ক) ‘গোয়ালপোরা’ শব্দের অর্থ গোয়াল ভরা। |
খ) স্বামীর মৃত্যুর বুড়িকে দেখার মতো আপন কেউ ছিল না
বলে তার দিন খুব কষ্টে কাটে। ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ির স্বামী মারা যাওয়ার পর এক
নাতজামাই থাকলেও বুড়িকে ভাত-কাপড় দেয় না। পাতানো মেয়ে সারাদিন অন্যের বাড়িতে ধান
ভেনে বুড়িকে নিয়ে খায়। কখনো কখনো বুড়ির ভাগ্যে ভাত জোটে না। তাই বুড়ি বলেছে
উদ্দীপকের বড্ড কষ্ট, ভাত জোটে না না সবদিন। |
গ) সন্তানবাৎসল্যের যে অপূর্ব রূপটি ‘আহ্বান’ গল্পে
বুড়ি গোপালের স্নেহের সম্পর্কে ফুটে উঠেছে তারই দেখা পাই আমরা উদ্দীপকের শামীমা
আখতার ও প্রশান্তের সম্পর্কের মধ্যে। ‘আহ্বান’ গল্পের স্বজনহারা বুড়ি অমুসলিম গোপালকে
নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করেছে। গোপালের যতেœ বুড়ি নানা ধরনের খাবার এনে দিয়েছে।
অকৃত্রিম সর্বজনীন মাতৃরূপের প্রকাশ ঘটেছে বুড়ির মধ্যে। গল্পকথকের মাঝে সে তর
সন্তানের ছায়া দেখতে পায়। আর স্নেহের মাঝে কোনো কৃত্রিমতা নেই। উদ্দীপকের শামীমা আখতার শহিদ জনীন। যুদ্ধে স্বামী এবং
পুত্র শহিদ হলে তিনি একা হয়ে পড়েন। গল্পের বুড়ির মতো তিনি প্রশান্তকে সন্তানের
ন্যায় স্নেহ করেন। মাতৃহৃদয়ের নিঃস্বার্থ স্নেহ-মমতা দিয়ে প্রশান্তকে বড়ো করেন।
দরিদ্র বুড়ি যেমন তার সবটুকু দিয়ে গোপালের যত্নকরতে চেয়েছে, তেমনি শামীমা আখতারও প্রশান্তের যত্নেকোনো কার্পণ্য করেননি। এমন কি
মৃত্যুর পর তাঁর গ্রন্থস্বত্ব প্রশান্তকে দান করে গেছেন। গোপাল যেমন বুড়ির কাফনের
ব্যবস্থা করেছে, প্রশান্ত তেমনি মায়ের সন্তানের স্মৃতিতে
পাঠাগার নির্মাণ করেন। |
ঘ) ‘আহ্বান’ গল্পে উদার মাতৃত্ববোধের প্রকাশ দেয়া যায়, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। ‘আহ্বান’ গল্পে একটি নির্মল সম্পর্কের চিত্র
অঙ্কিত হয়েছে। বৃদ্ধা ও কথকের মাঝে গড়া ওঠা নিঃস্বার্থ সম্পর্কটিতে স্নেহ মমতার
বাইরে অন্য আর কিছুই মুখ্য হয়ে উঠতে পারে নি। উদ্দীপকের শামীমা আখতার মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-পুত্র
হারিয়ে নিঃঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে তিনি এতিম প্রশান্তকে পুত্রের মতো বড়ো করে তোলেন এবং
মৃত্যুর পর তাঁর গ্রন্থস্বত্ব প্রশান্তকে দান করে যান। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও
শামীমা আখতার প্রশান্তকে আপন ভেবে নিয়েছিলেন। বাজারে যাওয়ার পথে বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হারিয়েছিল কথকের।
তখন কথক বৃদ্ধার খোঁজখবর নিলে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধা কথকের মাঝে পুত্রের ছায়া খুঁজে পায়।
এরপর থেকেই বৃদ্ধা নানা ভাবে কথকের প্রতি তার স্নেহের প্রকাশ ঘটাতে থাকে কখনো দুধ, পাকা, আম কখনো কাঁচকলা, শসা ইত্যাদি নিয়ে যায় কথকের কাছে। মায়ের অধিকার নিয়ে বুড়ি দাবি জানায়,
যেন মৃত্যুর পর তার কাফনের কাপড় কথকই কিনে দেয়। অন্যদিকে শামীমা
