আহ্বান

আহ্বান
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়

লেখক পরিচিতি:
নাম : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
জন্ম ও পরিচয় : ১৮৯৪ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার মুরারিপুর গ্রামে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার ব্যারাকপুর গ্রামে।
পিতা ও মাতা : পিতা : মহানন্দা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা :  মৃণালিনী দেবী।
শিক্ষাজীবন : তিনি ঐতিহ্যবাহী বনগ্রাম হাইস্কুলে পড়ালেখা করেন। চরম অর্থকষ্টের মধ্যেও সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, কলকাতা থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম. এ পড়াকালে তাঁর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু ঘটলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসমাপ্ত থাকে। ১৯১৪ সালে ম্যাট্রিক ও ১৯১৬ সালে আইএ উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেন এবং ১৯১৮ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাস করেন।
কর্মজীবন : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শৈশব জীবন কেটেছে চরম অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে। তিনি কখনো স্কুল শিক্ষকতা, কখনো সেক্রেটারি ও জমিদারি এস্টেট দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন।

সাহিত্যকর্ম :
তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, দিনলিপি ও ভ্রমণকাহিনি রচনার মধ্যে জীবনের আনন্দ খুঁজে পান।
উপন্যাস : ‘পথের পাঁচালী', ‘অপরাজিতা’, ‘ আরণ্যক’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘হীরা মানিক জ্বলে’ উল্লেখযোগ্য।
ছোটগল্প : ‘মেঘমল্লার’, ‘মৌরিফুল’, ‘যাত্রাবদল’, ‘জন্ম ও মৃত্যু' প্রভৃতি।
দিনলিপি : ‘তৃণাঙ্কুর’, ‘স্মৃতির রেখা’, ইত্যাদি।

বিশেষ কৃতিত্ব : ‘পথের পাঁচালী’ তাঁর অসামান্য সৃষ্টি। এ উপন্যাস তাঁকে পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে। উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
জীবনাবসান : ১৯৫০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন।


দেশের ঘরবাড়ি নেই অনেকদিন থেকেই। পৈতৃক বাড়ি যা ছিল ভেঙেচুরে ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছে। 🔒ব্যাখ্যা এ অবস্থায় একদিন গিয়েছি দেশে কিসের একটা ছুটিতে। গ্রামের চক্কোত্তি মশায় আমার বাবার পুরাতন বন্ধু। আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন। বললেন-কতকাল পরে বাবা মনে পড়ল দেশের কথা? প্রণাম করে পায়ের ধুলা নিলাম।

বললেন-এসো, এসো, বেঁচে থাকো, দীর্ঘজীবী হও। বাড়িঘর করবে না? –আজ্ঞে সামান্য মাইনে পাই-তাতে কী? 🔒ব্যাখ্যা গ্রামের ছেলে গ্রামে বাস করবে, এতে আর সামান্য মাইনে বেশি মাইনে কী? 🔒ব্যাখ্যা আমি খড় বাঁশ দিচ্ছি, 🔒ব্যাখ্যা চালাঘর তুলে ফেল, মাঝে মাঝে যাতায়াত করো। আরও অনেকে এসে ধরল, অন্তত খড়ের ঘর ওঠাতে হবে। 🔒ব্যাখ্যা

অনেক দিন পরে গ্রামে এসে লাগছে ভালোই। 🔒ব্যাখ্যা বড় আমবাগানের মধ্য দিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছি, আমগাছের ছায়ায় একটি বৃদ্ধার চেহারা, ডান হাতে নড়ি ঠকঠক করতে করতে বোধহয় বাজারের দিকে চলেছে। বুড়িকে দেখেই আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। 🔒ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাবে? —বাজারে বাবা।

বুড়ি আমায় ভালো না দেখতে পেয়ে কিংবা না চিনতে পেরে ডান হাত উঁচিয়ে তালু আড়ভাবে চোখের ওপর ধরল। 🔒ব্যাখ্যা বলল, কে বাবা তুমি? চেনলাম না তো? -চিনবে না। আমি অনেক দিন গাঁয়ে আসি নি। -তা হবে বাবা। আমি আগে তো এপাড়া-ওপাড়া যাতাম আসতাম না। 🔒ব্যাখ্যা তিনি থাকতি অভাব ছিল না কোনো জিনিসের। 🔒ব্যাখ্যা গোলাপোরা ধান, গোয়ালপোরা গরু। 🔒ব্যাখ্যা

