অর্ধাঙ্গী

অর্ধাঙ্গী

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন



কোন রোগীর চিকিৎসা করিতে হইলে প্রথমে রোগের অবস্থা জানা আবশ্যক। 🔒ব্যাখ্যাতা।ই অবলাজাতির উন্নতির পথ আবিষ্কার করিবার পূর্বে তাহাদের অবনতির চিত্র দেখাইতে হয়। আমি ‘স্ত্রীজাতির অবনতি' শীর্ষক প্রবন্ধে ভগিনীদিগকে জানাইয়াছি যে, আমাদের একটা রোগ আছে—দাসত্ব। সে রোগের কারণ এবং অবস্থা কতক পরিমাণে ইতঃপূর্বে বর্ণনা করা হইয়াছে। এক্ষণে আমরা দেখাইতে চেষ্টা করিব, সেই রোগ হওয়ায় আমাদের সামাজিক অবস্থা কেমন বিকৃত হইয়াছে। ঔষধ পথ্যের বিধান স্থানান্তরে দেওয়া হইবে।


এইখানে গোঁড়া পর্দাপ্রিয় ভগিনীদের অবগতির জন্য দু' একটা কথা বলিয়া রাখা আবশ্যক বোধ করি। আমি অবরোধ প্রথা 🔒ব্যাখ্যাবিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হই নাই কেহ যদি আমার ‘স্ত্রীজাতির অবনতি' প্রবন্ধে পর্দা-বিদ্বেষ ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য দেখিতে না পান, তবে আমাকে মনে করিতে হইবে আমি নিজের মনোভাব উত্তমরূপে ব্যক্ত করিতে পারি নাই, অথবা তিনি প্রবন্ধটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন নাই ৷


সে প্রবন্ধে প্রায় সমগ্র নারীজাতির উল্লেখ আছে। 🔒ব্যাখ্যাসকল সমাজের মহিলাগণই কি অবরোধে বন্দিনী থাকেন? অথবা তাঁহারা পর্দানশীন নহেন বলিয়া কি আমি তাঁহাদিগকে সম্পূর্ণ উন্নত বলিয়াছি? আমি মানসিক দাসত্বের 🔒ব্যাখ্যা(enslaved মনের) আলোচনা করিয়াছি।


কোন একটা নূতন কাজ করিতে গেলে সমাজ প্রথমত গোলযোগ উপস্থিত করে, এবং পরে সেই নূতন চালচলন সহিয়া লয়, তাহারই দৃষ্টান্তস্বরূপ পার্সি মহিলাদের পরিবর্তিত অবস্থার উল্লেখ করিয়াছি। পূর্বে তাঁহারা ছত্র ব্যবহারেরও অধিকারিণী ছিলেন না, তারপর তাঁহাদের বাড়াবাড়িটা সীমা লঙ্ঘন করিয়াছে, তবু তো পৃথিবী ধ্বংস হয় নাই🔒ব্যাখ্যা এখন পার্সি মহিলাদের পর্দা মোচন হইয়াছে সত্য, কিন্তু মানসিক দাসত্ব মোচন হইয়াছে কি? 🔒ব্যাখ্যাঅবশ্যই হয় নাই। আর ঐ যে পর্দা ছাড়িয়াছেন, তাহা দ্বারা তাঁহাদের স্বকীয় বুদ্ধি-বিবেচনার তো কোন পরিচয় পাওয়া যায় না। পার্সি পুরুষগণ কেবল অন্ধভাবে বিলাতি সভ্যতার অনুকরণ করিতে যাইয়া স্ত্রীদিগকে পর্দার বাহিরে আনিয়াছে,🔒ব্যাখ্যা ইহাতে অবলাদের জীবনীশক্তির তো কিছু পরিচয় পাওয়া যায় না— তাঁহারা যে জড়পদার্থ, সেই জড়পদার্থই আছেন।🔒ব্যাখ্যা পুরুষ যখন তাঁহাদিগকে অন্তঃপুরে রাখিতেন, তাঁহারা তখন সেইখানে থাকিতেন। আবার পুরুষ যখন তাঁহাদের 'নাকের দড়ি' ধরিয়া টানিয়া তাঁহাদিগকে মাঠে বাহির করিয়াছেন, তখনই তাঁহারা পর্দার বাহির হইয়াছেন! ইহাতে রমণীকুলের বাহাদুরি কী? ঐরূপ পর্দা-বিরোধ কখনই প্ৰশংসনীয় নহে।🔒ব্যাখ্যা