আখতার এতিম প্রশান্তকে আপন করে নিয়েছেন। পুত্রের মতো স্নেহে বড়ো করে তুলেছেন
তাঁকে। কথক বুড়ির রক্তের সম্পর্কের কেউ নয়, এতিম ছেলেটিও
শামীমা আখতারের রক্তের সম্পর্কের নয়। রক্তের সম্পর্কের চেয়ে মাতৃত্বের দাবিই
তাঁদের কাছে বড়ো। মুক্তিযদ্ধের প্রেক্ষাপটে থাকা শামীম আখতারের সঙ্গে গল্পের বুড়ির
প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও তাঁদের মধ্যে ভাবগত ঐক্য রয়েছে। আর তা হচ্ছে বাৎল্যের
উজ্জ্বল প্রকাশ। এতএব প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিতে যে যথার্থ তাতে আর সন্দেহের অবকাশ
থাকে না। |
ক) ‘আহ্বান’ গল্পে লেখক বুড়িকে প্রথম আমবাগানের মধ্যে
দেখেছিলেন। |
খ) ‘প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে গল্পকথক ও অনাথা বুড়ির
মাঝে আত্মিক সম্পর্কের দিকটি বোঝানো হয়েছে। ‘আহ্বান’ গল্পে অল্পদিনের পরিচয়েই গল্পকথকের সঙ্গে
বুড়ির স্নেহ-মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বুড়ি কথককে নিজের সন্তানের মতো ভাবতে শুরু
করে। স্নেহের বশে বুড়ি প্রত্যাশা করে, সে মারা যাবার পর
গল্পকথক যেনতার কাফনের কাপড় কিনে দেয়। এর প্রায় দেড় বছর পরে বুড়ি যেদিন মারা যায়,
কাকতালীয়ভাবে ঠিক তার পরদিনই শহর থেকে গ্রামে যান কথক। গ্রামে
ফিরে বুড়ির মৃত্যুসংবাদ শুনে তাঁর উপলব্ধি হয়, বুড়ির স্নেহাতুর
আত্মই তাঁকে বহুদূর থেকে আহ্বান করে এনেছে। |
গ) উদ্দীপকের মোবারক দম্পতির মাধ্যমে ‘আহ্বান গল্পের
অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ‘আহ্বান গল্পে সংকীর্ণতা ও ও সংস্কারমুক্ত উদার
সমাজের দৃষ্টিকোণ ফুটে উঠেছে। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক সম্পদে নয়, বরং হৃদয়ের গভীর আন্তরিকতার স্পর্শে গড়ে ওঠে। পাঠ্য গল্পের কথক এবং
বুড়ি দুজনই দুই ধর্মের মানুষ হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে হৃদয়ের
আন্তরিকতায়, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সংস্কারমুক্ত
মানসিকতার ফলে এছাড়া আলোচ্য গল্পে দারিদ্রপীড়িদ গ্রামের মানুষের মধ্যে সহজ সরল
জীবন ধারার প্রতিফলনও লক্ষ করার মতো। উদ্দীপকে জাতি-ধর্ম-বর্ণের চেয়ে মানবতাকে প্রাধান্য
দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্তান মোবারক আমবাগানের মধ্যে পরিচয়হীন এক শিশুকে কুড়িয়ে পায়। সে
শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং সন্তান স্নেহে লালনপালন করতে থাকে। এ ক্ষেত্রে
মোবারক ও ফরিদা শিশুটির পরিচয় নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পরম মমতায় গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের
এ মানসিকতায় মানুষের সংকীর্ণ পরিচয়ের চেয়ে মানবিকতাই প্রধান হয়ে উঠেছে। ‘আহ্বান’
গল্পেও হিন্দু-মুসলমান সকল শ্রেণির মানুষের সংস্কারমুক্ত জীবনদৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ
ঘটেছে। সুতরাং বলতে পারি, ‘আহ্বান’ গল্পে মানবিক ও
অসাম্প্রদায়িক চেতনার যে মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে, উদ্দীপকে
