইহার কারণ এই— কয় বৎসর অতীত হইল, কলিম স্বীয় ভায়রা ভাইয়ের সহিত বিবাদ করিয়াছেন; তাহার ফলে কলিমের পত্নী স্বীয় ভগ্নীর সহিত দেখা করিতে পান না! তিনি এতটুকু ক্ষমতা প্রকাশ করিয়া বলিতে পারেন না, “আমার ভগ্নী আমার নিকট অবশ্য আসিবেন।” হায়! বাটী যে কলিমের! তিনি যাহাকে ইচ্ছা আসিতে দিবেন, যাহাকে ইচ্ছা আসিতে দিবেন না! আবার ওদিকে ও বাটীখানা সলিমের! সেখানে কলিমের পত্নীর প্রবেশ নিষেধ !
বলা বাহুল্য কলিমের স্ত্রীর অন্ন, বস্ত্র বা অলংকারের অভাব নাই। বলি, অলংকার কি পিতৃমাতৃহীনা অবলার একমাত্র ভগ্নীর বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা ভুলাইতে পারে? শুনিলাম, তিনি সপত্নী-কণ্টক হইতেও বিমুক্ত নহে! এরূপ অবস্থায় তাঁহার নিকট গৃহ কি শান্তিনিকেতন বলিয়া বোধ হয়?
আমরা রমাসুন্দরীকে অনেকদিন হইতে জানি । তিনি বিধবা; সন্তান সন্ততিও নাই । তাঁহার স্বামীর প্রভূত সম্পত্তি আছে, দুই চারিটি পাকা বাড়িও আছে। তাঁহার দেবর এখন সে সকল সম্পত্তির অধীশ্বর। দেবরটি কিন্তু রমাকে একমুঠা অন্ন এবং আশ্রয়দানেও কুণ্ঠিত। আমরা বলিলাম, “ইনি হয়ত দেবর-পত্নীর সহিত কোঁদল করেন।” এ কথার উত্তরে একজন বলিলেন, “রমা সব করিতে জানে, কেবল কোঁদল জানে না। রমা বেশ জানে, কি করিয়া পরকে আপন করিতে হয়; কেবল আপনাকে পর করিতে জানে না।”
“এত গুণ সত্ত্বেও দেবরের বাড়ি থাকিতে পান না কেন?”
“কপালের দোষ!”
আমরা একটি রাজবাড়ি দেখিতে গিয়াছিলাম। বাড়িখানি কবি-বর্ণিত অমরাবতীর ন্যায় মনোহর। বৈঠকখানা বিবিধ মূল্যবান সাজসজ্জায় ঝলমল করিতেছে; এদিকে সেদিকে ৫/৭ খানা রজত-আসন শূন্য হৃদয়ে রাজাকে আহ্বান করিতেছে!
রাণীর ঘর কয়খানাতেও টেবিল, টিপাই, চেয়ার ইত্যাদি সাজসজ্জা আছে। কিন্তু তাহার উপর ধূলার স্তর পড়িয়াছে । রাজা কোন কালে এসব কক্ষে পদার্পণ করেন বলিয়া বোধ হইল না ৷
রাণীকে দেখিয়া আমি হতাশ হইলাম । কারণ বৈঠকখানা দেখিয়া আমি রাণীর যেরূপ মূর্তি কল্পনা করিয়াছিলাম, এ মূর্তি তাহার সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি পরমা সুন্দরী বালিকা - পরিধানে সামান্য লালপেড়ে বিলাতি ধুতি; মাথায় রুক্ষ কেশের জটা— অনুমান পনের দিন হইতে তৈলের সহিত চুলগুলির সাক্ষাৎ হয় নাই, মুখখানি এমনই করুণ ভাবে পূর্ণ যে রাণীকে মূর্তিমতী “বিষাদ” বলিলে অত্যুক্তি হয় না। অনেকের মতে চক্ষু মনের দর্পণ স্বরূপ । রাণীর নয়ন দু'টিতে কি কি হৃদয়বিদারক ভাব ছিল, তাহা আমি বর্ণনা করিতে অক্ষম।
আমাদের একটি বর্ষীয়সী সঙ্গিনী বলিলেন, “তুমি রাজার রাণী, তোমার এ বেশ কেন? এস আমি চুল বেঁধে দিই।” রাণী উত্তর দিলেন, “জানি না কি পাপে রাণী হয়েছি!” ঠিক কথা! অথচ লোকে এই রাণীর পদ কেমন বাঞ্ছনীয় বোধ করে!
“মহম্মদীয় আইন” অনুসারে আমরা পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হই- “আমাদের বাড়ি”ও হয়। কিন্তু তাহা হইলে কি হয়, - বাড়ির প্রকৃত কর্তা স্বামী, পুত্র, জামাতা, দেবর ইত্যাদি হন। তাঁহাদের অভাবে বড় আমলা বা নায়েবটি বাড়ির মালিক! গৃহকর্ত্রীটি ঐ নায়েবের ক্রীড়াপুতুল মাত্র। নায়েব কর্ত্রীকে যাহা বুঝায়, অবোধ নিরক্ষর কর্ত্রী তাহাই বুঝেন।