কলম্বস যখন আমেরিকা আবিষ্কার করিতে কৃতসংকল্প হন, তখন লোকে তাঁহাকে বাতুল বলে নাই কি? নারী আপন স্বত্ব-স্বামিত্ব বুঝিয়া আপনাকে নরের ন্যায় শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করিতে চাহে, ইহাও বাতুলতা বই আর কী? পুরুষগণ স্ত্রীজাতির প্রতি যতটুকু সম্মান প্রদর্শন করেন, তাহাতে আমরা সম্পূর্ণ তৃপ্ত হইতে পারি না। লোকে কালী, শীতলা প্রভৃতি রাক্ষস প্রকৃতির দেবীকে ভয় করে, পূজা করে, সত্য। কিন্তু সেইরূপ বাঘিনী, নাগিনী, সিংহী প্রভৃতি দেবীও কি ভয় ও পূজা লাভ করে না? তবেই দেখা যায় পূজাটা কে পাইতেছেন— রমণী কালী, না রাক্ষসী নৃমুণ্ডমালিনী?


নারীকে শিক্ষা দিবার জন্য গুরুলোকে সীতা দেবীকে আদর্শরূপে দেখাইয়া থাকেন। সীতা অবশ্যই পর্দানশীন ছিলেন না। তিনি রামচন্দ্রের অর্ধাঙ্গী, রাণী, প্রণয়িনী এবং সহচরী। আর রামচন্দ্র প্রেমিক, ধার্মিক — সবই। কিন্তু রাম সীতার প্রতি যে ব্যবহার করিয়াছেন, তাহাতে প্রকাশ পায় যে, একটি পুতুলের সঙ্গে কোন বালকের যে-সম্বন্ধ, সীতার সঙ্গে রামের সম্বন্ধও প্রায় 🔒ব্যাখ্যাসেইরূপ বালক ইচ্ছা করিলে পুতুলকে প্রাণপণে ভালবাসিতে পারে; পুতুল হারাইলে বিরহে অধীর হইতে পারে; পুতুলের ভাবনায় অনিদ্রায় রজনী যাপন করিতে পারে; পুতুলটা যে ব্যক্তি চুরি করিয়াছিল, তাহার প্রতি খড়গহস্ত হইতে পারে; হারানো পুতুল ফিরিয়া পাইলে আহলাদে আটখানা হইতে পারে; আবার বিনা কারণে রাগ করিয়াও পুতুলটা কাদায় ফেলিয়া দিতে পারে – কিন্তু পুতুল বালকের কিছুই করিতে পারে না, কারণ, হস্তপদ থাকা সত্ত্বেও পুত্তলিকা অচেতন পদার্থ!🔒ব্যাখ্যা বালক তাহার পুতুল স্বেচ্ছায় অনলে উৎসর্গ করিতে পারে, পুতুল পুড়িয়া গেল দেখিয়া ভূমে লুটাইয়া ধূলি-ধূসরিত হইয়া উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিতে পারে।


রামচন্দ্র ‘স্বামিত্বের’ ষোলো আনা পরিচয় দিয়াছেন!!🔒ব্যাখ্যা আর সীতা? – কেবল প্রভু রামের সহিত বনযাত্রার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়া দেখাইয়াছেন যে, তাঁহারও ইচ্ছা প্রকাশের শক্তি আছে। রাম বেচারা অবোধ বালক, সীতার অনুভব-শক্তি আছে, ইহা তিনি বুঝিতে চাহেন নাই। কেননা, বুঝিয়া কার্য করিতে গেলে স্বামিত্বটা পূর্ণমাত্রায় খাটান যাইত না;– সীতার অমন পবিত্র হৃদয়খানি অবিশ্বাসের পদাঘাতে দলিত ও চূর্ণ করিতে পারা যাইত না।🔒ব্যাখ্যা আচ্ছা, দেশ কালের নিয়মানুসারে কবির ভাষায় সুর মিলাইয়া না হয় মানিয়া লই যে, আমরা স্বামীর দাসী নহি— অর্ধাঙ্গী। আমরা তাঁহাদের গৃহে গৃহিণী, মরণে (না হয়, অন্তত তাঁহাদের চাকুরি উপলক্ষে যথাতথা ) অনুগামিনী, সুখ-দুঃখে সমভাগিনী, ছায়াতুল্য সহচরী ইত্যাদি।কিন্তু কলিযুগে আমাদের ন্যায় অর্ধাঙ্গী লইয়া পুরুষগণ কীরূপ বিকলাঙ্গ হইয়াছেন, তাহা কি কেহ একটু চিন্তাচক্ষে দেখিয়াছেন? আক্ষেপের (অথবা প্রভুদের সৌভাগ্যের) বিষয় যে, আমি চিত্রকর নহি— নতুবা এই নারীরূপ অর্ধাঙ্গ লইয়া তাঁহাদের কেমন অপরূপ মূর্তি হইয়াছে, তাহা আঁকিয়া দেখাইতাম।🔒ব্যাখ্যা


