বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

মাইকেল মধুসূদন দত্ত


কবি- পরিচিতি:

নাম : মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

জন্ম ও পরিচয় : ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে জানুয়ারি যশোর জেলার কেশবপুর থানাধীন সাগরদাঁড়ি গ্রামে। পিতা মহামতি রাজনারায়ণ দত্ত এবং মাতা জাহ্নবী দেবী।

শিক্ষাজীবন : মায়ের তত্ত্বাবধানে গ্রামেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়। তিনি ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা হিন্দু কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখানে ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর সাহিত্যে-প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে।

ধর্মত্যাগ : ১৮৪৩, খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ।

কর্মজীবন : প্রথম জীবনে আইন পেশায় জড়িত হলেও লেখালেখি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, হিব্রু, গ্রিক, ল্যাটিন, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইতালিয়ান, তামিল ভাষায় দক্ষ ছিলেন।

সংসারজীবন : মাদ্রাজে বসবাস কালে রেবেকা টমসন নাম্নী এক ইংরেজ মহিলার পাণিগ্রহণ (১৮৪৮)। পরে হেনরিয়েটা (মাদ্রাজ স্কুলের মধুসূদনের এক সহকর্মীর কন্যা)। নাম্নী অন্য এক ইংরেজ মহিলার সঙ্গে প্রণয়সূত্রে আবদ্ধ হন (১৮৫৬)।

সাহিত্যকর্ম : কাব্যগ্রন্থ : তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, মেঘনাদবধ কাব্য (মহাকাব্য), ব্রজাঙ্গনা কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলি।

নাটক : শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, কৃষ্ণকুমারী, মায়াকানন।

প্রহসন : একেই কি বলে সভ্যতা?, বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ।

ইংরেজি নাটক ও নাট্যানুবাদ : রিজিয়া, রত্নাবলি, শর্মিষ্ঠা, নীলদর্পণ (অনুবাদ)I

বিশেষ কীর্তি : ইতালীয় কবি পেত্রার্কের অনুসরণে ‘চতুর্দশপদী কবিতা' (সনেট) রচনা করেন। বাংলায় ‘চতুর্দশপদী কবিতা' রচনায় প্রথম কৃতিত্ব তাঁর।

জীবনাবসান : ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে জুন তিনি পরলোক গমন করেন। কলকাতার লেয়ার সার্কুলার রোডে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।



“এতক্ষণে”- অরিন্দম কহিলা বিষাদে- 🔒ব্যাখ্যা

”জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল

রক্ষঃপুরে🔒ব্যাখ্যা হায়, তাত, উচিত কি তব

এ কাজ, 🔒ব্যাখ্যা নিকষা সতী তোমার জননী, 

সহোদর রক্ষঃশ্রেষ্ঠ? শূলিশম্ভুনিভ

কুম্ভকর্ণ? ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী🔒ব্যাখ্যা

নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে🔒ব্যাখ্যা

চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে? 🔒ব্যাখ্যা

কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরু জন তুমি 🔒ব্যাখ্যা

পিতৃতুল্য। ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে,

পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে🔒ব্যাখ্যা

লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে। 🔒ব্যাখ্যা

উত্তরিলা বিভীষণ, “বৃথা এ সাধনা,

ধীমান্রাঘবদাস আমি; কী প্রকারে

তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতে

অনুরোধ?" 🔒ব্যাখ্যা উত্তরিলা কাতরে রাবণি;-

“হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে! 🔒ব্যাখ্যা

রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে

আনিলে এ কথা, 🔒ব্যাখ্যা তাত, কহ তা দাসেরে!

স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে;  🔒ব্যাখ্যা

পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি

ধূলায়? 🔒ব্যাখ্যা হে রক্ষোরথিভুলিলে কেমনে

কে তুমি? জনম তব কোন মহাকুলে? 🔒ব্যাখ্যা

কে বা সে অধম রাম? স্বাচ্ছ সরোবরে

করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ-কাননে;

যায় কি সে কভু, প্রভু, পঙ্কিল সলিলে, 🔒ব্যাখ্যা

শৈবালদলের ধাম? মৃগেন্দ্র কেশরী,

কবে, হে বীরকেশরী, সম্ভাষে শৃগালেমিত্রভাবে?🔒ব্যাখ্যা অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি,

অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে। 

ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষ্মণ; নহিলে

অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে? 🔒ব্যাখ্যা

কহ, মহারথী, এ কি?

নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে

এ কথা! 🔒ব্যাখ্যা ছাড়হ পথ; আসিব ফিরিয়া

এখনি! দেখিব আজি, কোন্ দেববলে,

বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি! 🔒ব্যাখ্যা

দেব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছ,

রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, পরাক্রম দাসের! কী দেখি

ডরিবে এ দাস হেন দুর্বল মানবে? 🔒ব্যাখ্যা

নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রগল্‌ভে পশিল 

দম্ভী🔒ব্যাখ্যা আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে 🔒ব্যাখ্যা

তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে

বনবাসী! 🔒ব্যাখ্যা হে বিধাতঃ, নন্দন-কাননে

ভ্রমে দুরাচার দৈত্য? 🔒ব্যাখ্যা প্রফুল্ল কমলে

কীটবাস? 🔒ব্যাখ্যা কহ তাত, সহিব কেমনে।

হেন অপমান আমি,- ভ্রাতৃ-পুত্র তব?

তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?”  🔒ব্যাখ্যা

মহামন্ত্র-বলে যথা নম্রশিরঃ ফণী

মলিনবদন লাজে, 🔒ব্যাখ্যা উত্তরিলা রথী

রাবণ-অনুজ, লক্ষি রাবণ-আত্মজে;

“নহি দোষী আমি, বৎস; বৃথা ভর্ৎস মোরে 🔒ব্যাখ্যা

তুমি! নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা

এ কনক-লঙ্কা রাজা, মজিলা আপনি! 🔒ব্যাখ্যা

বিরত সতত পাপে দেবকুল; এবে

পাপপূর্ণ লঙ্কাপুরী; প্রলয়ে যেমতি

বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে! 🔒ব্যাখ্যা

রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী।

তেঁই আমি। পরদোষে কে চাহে মজিতে?” 🔒ব্যাখ্যা

রুষিলা বাসবত্রাস। গম্ভীরে যেমতি

নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্র কোপি, 🔒ব্যাখ্যা

কহিলা বীরেন্দ্র বলী,-“ধর্মপথগামী, 

হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে

তুমি; — কোন্ ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি,

জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি,-এ সকলে দিলা

জলাঞ্জলি? 🔒ব্যাখ্যা  শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি

পরজন, গুণহীন স্বজন, 🔒ব্যাখ্যা তথাপি

নির্গণ স্বজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা!  

এ শিক্ষা, হে রক্ষোবর, কোথায় শিখিলে?

কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা! হেন সহবাসে,

হে পিতব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে? 🔒ব্যাখ্যা

গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।” 