ঐরূপ আরও কত উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। খদিজা প্রভূত সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী, তাঁহার স্বামী হাশেম দরিদ্র কিন্তু কুলীন বিদ্বান। হাশেম ছলে কৌশলে সমস্ত জমিজমা আত্মসাৎ করিয়া লইলেন; খদিজার হাতে এক পয়সা নাই। খদিজার পৈত্রিক বাড়িতে বসিয়াই হাশেম আর দুই তিনটা বিবাহ (?) করিয়া তাঁহাকে সতিনী জ্বালায় দগ্ধ করিতে লাগিলেন! এরূপ না করিলে আর ক্ষমতাশালী পুরুষের বাহাদুরি কি? ইহাতে যদি খদিজা সামান্য বিরক্তি প্রকাশ করেন, তবে প্রবীণা মহিলাগণ তাঁহার হৃদয়ে স্বামীভক্তির অভাব দেখিয়া নিন্দা করেন ।
আমার এই প্রবন্ধ পাঠ করিয়া ভ্রাতা ভগ্নীগণ হয়ত মনে করিবেন যে আমি কেবল ভ্রাতৃবৃন্দকে নরাকারে পিশাচরূপে অঙ্কিত করিবার জন্যই কলম ধরিয়াছি। তাহা নয়। আমি ত কোথাও ভ্রাতাদের প্রতি কটু শব্দ ব্যবহার করি নাই- কাহাকেও পাপিষ্ঠ, পিশাচ, নিষ্ঠুর বলিয়াছি কি? কেবল রমণীহৃদয়ের ক্ষত দেখাইয়াছি। ঐ যে কথায় বলে, “বলিতে আপন দুঃখ পরনিন্দা হয়”, এক্ষেত্রে তাহাই হইয়াছে— ভগ্নীর দুঃখ বর্ণনা করিতে ভ্রাতৃনিন্দা হইয়া পড়িয়াছে ।
সুখের বিষয় আমাদের অনেক ভ্রাতা এরূপ আছেন, যাঁহারা স্ত্রীলোকদিগকে যথেষ্ট শান্তিতে গৃহসুখে রাখেন । কিন্তু দুঃখের সহিত আমরা ইহাও বলিতে বাধ্য যে অনেক ভ্রাতা আপন আপন বাটীতে অন্যায় স্বামীত্বের পরিচয় দিয়া থাকেন ।
যখন আমাদের চালের উপর খড় থাকে না, দরিদ্রের জীর্ণতম কুটিরের শেষ চালখানা ঝঞ্ঝানিলে উড়িয়া যায়, - টুপ-টাপ বৃষ্টিধারায় আমরা সমস্ত রাত্রি ভিজিতে থাকি, - চপলা-চমকে নয়নে ধাঁধা লাগে, - বজ্ৰনাদে মেদিনী কাঁপে, এবং আমাদের বুক কাঁপে- প্রতি মুহূর্তে ভাবি, বুঝি বজ্রপাতে মারা যাই- তখনও আমরা অভিভাবকের বাটীতেই থাকি!
যখন আমরা রাজকন্যা, রাজবধূরূপে প্রাসাদে থাকি, তখনও প্রভু-গৃহে থাকি। আবার যখন ঐ প্রাসাদতুল্য ত্রিতল অট্টালিকা ভূমিকম্পে চূর্ণ হয়, - সোপান অতিক্রম করিয়া অবতরণ কালে আমাদের মাথা ভাঙ্গে, হাত পা ভাঙ্গে— রক্তাক্ত কলেবরে হতজ্ঞান প্রায় অবস্থায় গোশালায় গিয়া আশ্রয় লই, তখনও অভিভাবকদের বাটীতে থাকি!!
অথবা গৃহস্থের বৌ-ঝি রূপে প্রকাণ্ড আটচালায় বাস করিলেও প্রভুর আলয়ে থাকি; আর যখন চৈত্র মাসে ঘোর অমানিশীথে প্রভুর বাটীতে দুষ্টুলোক কর্তৃক লঙ্কাকাণ্ডের অভিনয় হয়, —সব জিনিসপত্রসহ ঘরগুলি দাউদাউ করিয়া জ্বলিতে থাকে, - আমরা একবসনে প্রাণটি হাতে করিয়া কোনমতে দৌড়াইয়া গিয়া দূরস্থিত একটা কূলগাছতলে দাঁড়াইয়া কাঁপিতে থাকি, তখনও অভিভাবকের বাটীতে থাকি!!!
ইংরেজিতে (Home) বলিতে যাহা বুঝায়, “গৃহ” শব্দ দ্বারা আমি তাহাই বুঝাইতে চাই । শারীরিক আরাম ও মানসিক শান্তিনিকেতন যাহা, তাহাই গৃহ। বিধবা হইলে স্বামীগৃহ একরূপ বাসের অযোগ্য হয়; হতভাগিনী তখন পিতা, ভ্রাতার শরণাপন্ন হয়। একটা হিন্দি প্রবাদ আছে:
“ঘর কি জ্বলি বনমে গেয়ী-বনমে লাগি আগ
বন বেচারা কিয়া করে,- করমঁমে লাগি আগ!”
অর্থাৎ “গৃহে দগ্ধ হইয়া বনে গেলাম, বনে লাগিল আগুন; বন বেচারা কি করিবে, (আমার) কপালেই লাগিয়াছে আগুন।”
তাই বলি, গৃহ বলিতে আমাদেরই একটি পর্ণকুটীর নাই । প্রাণি-জগতে কোন জন্তুই আমাদের মত নিরাশ্রয়া নহে । সকলেরই গৃহ আছে- নাই কেবল আমাদের।
[সংক্ষেপিত]

উত্তর :
i. স্বামীভক্তি      ii. পুরুষের কর্তৃত্ব      
iii. নারীর অসহায়ত্ব
নিচের কোনটি সঠিক? 

উত্তর : _

উত্তর : রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

উত্তর : রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রকৃত নাম রোকেয়া খাতুন।  

উত্তর : রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বামী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। 

উত্তর : বড় ভাই-বোনের সাহচর্যে রোকেয়া বাংলা ও ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করেন। 

উত্তর : রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সামজের কুসংস্কার ও জড়তা দূর করার জন্য অসাধারণ পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও হৃদয়গ্রাহী গদ্য রচনা করেন। 

উত্তর : অন্যের অধীন ও অভিভাবকত্ব থেকে আত্মমুক্তি না পাওয়ার জন্য ভারত নারীগৃহসুখে বঞ্চিতা। 
কখনো পিতৃগৃহ, কখনো স্বামীগৃহ, কখনো সন্তান গৃহে আবদ্ধ নারীর জীবন। নিজ গৃহ বলে নারী কখনো অধিকার দেখাতে পারে না। অন্যের অধীনে কাটে তার সারা জীবন। পরাধীন জীবনে নারী আত্মসুখ হতে বঞ্চিত হয় এবং আত্মপীড়ায় ভোগে। তাই প্রাবন্ধিকের মতে, অধিকাংশ ভারত নারী গৃহসুখে বঞ্চিতা। 