শুক্লকেশ বুদ্ধিমানগণ বলেন যে, আমাদের সাংসারিক জীবনটা দ্বিচক্র শকটের ন্যায়—এ শকটের এক চক্র পতি, অপরটি পত্নী। তাই ইংরেজি ভাষায় কথায় কথায় স্ত্রীকে অংশিনী (partner), উত্তমার্ধ (better half) ইত্যাদি বলে। জীবনের কর্তব্য অতি গুরুতর,


সহজ নহে—

“সুকঠিন গার্হস্থ্য ব্যাপার

সুশৃঙ্খলে কে পারে চালাতে?

রাজ্যশাসনের রীতিনীতি

সূক্ষ্মভাবে রয়েছে ইহাতে।”


বোধ হয় এই গার্হস্থ্য ব্যাপারটাকে মন্তকস্বরূপ কল্পনা করিয়া শাস্ত্রকারগণ পতি ও পত্নীকে তাহার অঙ্গস্বরূপ বলিয়াছেন। তবে দেখা যাউক বর্তমান যুগে সমাজের মূর্তিটা কেমন।


মনে করুন, কোন স্থানে পূর্বদিকে একটি বৃহৎ দর্পণ আছে, যাহাতে আপনি আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিতে পারেন।🔒ব্যাখ্যা আপনার দক্ষিণাঙ্গভাগ পুরুষ এবং বামাঙ্গভাগ স্ত্রী। এই দর্পণের সম্মুখে দাঁড়াইয়া দেখুন-


আপনার দক্ষিণ বাহু দীর্ঘ (ত্রিশ ইঞ্চি) এবং স্থূল, বাম বাহু দৈর্ঘ্যে চব্বিশ ইঞ্চি এবং ক্ষীণ। দক্ষিণ চরণ দৈর্ঘ্যে ১২ ইঞ্চি, বাম চরণ অতিশয় ক্ষুদ্র। দক্ষিণ স্কন্ধ উচ্চতায় পাঁচ ফিট, বাম স্কন্ধ উচ্চতায় চারি ফিট ! (তবেই মাথাটা সোজা থাকিতে পারে না, বাম দিকে ঝুঁকিয়া পড়িতেছে। কিন্তু আবার দক্ষিণ কর্ণভারে বিপরীত দিকেও একটু ঝুঁকিয়াছে!) দক্ষিণ কৰ্ণ হস্তিকর্ণের ন্যায় বৃহৎ, বাম কর্ণ রাসভকর্ণের ন্যায় দীর্ঘ! দেখুন!—ভাল করিয়া দেখুন, আপনার মূর্তিটা কেমন!! যদি এ মূর্তিটা অনেকের মনোমত না হয়, তবে দ্বিচক্র শকটের গতি দেখাই। যে শকটের এক চক্র বড় (পতি) এবং এক চক্র ছোট (পত্নী) হয়, সে শকট অধিক দূরে অগ্রসর হইতে পারে না—সে কেবল একই স্থানে (গৃহকোণেই) ঘুরিতে থাকিবে। তাই ভারতবাসী উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে পারিতেছেন না।🔒ব্যাখ্যা


সমাজের বিধি-ব্যবস্থা আমাদিগকে তাহাদের অবস্থা হইতে সম্পূর্ণ পৃথক রাখিয়াছে; তাঁহাদের সুখ-দুঃখ এক প্রকার, আমাদের সুখ-দুঃখ অন্য প্রকার। এস্থলে বাবু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নবদম্পতির প্রেমালাপ' 🔒ব্যাখ্যাকবিতার দুই চারি ছত্র উদ্ধৃত করিতে বাধ্য হইলাম-


“বর। কেন সখি কোণে কাঁদিছ বসিয়া?