সে দিকটির প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। |
ঘ) উদ্দীপকের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো উদার মানবিক
চেতনা যা ‘আহ্বান’ গল্পের ও মূলবক্তব্য। আলোচ্য গল্পে বৈষম্যহীন উদার মানবিক আবেদনের দিকটি
পরিলক্ষিত হয় । সেখানে বুড়ি চরিত্রের সাথে শহরবাসী গল্পকথকের গড়ে ওঠা সম্পর্ক
অকৃত্রিম ও মানবিকতার সুতোয় বাঁধা। জাগতিক চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে নিরেট ভালোবাসাই
সে সম্পর্কের মূল বন্ধন। অনাথা বুড়ি অপত্যস্নেহে গল্পকথককে কাছে টেনে নিয়েছে; গল্পকথকও বুড়ির প্রতি অকৃত্রিম টান অনুভব করেছেন। উদ্দীপকে মানবিক সম্পর্র্কের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটে
উঠেছে। সেখানে নিঃসন্তান মোবারক ফরিদা দম্পতি এক অনাথ শিশুকে পেয়ে আপন করে নেয়।
তারা সেই শিশুটির জাত পরিচয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সন্তান স্নেহে বুকে টেনে নিয়েছে।
তাদের নিঃসন্তান জীবনে যেন আলোর দূত হয়ে এসেছে শিশুটি। শিশুটিকে পেয়ে মোবারক ও
ফরিদার খুশির অন্ত থাকে না। এা খুশির মূলে রয়েছে মানবিক ঔদার্য ও ¯স্নেহবাৎসল্য। ‘আহ্বান’ গল্পে আমরা এর যথার্থ
পরিচয় খুঁজে পাই। ‘আহ্বান’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের মূলভাবের মিল
রয়েছে। পাঠ্য গল্পে স্থান পেয়েছে মানুষের ¯স্নেহ
মমতা প্রীতির বন্ধনের অপরিসীম গুরুত্ব যে বন্ধন ধনসম্পদে নয়; হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শে গড়ে ওঠে। সেখানেন ধনী গরিব উঁচু,
নিচু হিন্দু-মুসলমান ইত্যাদি পরিচয় মুখ্য নয়। এ গল্পে লেখক দুটি
ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও আর্থিক অবস্থানে বেড়ে ওঠা চরিত্রের
মধ্যে সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। উদ্দীপকেও সংস্কারমুক্ত মনোভঙ্গির
পরিচয় মেলে। মোবারক ও ফরিদা দম্পতি শিশুটির পরিচয় না জেনেই তাকে অকৃত্রিম স্নেহে
আপন করে নিয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার মানবিক সম্পর্কের ফলেই তারা তা
পেরেছে। তাই বলতে পারি উদ্দীপকের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও ‘আহ্বান’ গল্পের
মূলবক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ। |
ক) বুড়িকে মা বলে ডাকে হাজরা ব্যাটার বউ। |
খ) প্রশ্নোক্ত উক্তিটির দ্বারা দুধটুকুর মূল্য প্রদানের
মাধ্যমে বুড়িকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না হওয়ায় বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। অসহায় বুড়ি কথককে স্নেহ করে প্রতিদিনই তার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে
আসে। একদিন সে তার পাতানো মেয়ের কাছ থেকেকিছুটা দুধ কথকের জন্যে চেয়ে আনে। এতে
কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে কথক দুধের দাম দিয়ে দেন। পরবর্তীতে কথকের কাছে মনে হয়
কাজটি করা তার ঠিক হয়নি। |
