ঝর্ণার গান


ঝর্ণার গান

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত



  কবি পরিচিতি:


নাম : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

জন্ম : ১৮৮২ সালে কলকাতার কাছাকাছি নিমতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন

উপাধি : ছন্দের রাজা

শিক্ষাজীবন : তিনি বিএ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন

সাহিত্য সাধনা : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছাত্রজীবন থেকেই কাব্যচর্চা করতেন। দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভাষা, ধর্ম ইত্যাদি বিচিত্র বিষয়ের প্রতি অনুরাগী ছিলেন।

উল্লেখযোগ্য রচনা মৌলিককাব্য : সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোমশিখা, কুহু ও কেকা, অভ্র-আবীর, বেলাশেষের গান, বিদায় আরতী

অনুবাদ কাব্য : তীর্থরেণু, তীর্থ-সলিল ও ফুলের ফসল।

বিবিধ উপনিষদ, কবির নামক প্রমুখের রচনা এবং আরবি, ফার্সি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার অনেক উৎকৃষ্ট কবিতা ও গদ্য রচনা তিনি বাংলায় অনুবাদ করেন।

বিশেষ পরিচিতি : ‘তত্ত¡বোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক ও উনিশ শতকের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন তাঁর পিতামহ।

বিশেষত্ব : বাংলা ভাষায় ছন্দ নির্মাণে তিনি অসাধারণ নৈপুর্ণ্যরে পরিচয় দিয়েছেন।

জীবনাবসান : তিনি ১৯২২ সালে মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।


             চপল পায় কেবল ধাই, 🔒ব্যাখ্যা

         কেবল গাই পরীর গান,

                       পুলক মোর সকল গায়,

        বিভোল মোর সকল প্ৰাণ ৷ 🔒ব্যাখ্যা

শিথিল সব শিলার পর 🔒ব্যাখ্যা

         চরণ থুই দোদুল মন,

                         দুপুর-ভোর ঝিঁঝিঁর ডাক,

         ঝিমায় পথ, ঘুমায় বন ।🔒ব্যাখ্যা


বিজন দেশ, কূজন নাই 🔒ব্যাখ্যা

         নিজের পায় বাজাই তাল,

                         একলা গাই, একলা ধাই, 🔒ব্যাখ্যা

        দিবস রাত, সাঁঝ সকাল ।

ঝুঁকিয়ে ঘাড় ঝুম-পাহাড়

         ভয় দ্যাখায়, চোখ পাকায়; 🔒ব্যাখ্যা

                          শঙ্কা নাই, সমান যাই, 🔒ব্যাখ্যা

        টগর-ফুল-নূপুর পায়,

কোন গিরির হিম ললাট

        ঘামল মোর উদ্ভবে 🔒ব্যাখ্যা

                         কোন পরীর টুট্ল হার

         কোন নাচের উৎসবে।

খেয়াল নাই-নাই রে ভাই 🔒ব্যাখ্যা

          পাই নি তার সংবাদই,

                           ধাই লীলায়,-খিলখিলাই 🔒ব্যাখ্যা


          বুলবুলির বোল সাধি ।

বন-ঝাউয়ের ঝোপগুলায় 🔒ব্যাখ্যা

          কালসারের দল চরে,

                           শিং শিলায়-শিলার গায়,

          ডালচিনির রং ধরে ।

ঝাঁপিয়ে যাই, লাফিয়ে ধাই,

          দুলিয়ে যাই অচল-ঠাঁট,

                           নাড়িয়ে যাই, বাড়িয়ে যাই-

         টিলার গায় ডালিম-ফাট। 🔒ব্যাখ্যা

শালিক শুক বুলায় মুখ

         থল-ঝাঁঝিমখমলে, 🔒ব্যাখ্যা

                           জরির জাল আংরাখায় 🔒ব্যাখ্যা

         অঙ্গ মোর ঝলমলে ।

নিম্নে ধাই, শুনতে পাই

          ‘ফটিক জল।' হাঁকছে কে,

                           কণ্ঠাতেই তৃষ্ণা যার

          নিক না সেই পাঁক ছেঁকে ৷ 🔒ব্যাখ্যা

গরজ যার জল স্যাচার

           পাতকুয়ায় যাক না সেই,

                            সুন্দরের তৃষ্ণা যার

           আমরা ধাই তার আশেই ।🔒ব্যাখ্যা


 তার খোঁজেই বিরাম নেই

            বিলাই তান-তরল শ্লোক,

                             চকোর চায় চন্দ্রমায়,

            আমরা চাই মুগ্ধ-চোখ ।🔒ব্যাখ্যা

চপল পায় কেবল ধাই

         উপল-ঘায় দিই ঝিলিক,🔒ব্যাখ্যা

                          দুল দোলাই মন ভোলাই, 🔒ব্যাখ্যা

        ঝিলমিলাই দিগ্বিদিক।
















উত্তর :  ‘‘তত্ত্ববোধিনী’ ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন অক্ষয়কুমার দত্ত।