 পাঠ-পরিচিতি / সারসংক্ষেপ  

“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কাব্যাংশটুকু মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ-কাব্যের ‘বধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে। সর্বমোট নয়টি সর্গে বিন্যস্ত ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’র ষষ্ঠ সর্গে লক্ষ্ণণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে অসমসাহসী বীর মেঘনাদের। রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রান্ত হলে রাজা রাবণ শত্রুর উপর্যুপরি দৈব-কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদকে পিতা রাবণ পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে বরণ করে নেন। যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার পূর্বেই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করে। মায়া দেবীর আনুকূল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায়, লক্ষ্মণ শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভলা যজ্ঞাগারে প্রবেশে সমর্থ হয়। কপট লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদের কাছে যুদ্ধ প্রার্থনা করলে মেঘনাদ বিস্ময় প্রকাশ করে। শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষ্মণের অনুপ্রবেশ মায়াবলে সম্পন্ন হয়েছে, বুঝতে বিলম্ব ঘটে না তার। ইতোমধ্যে লক্ষ্মণ তলোয়ার কোষমুক্ত করলে মেঘনাদ যুদ্ধসাজ গ্রহণের জন্য সময় প্রার্থনা করে লক্ষ্মণের কাছে। কিন্তু লক্ষ্মণ তাকে সময় না দিয়ে আক্রমণ করে। এ সময় অকস্মাৎ যজ্ঞাগারে প্রবেশদ্বারের দিকে চোখ পড়ে মেঘনাদের; দেখতে পায় বীরযোদ্ধা পিতৃব্য বিভীষণকে। মুহূর্তে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর কাছে। খুল্লতাত বিভীষণকে প্রত্যক্ষ করে দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র মেঘনাদ যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, সেই নাটকীয় ভাষ্যই “বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” অংশে সংকলিত হয়েছে। এ অংশে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে ঘৃণা। জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিসত্তার সংহতির গুরত্বের কথা যেমন এখানে ব্যক্ত হয়েছে তেমনি এর বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে অভিহিত করা হয়েছে নীচতা ও বর্বরতা বলে। 
উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাল্মীকি-রামায়ণকে নবমূল্য দান করেছেন এ কাব্যে। মানবকেন্দ্রিকতাই রেনেসাঁস বা নবজাগরণের সারকথা। ঐ নবজাগরণের প্রেরণাতেই রামায়ণের রাম-লক্ষ্মণ মধুসূদনের লেখনীতে হীনরূপে এবং রাক্ষসরাজ রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদ যাবতীয় মানবীয় গুণের ধারকরূপে উপস্থাপিত হয়েছে। দেবতাদের আনুকূল্যপ্রাপ্ত রাম-লক্ষ্মণ নয়, পুরাণের রাক্ষসরাজ রাবণ ও তাঁর পুত্র মেঘনাদের প্রতিই মধুসূদনের মমতা ও শ্রদ্ধা।                                      

উত্তর : _

উত্তর : চাঁদ। 

উত্তর : নিশ্চল। 

উত্তর : মেঘনাদ। 

উত্তর : মেঘনাদ।

উত্তর : লক্ষ্মণ। 

উত্তর : "বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ" কাব্যাংশে উল্লিখিত "অরিন্দম" অর্থাৎ, শত্রু দমনকারী মেঘনাদের বিষাদের কারণ হলো তাঁর কাকা বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা।
মেঘনাদ যখন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেব অগ্নির আরাধনা করছিলেন তখন শত্রু লক্ষ্মণের অপ্রত্যাশিত আর্বিভাব তাঁকে বিব্রত করে। পরে দরজার বাইরে পথ আগলে দাঁড়ানো বিভীষণকে দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে, তাঁর সাহায্যেই গোপন পথে লক্ষ্মণ এখানে আসতে পেরেছে। লঙ্কার সম্ভ্রান্ত রাজবংশের সন্তান হওয়া সত্ত্বে শত্রুদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে যোগ দেওয়া এবং স্বদেশ-স্বজনের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করা বিভীষণের মতো প্রাজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষে একেবারেই ঠিক হয়নি। এটিই মেঘনাদের বিষাদের কারণ।

উত্তর : বিভীষণ লঙ্কাবীর রাবণের ভ্রাতা ও মেঘনাদের কাকা। রাম-রাবণের যুদ্ধে বিভীষণ স্বীয় স্বার্থোদ্ধারের জন্য রাবণের পক্ষ ত্যাগ করে শত্রু রামের পক্ষে যোগ দেয়। রাম যখন মেঘনাদকে হত্যা করতে চায় তখন বিভীষণই সহযোগিতা করে মেঘনাদকে হত্যার ব্যাপারে। তাই তো নিকুম্ভিÍলা যজ্ঞাগারে যখন মেঘনাদ যজ্ঞ করছিল তখন নিরস্ত্র মেঘনাদকে বধ করার উদ্দেশ্যে রুদ্ধদ্বার যজ্ঞাগারে লক্ষ্মণকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় বিভীষণ। 

