সুচেতনা
জীবনান্দন দাশ
কবি-পরিচিতি
নামঃ জীবনানন্দ দাশ ।
পিতাঃ সত্যানন্দ দাশ। তিনি ছিলেন বরিশাল জেলার ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
মাতাঃ কুসুম-কুমারী দাশ। ইনি একজন স্বভাবকবি ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতা: “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।” “নারীত্বের আদর্শ” নামে প্রবন্ধ লিখে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
জন্মঃ ১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি।
জন্মস্থানঃ বরিশাল জেলার ধানসিঁড়ি নদীর তীরবর্তী গ্রাম।
শিক্ষাঃ
মাধ্যমিক : ম্যাট্রিক (১৯১৫) ব্রজমোহন স্কুল, বরিশাল।
উচ্চ মাধ্যমিক : আই, এ (১৯১৭) ব্রজমোহন কলেজ।
উচ্চতর শিক্ষা : ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ অনার্স
(সম্মান)ডিগ্রি এবং ১৯২১ খিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি
সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
পেশাগত জীবনঃ স্বল্প সময়ের জন্য বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করলেও মূলত ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেন। যেমন: অধ্যাপনা : কলকাতা সিটি কলেজ (১৯২২-১৯২৮); বাগেরহাট কলেজ (১৯২৯); দিল্লী¬র রামযশ কলেজ (১৯২৯-১৯৩০); ব্রজমোহন কলেজ (১৯৩৫-১৯৪৬); খড়গপুর কলেজ (১৯৫১-১৯৫২);
বড়িষা কলেজ (১৯৫২); হাওড়া গার্লস কলেজ (১৯৫৩-১৯৫৪)।
মৃত্যুঃ কলকাতায় এক ট্রাম-দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর জীবনানন্দ দাশ মৃত্যুবরণ করেন।
সাহিত্যকর্মঃ
কাব্যগ্রন্থ: ঝরা পালক (১৯২৭), ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন
(১৯৪২), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), রূপসী
বাংলা (১৯৫৭), বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)।
ছন্দে ছন্দে কাব্যগ্রন্থ
রূপসী বাংলার কন্যা ও বনলতা সেন মহাপৃথিবীর এই সাতটি তারার তিমির রাত্রিতে বেলা অবেলা কালবেলায় ধূসর পান্ডুলিপির মত ঝরে পড়ল।
বিখ্যাত কবিতাঃ বনলতা সেন (১৯৪২) : ‘বনলতা সেন' কবিতার উপর অ্যাডগার এলেন পো'র ‘টু হেলেন’ কবিতার প্রভাব রয়েছে।
উপন্যাসঃ মাল্যবান (১৯৭৩), সুতীর্থ (১৯৭৪), কল্যাণী (১৯৩২), মৃণাল (১৯৩৩),
কারুবাসনা (১৯৩৩),বিরাজ (১৯৩৩), বাসমতির উপাখ্যান, বিভা, নিরুপম,
যাত্রা, প্রেতনীর, রূপকথা, জীবনযাপন।
ছন্দে ছন্দে উপন্যাস
জীবনানন্দ দাশের উপন্যাস বাসমতির উপখ্যানে বিরাজ করছে সুতীর্থ, মৃণাল, কল্যাণী এবং মাল্যবান এর কারুবাসনার কথা।
প্রবন্ধঃ কবিতার কথা (১৯৫৬)।
কবি জীবনান্দ দাশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
জীবনানন্দ দাশের প্রথম কবিতা ‘বর্ষ আবাহন’ ব্রহ্মবাদী পত্রিকায় ১৩২৬ সনের বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং তাঁর দ্বিতীয় কবিতা ‘কবি’ প্রকাশিত হয় ‘প্রগতি’ পত্রিকায় ।
পাশ্চাত্যের যে সকল কবি দ্বারা তিনি প্রভাবিত হন - ইয়েটস, বোদলেয়ার, অ্যাডগার এলেন পো ।
তাঁর গল্প সংকলন ‘জীবনানন্দ দাশের গল্প’ (১৩৭৯) প্রকাশিত হয় - সুকুমার ঘোষ ও সুবিনয় মুস্তাফীর সম্পাদনায় ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কবিতাগ্রন্থ পাঠ করে জীবনানন্দ দাশের কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ কবিতা বলেছেন - ধূসর পান্ডুলিপি ।
বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশকে আখ্যায়িত করেছেন - ‘নির্জনতম কবি' হিসেবে।
তিনি জীবন অতিবাহিত করেন - ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে।
কবি কুসুমকুমারী দাশের সঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশের সম্পর্ক - মা-ছেলে।
সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া জীবনানন্দ দাশের একটি উপন্যাসের নাম - ‘কল্যাণী' (প্রকাশ ১৯৯৯)।
জীবনানন্দ দাশ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন - লাবণ্য গুপ্তের সঙ্গে।
জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর তাঁর যে দুটি কাব্য প্রকাশিত হয় - ‘রূপসী বাংলা” ও ‘বেলা অবেলা কালবেলা’।
বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল - তাঁর নিসর্গবিষয়ক কবিতা।
'মাল্যবান' উপন্যাসটি পত্রিকায় 'জলপাইহাটি' নামে প্রকাশিত হয়।
কবির হায় চিল' কবিতার সঙ্গে W. B. Yeats এর যে কবিতার মিল আছে - ‘He reproves the curlow' কবিতার।
'সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি।' উক্তিটি যে গ্রন্থের - কবিতার কথা' প্রবন্ধের।
তাঁর কবিতার পরিলক্ষিত হয় - সূক্ষ্ম ও গভীর অনুভবের জগৎ।
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ফুটে উঠেছে - আধুনিক জীবনের বিচিত্র যন্ত্রণা ও হাহাকার।
আলো-আঁধারের ব্যবহার, রঙের ব্যবহার ও অনুভবের বৈচিত্র্য প্রকাশে অসাধারণত্ব দেখিয়েছেন - জীবনানন্দ দাশ।
উৎস পরিচিতি
‘সুচেতনা’ কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ (১৯৪২) কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
কবিতার ছন্দ
সুচেতনা কবিতাটি ৮+৬ মাত্রার পূর্ণ পর্বে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। অপূর্ণ পর্ব ৪ মাত্রার।
মূল ভাব
‘সুচেতনা’ কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন (১৯৪২) কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। ‘সুচেতনা’ জীবনানন্দ দাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। এ কবিতায় সুচেতনা সম্বোধনে কবি তাঁর প্রার্থিত, আরাধ্য এক চেতনানিহিত বিশ্বাসকে শিল্পিত করেছেন। কবির বিশ্বাসমতে, সুচেতনা দূরতম দ্বীপসদৃশ একটি ধারণা, যা পৃথিবীর নির্জনতায়, যুদ্ধে, রক্তে নিঃশেষিত নয়। চেতনাগত এই সত্তা বর্তমান পৃথিবীর গভীরতর ব্যাধিকে অতিক্রম করে সুস্থ ইহলৌকিক পৃথিবীর মানুষকে জীবন্ময় করে রাখে। জীবমুক্তির এই চেতনাগত সত্যই পৃথিবীর ক্রমমুক্তির আলোকে প্রজ্বলিত রাখবে, মানবসমাজের অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করবে। শাশ্বত রাত্রির বুকে অনন্ত সূর্যোদয়কে প্রকাশ করবে।
প্রথম লাইন
সুচেতনা, তুমি এক দূরতর দ্বীপ
শেষ লাইন
শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত মূর্যোদয়।
আজকে অনেক রূঢ় রৌদ্রে ঘুরে প্রাণ 🔒ব্যাখ্যা
পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো
ভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু, 🔒ব্যাখ্যা
দেখেছি আমারি হাতে হয়তো নিহত
ভাই বোন বন্ধু পরিজন প’ড়ে আছে;
পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন; 🔒ব্যাখ্যা
মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে। 🔒ব্যাখ্যা
সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে— এ-পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে; 🔒ব্যাখ্যা
সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ; 🔒ব্যাখ্যা
এ-বাতাস কী পরম সূর্যকরোজ্জ্বল; 🔒ব্যাখ্যা
প্রায় তত দূর ভালো মানব-সমাজ 🔒ব্যাখ্যা
আমাদের মতো ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিকের হাতে 🔒ব্যাখ্যা
গ’ড়ে দেবো, আজ নয়, ঢের দূর অন্তিম প্রভাতে। 🔒ব্যাখ্যা
মাটি-পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে কখন এসেছি, 🔒ব্যাখ্যা
না এলেই ভালো হ’তো অনুভব ক’রে; 🔒ব্যাখ্যা
এসে যে গভীরতর লাভ হ’লো সে-সব বুঝেছি 🔒ব্যাখ্যা
শিশির শরীর ছুঁয়ে সমুজ্জ্বল ভোরে;
দেখেছি যা হ’লো হবে মানুষের যা হবার নয়—
শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়। 🔒ব্যাখ্যা
পাঠ-পরিচিতি
"সুচেতনা" কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের 'বনলতা সেন (১৯৪২) কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। “সুচেতনা" জীবনানন্দ দাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। এ কবিতায় সুচেতনা সম্বোধনে কবি তাঁর প্রার্থিত, আরাধ্য এক চেতনানিহিত বিশ্বাসকে শিল্পিত করেছেন। কবির বিশ্বাসমতে, সুচেতনা দূরতম দ্বীপসদৃশ একটি ধারণা, যা পৃথিবীর নির্জনতায়, যুদ্ধে, রক্তে নিঃশেষিত নয়। চেতনাগত এই সত্তা বর্তমান পৃথিবীর গভীরতর ব্যাধিকে অতিক্রম করে সুস্থ ইহলৌকিক পৃথিবীর মানুষকে জীবন্ময় করে রাখে। জীবমুক্তির এই চেতনাগত সত্যই পৃথিবীর ক্রমমুক্তির আলোকে প্রজ্বলিত রাখবে, মানবসমাজের অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করবে। শাশ্বত রাত্রির বুকে অনন্ত সূর্যোদয়কে প্রকাশ করবে।
১) কোন দিক দিয়ে জীবনানন্দ দাশের কবিতা তুলনারহিত?
২) কবি ছাড়াও জীবনানন্দ দাশের পরিচয় রয়েছে কী হিসেবে?
৩) 'সুতীর্থ' জীবনানন্দ দাশের কী ধরনের গ্রন্থ?
৪) জীবনানন্দ দাশের লেখা উপন্যাসের সংখ্যা কতটি?
৫) জীবনানন্দ দাশ সুচেতনাকে দূরতর দ্বীপ রূপে কল্পনা করেছেন কেন?