উত্তর :

‘ঝিঁঝির ডাক’ শোনা যায় দুপুর-ভোর।


উত্তর : স্তব্ধ পাথরের বুকে আনন্দের পদচিহ্ন।

উত্তর :  সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘ছন্দের রাজা’ বলে পরিচিত হন।

উত্তর :

‘আংরাখা’ শব্দটির অর্থ লম্বা ও ঢিলা পোশাক বিশেষ।



উত্তর : কবি সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর সৌন্দর্যপিপাসু দৃষ্টি নিয়ে পাহাড়ি ঝর্ণার চঞ্চল বয়ে চলাকে বুঝিয়েছেন।
পাহাড় শিখর হতে উৎপন্ন ঝর্ণা পতনের আশায় চপল পায়ে সর্বদা ছুটে চলে। তার এ প্রবাহমানতা  যেন রূপকথার পরীর গানের মতো অপূর্ব সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। পাহাড়ের গা বেয়ে চঞ্চল গতিতে বয়ে যাওয়ার সময় সে বাঁধা মানে না।

উত্তর : ছুটে চলাই ঝর্ণার বৈশিষ্ট্য বলে সে কেবল ধেয়ে যায়।
ঝর্ণা চঞ্চল এবং ছুটে চলার গতিই তার প্রধান বৈশিষ্ট্য। পাহাড়ের গা বেয়ে উপর থেকে নেমে আসা ঝর্ণার জলধারা চঞ্চল বেগে নিচের দিকে ছুটে যায়। ঝর্ণার জলধারা কোনো বাধায় না থেমে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। ঝর্ণা উপর থেকে নিচে নামে বলেই সে নিজের গতিতে ধেয়ে যায়।

উত্তর : ‘পুলক মোর সকল গায়/বিভোল মোর সকল প্রাণ’- এর মাধ্যমে ঝর্ণার ছন্দোময় গতি ও আনন্দধারাকে বুঝানো হয়েছে
ঝর্ণা পাহাড়ি  কন্যা। দূর পাহাড়ের সুউচ্চ শিখরে তার জন্ম। ‘ঝর্ণার গান’ কবিতায় ঝর্ণার গতিময়তা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। ঝর্ণা মনের আনন্দের পাহাড় থেকে নেমে আসে। তার বুকে খুশির জোয়ার। সে পরীর গান গায়, স্বর্গারণ্যে আনন্দ-গানে পরীদের মেতে ওঠার আনন্দ ঝর্ণার মনে। অসম্ভব খুশিতে ঝর্ণা আত্মভোলা হয়ে ছুটে বেড়ায়।

উত্তর : স্থির শিলারাশির ওপর দিয়ে ঝর্ণার নেচে চলাকে বোঝানো হয়েছে।
‘ঝর্ণার গান’ কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ঝর্ণার নেচে চলাকে জাদুকরী ছন্দে চিত্রায়িত করেছেন। বরফে ঢাকা স্তব্ধ শীতল শিলা-পাথর চেয়ে ঝর্ণার উৎপত্তি। স্তব্ধ পাহাড় আর শিলারাশির গা বেয়ে প্রবাহিত ঝর্ণার চিত্র ফুটিয়ে তুলতেই কবি ‘শিথিল সব শিলার পর’ চরণটি রচনা করেছেন। ‘শিথিল সব শিলার পর’ বলতে কবি ঝর্ণার পানিতে সিক্ত স্থির শিলারাশিকে বুঝিয়েছেন। আর এ সিক্ত পাথরের ওপর চঞ্চল চরণ আর দোদুল মন দিয়ে উদ্দাম গতিতে ছুটে চলে পাহাড়ি ঝর্ণা।

উত্তর : ঝর্ণা যখন পাহাড় বেয়ে নেমে আসে সেই ছন্দের তালে তাল মিলিয়ে ভোর হতে দুপুর অবধি ঝিঁঝিঁ পোকারা ঝিঁ ঝিঁ শব্দে ডেকে যায়। ঝর্ণার শব্দ এবং ঝিঁঝিঁর শব্দে বনপথে তখন সৃষ্টি হয় অপূর্ব এক সুরের আবেদন। এরই মুগ্ধতায় পথ-প্রান্তর ঝিমাতে থাকে, ঘুমিয়ে পড়ে বন।

Score Board

_









_

_









_

_









_

_









_

_









_
Score Board