উত্তর : বিভীষণ রাবণের ভাই হওয়া সত্ত্বেও শত্রু রামচন্দ্রের দলে যোগ দিয়েছেন এবং রামানুজ লক্ষ্মণকে গোপন পথে লঙ্কাপুরীতে তথা নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নিয়ে এসেছেন। এ কাজটি মেঘনাদের কাছে উচিত মনে হয় নি।
কোন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন এবং মর্যাদাবান মানুষই নিজের ক্ষতি করার জন্য কখনো কোন শত্রুকে নিজের বাড়িতে ডেকে আনেন না। কিন্তু সুমহান বংশ মর্যাদা ও ঐতিহ্যের অধিকারী বিভীষণ তাঁর জন্মভূমি লঙ্কায় শত্রু রাম-লক্ষ্মণকে ডেকে এনেছেন স্বদেশের সর্বনাশ করতে। বিভীষণ লক্ষ্মণকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নিয়ে এসেছেন, মেঘনাদ পিতৃব্য বিভীষণকে পিতার সমতুল্যই মনে করতেন। অথচ বিভীষণের মতো অভিজাত রাজ-পুরুষের কাছে এ আচরণ প্রত্যাশিত নয়। তাই মেঘনাদের মতে বিভীষণের এমন কাজ করা উচিত হয় নি।  

উত্তর : সুমহান বংশমর্যাদা ও ঐতিহ্যের অধিকারী যে বিভীষণ এবং লঙ্কার শ্রেষ্ঠ ও সম্ভ্রান্ত রাজবংশের যে তাঁর জন্ম-এ কথাটি বিভীষণকে স্মরণ করিয়ে দিতেই মেঘনাদ আলোচ্য উক্তিগুলো করেছেন। 
সতী-লক্ষী বীরপ্রসূ নিকষার গর্ভে জন্ম লঙ্কার শ্রেষ্ঠ রাজা রাবণ যাঁর বড়ভাই শূলপাণি মহাদেবের মতো কুম্ভকর্ণ যার সহোদর, দেবতাদের রাজা ইন্দ্র বা বাসবকে যিনি যুদ্ধে পরাজিত করেছেন সেই বাসববিজয়ী লঙ্কার শ্রেষ্ঠ সন্তান মেঘনাদ যাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র সেই বিভীষণ শত্রুপক্ষে যোগ দিতে পারে না।

উত্তর : চিরশত্রু লক্ষ্মণকে নিজগৃহপথ লঙ্কাপুরী চিনিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নিয়ে আসার কারণে বিভীষণকে একথা বলেছেন মেঘনাদ। 
‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশে যুদ্ধ জয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধ যাত্রার আগে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করেন। মায়াদেবীর আনুকূল্যে গৃহশত্রু বিভীষণের সহায়তায় লক্ষ্মণ শতশত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে তস্কর অর্থাৎ চোরের মতো প্রবেশ করে। বিভীষণ রাবণের ভাই হয়ে শত্রু পক্ষের সাথে হাত মেলায় এবং মেঘনাদকে বধ করার জন্য তস্কর লক্ষ্মণকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারের পথ চিনিয়ে দিয়ে নিজের বংশের এবং সমগ্র লঙ্কাপুরীর চরম ক্ষতি করেছেন। এই কথাটি বোঝানোর জন্য আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

_
_
_
_

উত্তর : খ
_

Score Board

.









.

.









.

উদ্দীপকটি পড় এবং ০৩ ও ০৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
উদ্দীপকের ইদ্রিস চরিত্রটি “বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে?










_

i) নিজ গৃহপথ, তাত দেখাও তস্করে?

ii) রাঘব দাস আমি; কী প্রকারে/তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব।

iii) গতি যায় নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।











.

.