গ) উদ্দীপকে হরিদাসীর মধ্যে ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি
চরিত্রের ছায়াপথ লক্ষণীয় জাতি, ধর্ম, বর্ণসবকিছুর উর্দ্ধে গিয়ে মাতৃত্বের দিক থেকে। মাতৃত্ব হলো মাতৃসুলভ বোধ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ প্রভৃতির উর্দ্ধে গিয়ে মাতৃত্বই
প্রাধান্য প্রদান করা উচিৎ সর্বদা। মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা,
শাসন সর্বোপরি মা এর সাথে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। কোনো বাধাঁ
বন্ধন মাতৃত্বকে বাধা দিতে পারে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণের ব্যবধানের কাছে একেবারে তুচ্ছ। উদ্দীপকের নিঃসন্তান হরিদাসী পরিত্যক্ত শিশু মমতা দিয়ে
বড় করে তোলে। সমাজ তাতে নানা বাদ সাধলেও হরিদাসীর কাছে মাতৃত্বের দাবিই সবচেয়ে বড়
বিষয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) রচিত ‘আহ্বান’
গল্পে বুড়ি ও কথকের কাছে উদার মানবিক সম্পর্কের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। মানুষের স্নেহ, মমতা ও প্রীতির যে বাঁধন তা ধনসম্পদে নয়। হৃদয়ের নিবিড় আন্তরিকতার
স্পর্শে গড়ে ওঠে সে কথায় এখানে বলা হয়েছে। ধনী দরিদ্রের শ্রেণিবিভাগ ও বৈষম্য,
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যকার যে দুরত্ব তাও ঘুচে
যেতে পারে নিবিড় স্নেহ, উদার হৃদয়ের আন্তরিক তা ও মানবীয়
দৃষ্টিভঙ্গির ফলে বুড়ি চরিত্রের মাধ্যমে তা বারবার উঠে এসেছে গল্পটিতে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের
হরিদাসীর সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি চরিত্রের সাদৃশ্য বিদ্যমান। |
ঘ) “প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও বুড়ি ও হরিদাসীর মধ্যে
প্রাধান্য পেয়েছে মাতৃত্বের হাহাকার।” মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপকের হরিদাসী ধানক্ষেতের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া
শিশুটিকে সমাজের বাধা নিয়মের তোয়াক্কা না করে আপন করে নেয়। অন্যদিকে “আহ্বান”
গল্পের বুড়িটিও কথককে ¯স্নেহ
সম্পর্কে বেধে নেয়া। ধর্ম, বর্ণ বা আর্থিক অবস্থান ভিন্ন হলেও
বা রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও বুড়ি বা হরিদাসীর মধ্যে মাতৃত্বের হাহাকার থাকায় এটি
সম্ভব হয়েছে। উদ্দীপকে হরিদাসী ধানক্ষতের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে
পরম মমতায় আপন করে নেয়। সমাজ নানা বাধা দিলেও তার কাছে মাতৃত্বই বড় বিষয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) রচিত ‘আহ্বান’
গল্পে কথকের প্রতি বুড়ির সন্তান স্নেহ জাগ্রত হয়। সমাজের নানা সংস্কার গোড়ামি, আর্থিক অবস্থান কখনো বুড়ি ও কথকের মধ্যে বাধাঁ হয়ে দাড়াতে পারেনি।
বুড়ির মধ্যে ছিল কথকের প্রতি অসীম সন্তান স্নেহ। যার টানে সে
বারবার কথকের কাছে আসত। সুতরাং, আলোচনার
প্রেক্ষিতে বলা যায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |