জীবন বিনিময়
গোলাম মোস্তফা
কবি পরিচিতি:
নাম : গোলাম মোস্তফা
জন্ম ও পরিচয় : গোলাম মোস্তফা ১৮৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
জন্মস্থান : যশোর জেলার শৈলকুপা থানার মনোহরপুর গ্রাম।
শিক্ষা ও পেশা : তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
সাহিত্যিক পরিচয় : কাব্য, উপন্যাস, জীবনী, অনুবাদসহ সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ ছিল।
উল্লেখযোগ্য রচনা কাব্যগ্রন্থ : রক্তরাগ, খোশরোজ, বুলবুলিস্তান।
উপন্যাস : ভাঙ্গাবুক, রূপের নেশা, এক মন এক প্রাণ।
জীবনী : বিশ্বনবী, মরুদুলাল।
অনুবাদ : কালামে ইকবালম আল কুরআন, শিকওয়া ও জওয়াবে শিকওয়া
ইত্যাদি।
মৃত্যু : তিনি ১৯৬৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর- 🔒ব্যাখ্যা
পুত্র তাঁহার হুনায়ন বুঝি বাঁচে না এবার আর!
চারিধারে তার ঘনায়ে আসিছে মরণ-অন্ধকার। 🔒ব্যাখ্যা
রাজ্যের যত বিজ্ঞ হেকিম কবিরাজ দরবেশ
এসেছে সবাই, দিতেছে বসিয়া ব্যবস্থা সবিশেষ, 🔒ব্যাখ্যা
সেবাযত্নের বিধিবিধানের ত্রুটি নাহি এক লেশ। 🔒ব্যাখ্যা
তবু তাঁর সেই দুরন্ত রোগ হটিতেসে নাকো হায়,
যত দিন যায়, দুর্ভোগ তার ততই বারিয়া যায়— 🔒ব্যাখ্যা
জীবন-প্রদীপ নিভিয়া আসিছে অস্তরবির প্রায়। 🔒ব্যাখ্যা
শুধাল বাবর ব্যগ্রকন্ঠে ভিষকব্রিন্দে ডাকি,
‘বলো বলো আজি সত্যি করিয়া, দিও নাকো মোরে ফাঁকি,
এই রোগ হতে বাদশাজাদার মুক্তি মিলিবে নাকি?”
নতমস্তকে রহিল সবাই, কহিল না কোনো কথা, 🔒ব্যাখ্যা
মুখর হইয়া উঠিল তাঁদের সে নিষ্ঠুর নীরবতা 🔒ব্যাখ্যা
শেলসম আসি বাবরের বুকে বিঁধিল কিসের ব্যাথা!
হেনকালে এক দরবেশ উঠি কহিলেন—‘সুলতান,
সবচেয়ে তব শ্রেষ্ট যে-ধন দিতে যদি পার দান,
খুশি হয়ে তবে বাঁচাবে আল্লা বাদশাজাদার প্রান।’
শুনিয়া সে কথা কহিল বাবর শঙ্কা নাহিক মানি-
‘তাই যদি হয়, প্রস্তুত আমি দিতে সেই কোরবানি, 🔒ব্যাখ্যা
সবচেয়ে মোর শ্রেষ্ঠ যে ধন জানি তাহা আমি জানি।’
এতেক বলিয়া আসন পাতিয়া নিরিবিলি গৃহতল
গভীর ধেয়ানে বসিল বাবর শান্ত অচঞ্চল, 🔒ব্যাখ্যা
প্রার্থনারত হাতদুটি তাঁর, নয়নে অশ্রু জল।
কহিল কাঁদিয়া- ‘হে দয়াল খোদা, হে রহিম রহমান,
মোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় আমারি আপন প্রাণ, 🔒ব্যাখ্যা
তাই নিয়ে প্রভু পুত্রের প্রান কর মোরে প্রতিদান।’
স্তব্ধ-নীরব গৃহতল, মুখে নাহি তার বাণী,
গভীর রজনী, সুপ্তি-মগন নিখিল বিশ্বরাণী,
আকাশে বাতাসে ধ্বনিতেছে যেন গোপন কী কানাকানি। 🔒ব্যাখ্যা
সহসা বাবর ফুকারি উঠিল—’নাহি ভয় নাহি ভয়,
প্রার্থনা মোর কবুল করেছে আল্লাহ হে দয়াময়, 🔒ব্যাখ্যা
পুত্র আমার বাঁচিয়া উঠিবে—মরিবে না নিশ্চয়।’ 🔒ব্যাখ্যা
ঘুরিতে লাগিল পুলকে বাবর পুত্রের চারিপাশ 🔒ব্যাখ্যা
নিরাশ হৃদয় সে যেন আশায় দৃপ্ত জয়োল্লাস, 🔒ব্যাখ্যা
তিমির রাতের তোরণে তোরণে ঊষার পূর্বাভাস। 🔒ব্যাখ্যা
সেইদিন হতে রোগ-লক্ষণ দেখা দিলে বাবরের,
হৃষ্টচিত্তে গ্রহন করিল শয্যা সে মরণের, 🔒ব্যাখ্যা
নতুন জীবন হুমায়ুন ধিরে বাঁচিয়া উঠিল ফের। 🔒ব্যাখ্যা
মরিল বাবর – না, না ভুল কথা, মৃত্যু কে তারে কয়? 🔒ব্যাখ্যা
মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়, 🔒ব্যাখ্যা
পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণ পরাজয়! 🔒ব্যাখ্যা