কনে। পুষি মেনিটিরে ফেলিয়া এসেছি ঘরে।

বর। কী করিছ বনে কুঞ্জভবনে?

কনে। খেতেছি বসিয়া টোপা কুল। 

* * *

বর। জগৎ ছানিয়া, কী দিব আনিয়া জীবন করি ক্ষয়?

তোমা তরে সখি, বল করিব কী?

কনে। আরো কুল পাড় গোটা ছয় ৷

* * *

বর। বিরহের বেলা কেমনে কাটিবে?

কনে। দেব পুতুলের বিয়ে।”


সুতরাং দেখা যায় কন্যাকে এরূপ শিক্ষা দেওয়া হয় না, যাহাতে সে স্বামীর ছায়াতুল্যা সহচরী হইতে পারে। 🔒ব্যাখ্যাপ্রভুদের বিদ্যার গতির সীমা নাই,🔒ব্যাখ্যা স্ত্রীদের বিদ্যার দৌড় সচরাচর ‘বোধোদয়' পর্যন্ত !🔒ব্যাখ্যা


স্বামী যখন পৃথিবী হইতে সূর্য ও নক্ষত্রের দূরত্ব মাপেন, স্ত্রী তখন একটা বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ্য প্রন্থ (সেলাই করিবার জন্য) মাপেন! স্বামী যখন কল্পনা-সাহায্যে সুদূর আকাশে গ্রহনক্ষত্রমালা-বেষ্টিত সৌরজগতে বিচরণ করেন, সূর্যমণ্ডলের ঘনফল তুলাদণ্ডে ওজন করেন এবং ধূমকেতুর গতি নির্ণয় করেন, স্ত্রী তখন রন্ধনশালায় বিচরণ করেন, চাউল ডাউল ওজন করেন এবং রাঁধুনির গতি নির্ণয় করেন। বলি জ্যোতির্বেত্তা মহাশয়, আপনার পার্শ্বে আপনার সহধর্মিনী কই? বোধ হয়, গৃহিণী যদি আপনার সঙ্গে সূর্যমণ্ডলে যান, তবে তথায় পুঁহুছিবার পূর্বেই পথিমধ্যে উত্তাপে বাষ্পীভূত হইয়া যাইবেন! তবে সেখানে গৃহিণীর না যাওয়াই ভাল !!


কেহ সূত্রধর, কেহ তন্তুবায় ইত্যাদি। একজন ব্যারিস্টার ডাক্তারের সাহায্যপ্রার্থী, আবার ডাক্তারও ব্যারিস্টারের সাহায্য চাহেন। তবে ডাক্তারকে ব্যারিস্টারের স্বামী বলিব, না ব্যারিস্টার ডাক্তারের স্বামী? যদি ইহাদের কে কাহাকে 'স্বামী' বলিয়া স্বীকার না করেন, তবে শ্রীমতীগণ জীবনের চিরসঙ্গী শ্রীমানদিগকে 'স্বামী' ভাবিবেন কেন?


আমরা উত্তমার্ধ (better halves) তাঁহারা নিকৃষ্টার্ব (worse halves), আমরা অর্ধাঙ্গী, তাঁহারা অর্ধাঙ্গ অবলার হাতেও সমাজের জীবন মরণের কাঠি আছে🔒ব্যাখ্যা, যেহেতু “না জাগিলে সব ভারত-ললনা” এ ভারত আর জাগিতে পারিবে না। প্রভুদের ভীরুতা কিংবা তেজস্বিতা জননীর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে কেবল শারীরিক বলের দোহাই দিয়া অদূরদর্শী ভ্রাতৃ মহোদয়গণ যেন শ্রেষ্ঠত্বের দাবি না করেন।