-তোমাকে তো চিনতে পারলাম না, বুড়ি? —আমার তো তেনার নাম করতে নেই বাবা। 🔒ব্যাখ্যা করাতের কাজ করতেন। বললাম, তোমার ছেলে আছে? -কেউ নেই বাবা, কেউ নেই। 🔒ব্যাখ্যা এক নাত-জামাই আছে তো সে মোরে ভাত দেয় না। আমার বড় কষ্ট। 🔒ব্যাখ্যা ভাত জোটে না সবদিন। 🔒ব্যাখ্যা বুড়িকে পকেট থেকে কিছু পয়সা বার করে দিলাম। 🔒ব্যাখ্যা ব্যাপারটা এখানেই চুকে যাবে ভেবেছিলাম।

কিন্তু তা চুকল না। 🔒ব্যাখ্যা পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেছি, এমন সময় সেই বুড়ি লাঠি ঠকঠক করতে করতে হাজির উঠোনে। থাকি এক জ্ঞাতি খুড়োর বাড়ি। তিনি বললেন, ও হলো জমির করাতির স্ত্রী। অনেকদিন আগে মরে গিয়েছে জমির। বডি উঠোনে দাড়িয়ে ডাকল ও বাবা। বোধহয় চোখে একটু কম দেখে। বললাম, এই যে আমি এখানে।

আমার খুড়োমশায় বুড়িকে বুঝিয়ে দিলেন আমি কে। সে উঠোনের কাঁঠালতলায় বসে আপন মনে খুব খানিকটা বকে গেল। 🔒ব্যাখ্যা পরদিন কলকাতা চলে গেলাম, ছুটি ফুরিয়ে গেল। কয়েক মাস পরে জ্যৈষ্ঠ মাসে গরমের ছুটিতে আমার নতুন তৈরি খড়ের ঘরখানাতে এসে উঠলাম। কলকাতাতে কর্মব্যস্ত এই ক’মাসের মধ্যে বুড়িকে একবারও মনে পড়েনি বা এখানে এসেও মনে হঠাৎ হয়ত হতো না, যদি সে তার পরের দিনই সকালে আমার ঘরের নিচু দাওয়ায় এসে না বসে পড়ত। বললাম, কী বুড়ি, ভালো আছ? ময়লা ছেড়া কাপড়ের প্রান্ত থেকে গোটাকতক আম খুলে আমার সামনে মাটিতে রেখে বলল, আমার কি মরণ আছে রে বাবা। 🔒ব্যাখ্যা

জিজ্ঞাসা করলাম, ও আম কীসের। দন্তহীন মুখে একটু হাসবার চেষ্টা করে বললে, অ গোপাল আমার, তোর জন্যি নিয়ে আলাম। 🔒ব্যাখ্যা গাছের আম বেশ কড়া মিষ্টি, খেয়ে দেখ এখন। বড়ো ভালো লাগল। গ্রামে অনেকদিন থেকে আপনার জন কেউ নেই। একটা ঘনিষ্ঠ আদরের সম্বোধন করার লোকের দেখা পাই নি বাল্যকালে মা-পিসিমা মারা যাওয়ার পর থেকে। বুড়ি বললে, খাও কোথায় হ্যাঁ বাবা? -খুড়ো মশায়ের বাড়ি। —বেশ যত্ন করে তো ওনারা? —তা করে। -দুধ পাচ্চ ভালো? ঘুটি গোয়ালিনী দেয়, মন্দ না।

–ও বাবা, ওর দুধ! অর্ধেক জল— দুধ খেতি পাচ্চ না ভালো সে বুঝেচি। 🔒ব্যাখ্যা পরদিন সকাল হয়েছে সবে, বুড়ি দেখি উঠোনে এসে ডাকছে, অ গোপাল। বিছানা ছেড়ে উঠে বললাম, আরে এত সকালে কী মনে করে। হাতে কী? বৃদ্ধা হাতের নড়ি আমার দাওয়ার গায়ে ঠেস দিয়ে রেখে বলল, এক ঘটি দুধ আনলাম তোর জন্যি। 🔒ব্যাখ্যা -সে কী! দুধ পেলে কোথায় এত সকালে?

আমায় মা বলে ডাকে ওই হাজরা ব্যাটার বউ। তারও কেউ নেই। মোর চালাঘরের পাশে ওর চালাঘর। ওরে কাল রাত্তিরে বলে রেখে দিয়েছিলাম, বলি বউ আমার, গোপাল দুধ খেতি পায় না। তাই আজ ভোরে উঠে দেখি আমারে ডাকচে, মা ওঠো, তোমার গোপালের জন্যি দুধ নিয়ে যাও। –আচ্ছা কেন বলতো তোমার এসব! এ রকম আর কখনও এনো না।