উত্তর : অধিকার বঞ্চনার কারণে অভিভাবকের বাড়ি নারীর জন্য কারাগারের সমতুল্য বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। 
প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় নারী সাধারণত অন্যের অধীন থাকে। ঘর-সম্পত্তিতেও পুরুষের থাকে একচ্ছত্র অধিকার। তাই পিতৃগৃহ, স্বামীগৃহ কোনো খানেই নারীর অধিকার ও স্বাধীনতাকে মূল্য দেওয়া হয় না। এ কারণে নারী কোনো ঘরকেই সর্বান্তঃকরণে আপন করে নিতে পারে না। ফলে ঘর যেন নারীর জন্য কারাগারের মতোই যন্ত্রণাময় হয়ে পড়ে। আলোচ্য উক্তিতে এ প্রসঙ্গটিই বোঝানো হয়েছে। 

উত্তর : যারা অন্যের অধীনে থাকে তাদের গৃহজীবনকে কারাগারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
যারা গৃহে অবস্থান করে তারা সবাই সুখী নয় বা গৃহজীবনকে উপভোগ করে না। আমাদের সামাজিক অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা  যায়, যারা অন্যের অধীনে গৃহে থাকে এবং অভিভাবকের বাড়িকে যাদের নিজের বাড়ি মনে করার অধিকার নেই, তাদের কাছে গৃহ কারাগারতুল্য। কারণ সে কখনই গৃহে থাকার প্রকৃত সুখ অনুভব করতে পারে না। গৃহে থাকতে হলে নিজের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা, সর্বোপরি নিজের ব্যক্তিজীবন অনুভব করতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন অন্যের অধীনে থাকা হয়, অভিভাবকের বাড়িকে নিজের বলে মনে করা যায় না তখনই সেখানে ব্যক্তিজীবন ব্যাহত হয়। আর এ কারণেই এসব মানুষের কাছে গৃহ কারাগারতুল্য।

উত্তর : পারিবারিক জীবনে যখন সুখী হওয়া যায় না, তখন গৃহ শান্তিনিকেতন বোধ হয় না। 
গৃহ বা আবাসকে বিশ্লেষণ করলে যে দুটি অংশ পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে একটি হলে পারিবারিক জীবন। কারণ পারিবারিক জীবন আমাদের অস্তিত্বের অংশ । আর যখন মানুষ এই পারিবারিক জীবনে অসুখী থাকে তখন তার কাছে গৃহ শান্তিনিকেতন অনুভূত হয় না। এছাড়াও যখন কোনো মানুষ একই পরিবারে থেকে নিজেকে সেই পরিবারের একজন বলে মনে করতে পারে না, তখন তার কাছে গৃহ শান্তিনিকেতনের অনভূতি হয় না। কারণ পরিবারে থেকেও যদি নিজেকে সেখানকার অংশ হিসেবে মনে না করা যায় তবে তার বেঁচে থাকার ভিত্তি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই যার কাছে পারিবারিক জীবন সুখের নয় এবং যে নিজেকে পরিবারের সদস্য মনে করতে পারে না তার কাছে গৃহ কখনই শান্তিনিকেতন বোধ হতে পারে না।

উত্তর : কুমারী, সধবা, বিধবা সকলেই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার নিগড়ে বন্দি। 
ধনী-দরিদ্র, সধবা, বিধাব সবার জীবনই পুরুষের নিয়ন্ত্রণের অধীন। নারীর স্বাধীন মত প্রকাশের কোনো অধিকার নেই। একই গৃহে বাস করেও নারীকে পুরুষের কর্তৃত্ব স্বীকার করতে হয়। নারী পুরুষের কাছে আশ্রয়প্রার্থী। করুণাকামী বলে মানসিকভাবে দাসত্বের জীবনই অতিবাহিত করে, যা প্রশ্নোক্ত উক্তিতে বোঝানো হয়েছে। 

Score Board

_









_

_









_

_









_

_









_

_









_
Score Board