.
Score Board

উত্তর :


ক) উত্তর:  লক্ষ্মণ। সুমিত্রার গর্ভজাত সন্তান বলে লক্ষ্মণের অপর নাম সৌমিত্রি।

খ) উত্তর  “লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে”-বলতে শত্রু লক্ষ্মণ যুদ্ধে পরাস্ত করে লঙ্কার কলঙ্ক মোচনের কথা বোঝানো হয়েছে। 

লক্ষ্মণ ও লক্ষ্মণের আচরণকেই মেঘনাদ লঙ্কার কলঙ্ক বলতে চেয়েছেন, কারণ  তস্কর বা চোরের মতো লক্ষণ গোপনে সুরক্ষিত লঙ্কাপুরীর নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে নিরস্ত মেঘনাদকে যুদ্ধে আহ্বান করে। এটা লঙ্কার কলঙ্ক। কিন্তু মেঘনাদ যে বীর! তাই তিনি লক্ষ্মণের কাছে যুদ্ধসাজ প্রার্থনা করেন। তখন লক্ষ্মণ রাজি হয় না বরং কাপুষের মতো নিরস্ত্র মেঘনাদকে হত্যা করতে কোষ হতে তরবারি উন্মুক্ত করে। মেঘনাদ তথা লঙ্কার সে অপরাজেয় গৌরবের ঐতিহ্য আছে তাতে কালিমা লেপন করতে এসেছে লক্ষ্মণ। তাই সে রামের অনুজ লক্ষ্মনকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে চায়। তার সাথে যুদ্ধ করে, তাকে পরাজিত করে লঙ্কার সমস্ত কলঙ্ক কালিমা মুছে দিতে চায়।

গ) উত্তর: উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত জন্মভূমির প্রতি মেঘনাদের গভীর অনুরাগের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

জন্মভূমি প্রত্যেক মানুষের কাছেই পরম শ্রদ্ধার বস্তু। স্বদেশের মাটি, পানি, আলো-বাতাসেই মানুষ বেড়ে ওঠে। স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ছুটে বেড়ায় নানা দিকে। দিন শেষে পাখি যেমন ফিরে আসে তার শান্তির নীড়ে মানুষও তেমনি নানা দেশ ঘুরে স্বদেশের মাটিতেই শেষ আশ্রয় নিতে চায়।

উদ্দীপকে স্বদেশের প্রতি মানুষের অনুরাগ ও ভালোবাসার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের জীবনের মহত্তম কাজের মধ্যে স্বদেশ অন্যতম একটি। মানব-কল্যাণের মূলেও স্বদেশের প্রতি গভীর মনোযোগ ও ভালোবাসাকেই নির্দেশ করা হয়। উদ্দীপকের লেখকের স্বদেশপ্রেমের বর্ণনা আলোচ্য ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত, স্বদেশের প্রতি মেঘনাদ-এর অনুরাগের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মেঘনাদ সেখানে রামানুজ লক্ষ্মণকে হত্যা করে স্বর্ণলঙ্কার কলঙ্ক ও কালিমা মোচন করতে চেয়েছেন।

ঘ) উত্তর: উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত মেঘনাদের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা একসূত্রে গাঁথা।-মন্তব্যটি যথার্থ।

একজন মানুষের জীবনে তার মা যেমন পরিচিত, তেমনি স্বদেশও পরিচিত। মানুষের সাথে সন্তানের যেরূপ হৃদ্যতা গড়ে ওঠে, দেশের সাথেও তার অনুরূপ হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। একজন মানুষের সামগ্রিক জীবনের বিকাশে তার স্বদেশ প্রকৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুস্থ চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই স্বদেশপ্রীতি রয়েছে।

উদ্দীপকে স্বদেশের প্রতি মানুষের অনুরাগ প্রসঙ্গে যে বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে তাতে স্বদেশানুরাগের গভীর চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। একজন দেশপ্রেমিক কীভাবে তার দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে পারেন তা সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দীপকের এই বক্তব্যের চেতনা আলোচ্য ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত মেঘনাদের স্বদেশ চেতনার সাথে অভিন্ন ধারায় প্রবাহিত।

মেঘনাদ অসীম সাহসী বীর। তিনি তাঁর প্রিয় ভূমিকে মুক্ত করতে চেয়েছেন। স্বর্ণলঙ্কাকে শত্রু কালো থাবার ছায়া থেকে মুক্ত করতে চেয়েছেন। এখানে মেঘনাদ তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রিয় জন্মভূমিকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখেছেন। এভাবে উদ্দীপকটির মূলভাব আলোচ্য কবিতায় প্রতিফলিত মেঘনাদের স্বদেশ প্রীতির সাথে একসূত্রে গাঁথা।