কত পয়সা দাম দিতে হবে বল। কতটা দুধ? বুড়ি একটু ঘাবড়ে গেল। 🔒ব্যাখ্যা ভয়ে ভয়ে বলে, কেন বাবা, পয়সা কেন? –পয়সা না তো তুমি দুধ পাবে কোথায়? -ওই যে, বললাম বাবা, আমার মেয়ের বাড়ি থেকে। —তা হোক, তুমি পয়সা নিয়ে যাও। সেও তো গরিব লোক।

বুড়ি পয়সা নিয়ে চলে গেল বটে কিন্তু সে যে দমে গিয়েছে তার কথাবার্তার ধরনে বেশ বুঝতে পারলাম। মনে একটু কষ্ট হলো বুড়ি চলে গেলে। 🔒ব্যাখ্যা পয়সা দিতে যাওয়া ঠিক হয়েছে কি? বুড়ির কী রকম হয়ত মন পড়ে গিয়েছে। আমার ওপর, স্নেহের দান— এমন করা ঠিক হয়নি। 🔒ব্যাখ্যা

বুড়ি কিন্তু এ অবহেলা গায়ে মাখল না আদৌ। 🔒ব্যাখ্যা প্রতিদিন সকাল হতে না হতেই সে এসে জুটবে। -অ গোপাল, এই দুটি কচি শসার জালি মোর গাছের, এই ন্যাও। 🔒ব্যাখ্যা নুন দিয়ে খাও দিকিন মোর সামনে? -বুড়ি তোমার চলে কীসে? –ওই যারে মেয়ে বলি, ও বড় ভালো। 🔒ব্যাখ্যা

লোকের ধান ভানে, তাই চাল পায়, আমায় দুটো না দিয়ে খায় না। —একা থাক? —তা একদিন মোর ঘরখানা না হয় দেখতি গেলে, অ মোর গোপাল! আমি নতুন খাজুর পাতার চেটাই বুনে রেখে দিয়েছিলাম তোমারে বসতি দেবার জন্যি। সেবার বুড়ির বাড়িতে আমার যাওয়া ঘটে উঠল না। নানাদিকে ব্যস্ত থাকি।

অনেক দিন পরে গ্রামে এসেছি তো! যে কদিন গ্রামে থাকি বুড়ি রোজ সকালে আসতে ভুলবে না। 🔒ব্যাখ্যা কিছু না কিছু আনবেই। কখনো পাকা আম, কখনো পাতি লেবু, কখনো বা একছড়া কাঁচকলা কি এক-ফালি কুমড়ো। পুনরায় গ্রামে এলাম পাঁচ-ছয় মাস পরে, আশ্বিন মাসের শেষে।

কয়েকদিন পরে ঘরে বসে আছি, বাইরের উঠোনে দাড়িয়ে কে যেন জিজ্ঞাসা করলে; বাবু ঘরে আছেন গা? বাইরে এসে দেখি গত জ্যৈষ্ঠ মাসে যাকে বুড়ির সঙ্গে দেখেছিলাম সেই মধ্যবয়সী স্ত্রীলোকটি। আমায় দেখে সলজ্জভাবে মাথার কাপড়টা আর একটু টেনে দেবার চেষ্টা করে 🔒ব্যাখ্যা সে বললে, বাবু কবে এসেছেন? —দিন পাঁচ-ছয় হলো। কেন? –আমার সেই মা পেটিয়ে দিলে, বলে দেখে এসো গিয়ে।

-ওই সেই বুড়ি— এখানে যিনি আসত। তেনার বড়উ অসুখ। এবার বোধহয় বাঁচবে না। গোপাল কবে আসবে, গোপাল কবে আসবে— অস্থির, আমারে রোজ শুধায়। একবার দেখে আসুন গিয়ে, বড় খুশি হবে তাহলি। বিকেলের দিকে বেড়াতে যাবার পথে দেখতে গেলাম বুড়িকে। বুড়ি শুয়ে আছে একটা মাদুরের ওপর, মাথায় মলিন বালিশ। 🔒ব্যাখ্যা

আমি গিয়ে কাছে দাঁড়াতেই বুড়ি চোখ মেলে আমার দিকে চাইল। পরে আমাকে চিনে ধড়মড় করে বিছানা ছেড়ে উঠবার চেষ্টা করতেই আমি বললাম, উঠো না, ও কী? বুড়ি আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল, 🔒ব্যাখ্যা ভালো আছ অ মোর গোপাল? 🔒ব্যাখ্যা বসতে দে গোপালকে। 🔒ব্যাখ্যা বসতে দে। -বসবার দরকার নেই, থাক। -গোপালেরে ওই খাজুরের চটখানা পেতে দে।

পরে ঠিক যেন আপনার মা কি পিসিমার মতো অনুযোগের সুরে বলতে লাগল, তোর জন্যি খাজুরের চাটাইখানা কদ্দিন আগে বুনে রেখেলাম। 🔒ব্যাখ্যা ওখানা পুরনো হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তুই একদিনও এলি না গোপাল। অসুখ হয়েছে তাও দেখতে এলি না। 🔒ব্যাখ্যা

বুড়ির দুচোখ বেয়ে জল বেয়ে পড়ছে গড়িয়ে। 🔒ব্যাখ্যা আমায় বলল, গোপাল, যদি মরি, আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস। 🔒ব্যাখ্যা আসবার সময় বুড়ির পাতানো মেয়েটির হাতে কিছু দিয়ে এলাম পথ্য ও ফলের জন্য। 🔒ব্যাখ্যা হয়ত আর বেশি দিন বাঁচবে না, এই অসুখ থেকে উঠবে না। বুড়ি কিন্তু সে যাত্রা সেরে উঠল। বছরখানেক আর গ্রামে যাইনি।

বোধহয় দেড় বছরও হতে পারে। একবার শরতের ছুটির পর তখনও দুইদিন ছুটি হাতে আছে। গ্রামেই গেলাম এই দুইদিন কাটাতে। গ্রামে ঢুকতেই প্রথমে দেখা পরশু সর্দারের বউ দিগম্বরীর সঙ্গে। দিগম্বরী অবাক হয়ে বলে, ওমা আজই তুমি এলে? 🔒ব্যাখ্যা  সে বুড়ি যে কাল রাতে মারা গিয়েছে। তোমার নাম করলো বড়ড়। ওর সেই পাতানো মেয়ে আজ সকালে বলছেল। আমি এসেছি শুনে বুড়ির নাতজামাই দেখা করতে এল। 🔒ব্যাখ্যা

আমার মনে পড়ল বুড়ি বলেছিল সেই একদিন আমি মরে গেলে তুই কাফনের কাপড় কিনে দিস বাবা। ওর স্নেহাতুর আত্মা বহু দূর থেকে আমায় আহ্বান করে এনেছে। 🔒ব্যাখ্যা আমার মন হয়ত ওর ডাক এবার আর তাচ্ছিল্য করতে পারেনি। 🔒ব্যাখ্যা কাপড় কেনবার টাকা দিলাম। নাতজামাই বলে গেল, মাটি দেওয়ার সময় একবার যাবেন বাবু। বেলা বারোটা আন্দাজ যাবেন।

শরতের কটুতিক্ত গন্ধ ওঠা বনঝোপ ও মাকাল-লতা দোলানো একটা প্রাচীন তিত্তিরাজ গাছের তলায় বৃদ্ধাকে কবর দেওয়া হচ্ছে। আমি গিয়ে বসলাম। আবদুল, শুকুর মিয়া, নসর, আমাদের সঙ্গে পড়ত আবেদালি, তার ছেলে গনি। এরা সকলে গাছের ছায়ায় বসে। প্রবীণ শুকুর মিয়া আমায় দেখে বলল, এই যে বাবা, এসো।

বুড়ির মাটি দেওয়ার দিন তুমি কনে থেকে এলে, তুমি তো জানতে না? তোমায় যে বড় ভালোবাসত বুড়ি। দুজন জোয়ান ছেলে কবর খুঁড়ছে। কবর দেওয়ার পর সকলে এক এক কোদাল মাটি দিল কবরের উপর। শুকুর মিয়া বলল, দ্যাও বাবা তুমিও দ্যাও। দিলাম এক কোদাল মাটি। 🔒ব্যাখ্যা সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, ও বেঁচে থাকলে বলে উঠত,- অ মোর গোপাল। 🔒ব্যাখ্যা

[সংক্ষেপিত]

উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ইছামতি’ উপন্যাস।

উত্তর : বুড়িকে দেখে লেখক দাঁড়িয়ে গেলেন।

উত্তর : চারবার।

উত্তর : লেখক যখন বুড়িকে দেখতে গেলেন।

উত্তর : আমবাগানে। 

উত্তর : স্বজনহারা গল্পকথকের গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিচর্যা করার কেউ না থাকায় ভিটিতে জঙ্গল গজিয়েছিল। 
লেখাপড়া শেষ করার পর চাকরির কারণে গল্পকথক তার পৈতৃক বাড়িতে তেমন যাতায়াত করতে পারতেন না। তার মা-বাবা, পিসিমা কেউ ছিল না। ফলে পরিত্যক্ত ভিটিতে গাছপালায় আচ্ছাদিত হয়ে একটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল। 

উত্তর : গ্রামের চক্রবর্তী মহাশয় গল্প কথককে গ্রামে বাড়ি-ঘর  করতে বললে সে আলোচ্য উক্তিটি করে। 
গল্পকথক কলকাতায় চাকরি করে। তার আপনজন বলতে বাবার বন্ধু ও গ্রামবাসী ছাড়া কেউ নেই। তাই সে গ্রামে আসে না বললেই চলে। একবার ছুটিতে গল্পকথক গ্রামে এলে তার বাবার বন্ধু ঘর নির্মাণ করতে বলেন। কিন্তু গল্পকথক চাকরি করে যে বেতন পায়, তা দিয়ে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয় বলে সে আলোচ্য উক্তিটি করে।  

উত্তর : গ্রামে বসবাসের কথা প্রসঙ্গে চক্রবর্তী মশায় লেখককে আলোচ্য উক্তি করেছেন।
জীবনের প্রয়োজনে, জীবিকার অন্বেষণে মানুষ পেশা নির্বাচনে টাকার অংককে প্রাধান্য দিলেও গ্রামের সাথে তার যে শিকড়ের সম্পর্ক তা উপেক্ষা করতে পারে না। লেখক গ্রামের ছেলে। দীর্ঘদিন পর শহর থেকে গ্রামে এসেছেন। গ্রামে তাঁর আপনজন বলতে কেউই নেই। পৈতৃক বাড়ি ভেঙেচুরে  এমন অবস্থা যে সেখানে বসবাসের উপযোগী অবস্থা এখন নেই। তাই তিনি বাবার পুরনো বন্ধু চক্রবর্তী মশায়ের বাড়িতে উঠেছেন। তিনিই লেখককে গ্রামে এসে ঘর তুলে থাকতে বলেন। কিন্তু লেখক তাঁর সামান্য বেতনের প্রসঙ্গ তুলে অপারগতার ইঙ্গিত করেন। তখন সঙ্গে সঙ্গে চক্রবর্তী মশায় তাঁকে বলেন, বেতনের দোহাই না দিয়ে গ্রামের ছেলের গ্রামেই বাস করা উচিত।  

উত্তর : লেখক যাতে নিজ ভিটায় ঘর তুলতে পারে, সে জন্য চক্রবর্তী মশায় লেখককে খড়-বাঁশ দিতে চাইলেন। 
দীর্ঘ বছর পর লেখক কলকাতা থেকে নিজ গ্রামে বেড়াতে এলে তার পরিত্যক্ত ভিটায় চক্রবর্তী মশায় তাকে ঘর তোলার অনুরোধ করেন। মাইনে কম হওয়ায় লেখক ঘর তুলতে চায়নি। কিন্তু চক্রবর্তী মশায় চান লেখক ঘর তুলে গ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুক। এ কারণে তিনি নিজ থেকে লেখককে খড়-বাঁশ দিতে চাইলেন।  

উত্তর : গ্রামের সাথে যাতে লেখকের যোগসূত্র থাকে, সে জন্য সবাই তাকে গ্রামে ঘর ওঠাতে বলে। 
লেখক গ্রামের ছেলে হলেও চাকরিসূত্রে কলকাতায় বসবাস করে। অনেক দিন পর ছুটিতে লেখক তার বাবার বন্ধু চক্রবর্তী মহাশয়ের বাড়িতে আসে, কারণ তার কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। লেখকের গ্রামে আসা যেন নিয়মিত থাকে, সে জন্য চক্রবর্তী মহাশয় ঘর ওঠাতে বলেন এবং খড়, বাঁশও দেওয়ার আশ্বাস দেন। চক্রবর্তী মহাশয়ের সাথে সুর মিলিয়ে গ্রামের আরও অনেকেই লেখককে ঘর ওঠাতে বলে। 

Score Board

_









_

_









_

_









_

_









_

_









_
Score Board

উত্তর :


ক) ‘গোয়ালপোরা’ শব্দের অর্থ গোয়াল ভরা।

খ) স্বামীর মৃত্যুর বুড়িকে দেখার মতো আপন কেউ ছিল না বলে তার দিন খুব কষ্টে কাটে।

আহ্বান’ গল্পের বুড়ির স্বামী মারা যাওয়ার পর এক নাতজামাই থাকলেও বুড়িকে ভাত-কাপড় দেয় না। পাতানো মেয়ে সারাদিন অন্যের বাড়িতে ধান ভেনে বুড়িকে নিয়ে খায়। কখনো কখনো বুড়ির ভাগ্যে ভাত জোটে না। তাই বুড়ি বলেছে উদ্দীপকের বড্ড কষ্ট, ভাত জোটে না না সবদিন। 

গ) সন্তানবাৎসল্যের যে অপূর্ব রূপটি ‘আহ্বান’ গল্পে বুড়ি গোপালের স্নেহের সম্পর্কে ফুটে উঠেছে তারই দেখা পাই আমরা উদ্দীপকের শামীমা আখতার ও প্রশান্তের সম্পর্কের মধ্যে।

আহ্বান’ গল্পের স্বজনহারা বুড়ি অমুসলিম গোপালকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করেছে। গোপালের যতেœ বুড়ি নানা ধরনের খাবার এনে দিয়েছে। অকৃত্রিম সর্বজনীন মাতৃরূপের প্রকাশ ঘটেছে বুড়ির মধ্যে। গল্পকথকের মাঝে সে তর সন্তানের ছায়া দেখতে পায়। আর স্নেহের মাঝে কোনো কৃত্রিমতা নেই।

উদ্দীপকের শামীমা আখতার শহিদ জনীন। যুদ্ধে স্বামী এবং পুত্র শহিদ হলে তিনি একা হয়ে পড়েন। গল্পের বুড়ির মতো তিনি প্রশান্তকে সন্তানের ন্যায় স্নেহ করেন। মাতৃহৃদয়ের নিঃস্বার্থ স্নেহ-মমতা দিয়ে প্রশান্তকে বড়ো করেন। দরিদ্র বুড়ি যেমন তার সবটুকু দিয়ে গোপালের যত্নকরতে চেয়েছে, তেমনি শামীমা আখতারও প্রশান্তের যত্নেকোনো কার্পণ্য করেননি। এমন কি মৃত্যুর পর তাঁর গ্রন্থস্বত্ব প্রশান্তকে দান করে গেছেন। গোপাল যেমন বুড়ির কাফনের ব্যবস্থা করেছে, প্রশান্ত তেমনি মায়ের সন্তানের স্মৃতিতে পাঠাগার নির্মাণ করেন। 

ঘ) ‘আহ্বান’ গল্পে উদার মাতৃত্ববোধের প্রকাশ দেয়া যায়, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।

আহ্বান’ গল্পে একটি নির্মল সম্পর্কের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। বৃদ্ধা ও কথকের মাঝে গড়া ওঠা নিঃস্বার্থ সম্পর্কটিতে স্নেহ মমতার বাইরে অন্য আর কিছুই মুখ্য হয়ে উঠতে পারে নি।

উদ্দীপকের শামীমা আখতার মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-পুত্র হারিয়ে নিঃঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে তিনি এতিম প্রশান্তকে পুত্রের মতো বড়ো করে তোলেন এবং মৃত্যুর পর তাঁর গ্রন্থস্বত্ব প্রশান্তকে দান করে যান। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও শামীমা আখতার প্রশান্তকে আপন ভেবে নিয়েছিলেন।

বাজারে যাওয়ার পথে বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হারিয়েছিল কথকের। তখন কথক বৃদ্ধার খোঁজখবর নিলে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধা কথকের মাঝে পুত্রের ছায়া খুঁজে পায়। এরপর থেকেই বৃদ্ধা নানা ভাবে কথকের প্রতি তার স্নেহের প্রকাশ ঘটাতে থাকে কখনো দুধ, পাকা, আম কখনো কাঁচকলা, শসা ইত্যাদি নিয়ে যায় কথকের কাছে। মায়ের অধিকার নিয়ে বুড়ি দাবি জানায়, যেন মৃত্যুর পর তার কাফনের কাপড় কথকই কিনে দেয়। অন্যদিকে শামীমা আখতার এতিম প্রশান্তকে আপন করে নিয়েছেন। পুত্রের মতো স্নেহে বড়ো করে তুলেছেন তাঁকে। কথক বুড়ির রক্তের সম্পর্কের কেউ নয়, এতিম ছেলেটিও শামীমা আখতারের রক্তের সম্পর্কের নয়। রক্তের সম্পর্কের চেয়ে মাতৃত্বের দাবিই তাঁদের কাছে বড়ো। মুক্তিযদ্ধের প্রেক্ষাপটে থাকা শামীম আখতারের সঙ্গে গল্পের বুড়ির প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও তাঁদের মধ্যে ভাবগত ঐক্য রয়েছে। আর তা হচ্ছে বাৎল্যের উজ্জ্বল প্রকাশ। এতএব প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিতে যে যথার্থ তাতে আর সন্দেহের অবকাশ থাকে না। 



উত্তর :


ক) ‘আহ্বান’ গল্পে লেখক বুড়িকে প্রথম আমবাগানের মধ্যে দেখেছিলেন। 

খ) ‘প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে গল্পকথক ও অনাথা বুড়ির মাঝে আত্মিক সম্পর্কের দিকটি বোঝানো হয়েছে।

আহ্বান’ গল্পে অল্পদিনের পরিচয়েই গল্পকথকের সঙ্গে বুড়ির স্নেহ-মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বুড়ি কথককে নিজের সন্তানের মতো ভাবতে শুরু করে। স্নেহের বশে বুড়ি প্রত্যাশা করে, সে মারা যাবার পর গল্পকথক যেনতার কাফনের কাপড় কিনে দেয়। এর প্রায় দেড় বছর পরে বুড়ি যেদিন মারা যায়, কাকতালীয়ভাবে ঠিক তার পরদিনই শহর থেকে গ্রামে যান কথক। গ্রামে ফিরে বুড়ির মৃত্যুসংবাদ শুনে তাঁর উপলব্ধি হয়, বুড়ির স্নেহাতুর আত্মই তাঁকে বহুদূর থেকে আহ্বান করে এনেছে।

গ) উদ্দীপকের মোবারক দম্পতির মাধ্যমে ‘আহ্বান গল্পের অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আহ্বান গল্পে সংকীর্ণতা ও ও সংস্কারমুক্ত উদার সমাজের দৃষ্টিকোণ ফুটে উঠেছে। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক সম্পদে নয়, বরং হৃদয়ের গভীর আন্তরিকতার স্পর্শে গড়ে ওঠে। পাঠ্য গল্পের কথক এবং বুড়ি দুজনই দুই ধর্মের মানুষ হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে হৃদয়ের আন্তরিকতায়, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সংস্কারমুক্ত মানসিকতার ফলে এছাড়া আলোচ্য গল্পে দারিদ্রপীড়িদ গ্রামের মানুষের মধ্যে সহজ সরল জীবন ধারার প্রতিফলনও লক্ষ করার মতো।

উদ্দীপকে জাতি-ধর্ম-বর্ণের চেয়ে মানবতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্তান মোবারক আমবাগানের মধ্যে পরিচয়হীন এক শিশুকে কুড়িয়ে পায়। সে শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং সন্তান স্নেহে লালনপালন করতে থাকে। এ ক্ষেত্রে মোবারক ও ফরিদা শিশুটির পরিচয় নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পরম মমতায় গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের এ মানসিকতায় মানুষের সংকীর্ণ পরিচয়ের চেয়ে মানবিকতাই প্রধান হয়ে উঠেছে। ‘আহ্বান’ গল্পেও হিন্দু-মুসলমান সকল শ্রেণির মানুষের সংস্কারমুক্ত জীবনদৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সুতরাং বলতে পারি, ‘আহ্বান’ গল্পে মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার যে মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে, উদ্দীপকে সে দিকটির প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। 

ঘ) উদ্দীপকের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো উদার মানবিক চেতনা যা ‘আহ্বান’ গল্পের ও মূলবক্তব্য।

আলোচ্য গল্পে বৈষম্যহীন উদার মানবিক আবেদনের দিকটি পরিলক্ষিত হয় । সেখানে বুড়ি চরিত্রের সাথে শহরবাসী গল্পকথকের গড়ে ওঠা সম্পর্ক অকৃত্রিম ও মানবিকতার সুতোয় বাঁধা। জাগতিক চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে নিরেট ভালোবাসাই সে সম্পর্কের মূল বন্ধন। অনাথা বুড়ি অপত্যস্নেহে গল্পকথককে কাছে টেনে নিয়েছে; গল্পকথকও বুড়ির প্রতি অকৃত্রিম টান অনুভব করেছেন।

উদ্দীপকে মানবিক সম্পর্র্কের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে। সেখানে নিঃসন্তান মোবারক ফরিদা দম্পতি এক অনাথ শিশুকে পেয়ে আপন করে নেয়। তারা সেই শিশুটির জাত পরিচয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সন্তান স্নেহে বুকে টেনে নিয়েছে। তাদের নিঃসন্তান জীবনে যেন আলোর দূত হয়ে এসেছে শিশুটি। শিশুটিকে পেয়ে মোবারক ও ফরিদার খুশির অন্ত থাকে না। এা খুশির মূলে রয়েছে মানবিক ঔদার্য ও ¯স্নেহবাৎসল্য। ‘আহ্বান’ গল্পে আমরা এর যথার্থ পরিচয় খুঁজে পাই।

আহ্বান’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের মূলভাবের মিল রয়েছে। পাঠ্য গল্পে স্থান পেয়েছে মানুষের ¯স্নেহ মমতা প্রীতির বন্ধনের অপরিসীম গুরুত্ব যে বন্ধন ধনসম্পদে নয়; হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শে গড়ে ওঠে। সেখানেন ধনী গরিব উঁচু, নিচু হিন্দু-মুসলমান ইত্যাদি পরিচয় মুখ্য নয়। এ গল্পে লেখক দুটি ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও আর্থিক অবস্থানে বেড়ে ওঠা চরিত্রের মধ্যে সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। উদ্দীপকেও সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গির পরিচয় মেলে। মোবারক ও ফরিদা দম্পতি শিশুটির পরিচয় না জেনেই তাকে অকৃত্রিম স্নেহে আপন করে নিয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার মানবিক সম্পর্কের ফলেই তারা তা পেরেছে। তাই বলতে পারি উদ্দীপকের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও ‘আহ্বান’ গল্পের মূলবক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।



উত্তর :


ক) বুড়িকে মা বলে ডাকে হাজরা ব্যাটার বউ। 

খ) প্রশ্নোক্ত উক্তিটির দ্বারা দুধটুকুর মূল্য প্রদানের মাধ্যমে বুড়িকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না হওয়ায় বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।

অসহায় বুড়ি কথককে  স্নেহ করে প্রতিদিনই তার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে। একদিন সে তার পাতানো মেয়ের কাছ থেকেকিছুটা দুধ কথকের জন্যে চেয়ে আনে। এতে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে কথক দুধের দাম দিয়ে দেন। পরবর্তীতে কথকের কাছে মনে হয় কাজটি করা তার ঠিক হয়নি।

গ) উদ্দীপকে হরিদাসীর মধ্যে ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি চরিত্রের ছায়াপথ লক্ষণীয় জাতি, ধর্ম, বর্ণসবকিছুর উর্দ্ধে গিয়ে মাতৃত্বের দিক থেকে।

মাতৃত্ব হলো মাতৃসুলভ বোধ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ প্রভৃতির উর্দ্ধে গিয়ে মাতৃত্বই প্রাধান্য প্রদান করা উচিৎ সর্বদা। মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা, শাসন সর্বোপরি মা এর সাথে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। কোনো বাধাঁ বন্ধন মাতৃত্বকে বাধা দিতে পারে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণের ব্যবধানের কাছে একেবারে তুচ্ছ।

উদ্দীপকের নিঃসন্তান হরিদাসী পরিত্যক্ত শিশু মমতা দিয়ে বড় করে তোলে। সমাজ তাতে নানা বাদ সাধলেও হরিদাসীর কাছে মাতৃত্বের দাবিই সবচেয়ে বড় বিষয়।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) রচিত ‘আহ্বান’ গল্পে বুড়ি ও কথকের কাছে উদার মানবিক সম্পর্কের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। মানুষের স্নেহ, মমতা ও প্রীতির যে বাঁধন তা ধনসম্পদে নয়। হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শে গড়ে ওঠে সে কথায় এখানে বলা হয়েছে। ধনী দরিদ্রের শ্রেণিবিভাগ ও বৈষম্য, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যকার যে দুরত্ব তাও ঘুচে যেতে পারে নিবিড় স্নেহ, উদার হৃদয়ের আন্তরিক তা ও মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গির ফলে বুড়ি চরিত্রের মাধ্যমে তা বারবার উঠে এসেছে গল্পটিতে।

সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের হরিদাসীর সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি চরিত্রের সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ) “প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও বুড়ি ও হরিদাসীর মধ্যে প্রাধান্য পেয়েছে মাতৃত্বের হাহাকার।” মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপকের হরিদাসী ধানক্ষেতের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে সমাজের বাধা নিয়মের তোয়াক্কা না করে আপন করে নেয়। অন্যদিকে “আহ্বান” গল্পের বুড়িটিও কথককে ¯স্নেহ সম্পর্কে বেধে নেয়া। ধর্ম, বর্ণ বা আর্থিক অবস্থান ভিন্ন হলেও বা রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও বুড়ি বা হরিদাসীর মধ্যে মাতৃত্বের হাহাকার থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে।

উদ্দীপকে হরিদাসী ধানক্ষতের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে পরম মমতায় আপন করে নেয়। সমাজ নানা বাধা দিলেও তার কাছে মাতৃত্বই বড় বিষয়।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) রচিত ‘আহ্বান’ গল্পে কথকের প্রতি বুড়ির সন্তান স্নেহ জাগ্রত হয়। সমাজের নানা সংস্কার গোড়ামি, আর্থিক অবস্থান কখনো বুড়ি ও কথকের মধ্যে বাধাঁ হয়ে দাড়াতে পারেনি। বুড়ির মধ্যে ছিল কথকের প্রতি অসীম সন্তান স্নেহযার টানে সে বারবার কথকের কাছে আসত।

সুতরাং, আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।