আমরা পুরুষের ন্যায় সুশিক্ষা ও অনুশীলনের সম্যক সুবিধা না পাওয়ায় পশ্চাতে পড়িয়া আছি। সমান সুবিধা পাইলে আমরাও কি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করিতে পারিতাম না? আশৈশব আত্মনিন্দা শুনিতেছি, তাই এখন আমরা অন্ধভাবে পুরুষের শ্রেষ্ঠতা স্বীকার করি এবং নিজেকে অতি তুচ্ছ মনে করি। অনেক সময় “হাজার হোক ব্যাটা ছেলে!” বলিয়া ব্যাটা ছেলেদের দোষ ক্ষমা করিয়া অন্যায় প্রশংসা করি। এই তো ভুল।


আমি ভগিনীদের কল্যাণ কামনা করি। তাঁহাদের ধর্মবন্ধন বা সমাজবন্ধন ছিন্ন করিয়া তাঁহাদিগকে একটা উন্মুক্ত প্রান্তরে বাহির করিতে চাহি না। মানসিক উন্নতি করিতে হইলে হিন্দুকে হিন্দুত্ব বা খ্রিষ্টানকে খ্রিষ্টানি ছাড়িতে হইবে এমন কোন কথা নাই। আপন আপন সম্প্রদায়ের পার্থক্য রক্ষা করিয়াও মনটাকে স্বাধীনতা দেওয়া যায়। আমরা যে কেবল উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে অবনত হইয়াছি, তাই বুঝিতে ও বুঝাইতে চাই।

অনেকে হয়তো ভয় পাইয়াছেন যে, বোধ হয় একটা পত্নী-বিদ্রোহের আয়োজন করা হইতেছে। অথবা ললনাগণ দলে দলে উপস্থিত হইয়া বিপক্ষকে রাজকীয় কার্যক্ষেত্র হইতে তাড়াইয়া দিয়া সেই পদগুলি অধিকার করিবেন — শামলা, চোগা, আইন-কানুনের পাঁজি-পুঁথি লুঠিয়া লইবেন! অথবা সদলবলে কৃষিক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া কৃষকগুলিকে তাড়াইয়া দিয়া তাহাদের শস্যক্ষেত্র দখল করিবেন, হাল গরু কাড়িয়া লইবেন, তবে তাঁহাদের অভয় দিয়া বলিতে হইবে– নিশ্চিন্ত থাকুন।


পুরুষগণ আমাদিগকে সুশিক্ষা হইতে পশ্চাদপদ রাখিয়াছেন বলিয়া আমরা অকর্মণ্য হইয়া গিয়াছি। ভারতে ভিক্ষু ও ধনবান—এই দুই দল লোক অলস; এবং ভদ্রমহিলার দল কর্তব্য অপেক্ষা অল্প কাজ করে। আমাদের আরাম-প্রিয়তা খুব বাড়িয়াছে। আমাদের হস্ত, মন, পদ, চক্ষু ইত্যাদির সদ্ব্যবহার করা হয় না। দশজন রমণীরত্ন একত্র হইলে ইহার উহার – বিশেষত আপন আপন অর্ধাঙ্গের নিন্দা কিংবা প্রশংসা করিয়া বাকপটুতা দেখায়। আবশ্যক হইলে কোন্দলও চলে।🔒ব্যাখ্যা আশা করি এখন 'স্বামী'র স্থলে 'অর্ধাঙ্গ' শব্দ প্রচলিত হইবে।🔒ব্যাখ্যা

উত্তর : রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

উত্তর : অন্তঃপুরবাসিনী হিসেবে জীবন শুরু করেন।

উত্তর : সামাজিক সীমাবদ্ধতার বেড়াজাল।

উত্তর : রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

উত্তর : অবরোধ বাসিনীদের।


উত্তর : সমাজে নারীর অধঃপতিত দশা থেকে মুক্তির জন্য প্রথমে তাদের হীনদশার স্বরূপ উন্মোচন জরুরি- এই প্রসঙ্গটিই আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।
কোনো রোগীর চিকিৎসা করার আগে ডাক্তার রোগীর কাছ থেকে রোগের অবস্থা জেনে নেন। কারণ রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে ভুল চিকিৎসার ফলে রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নারীদের মুক্তির উপায় নির্দেশ করার আগে তাই ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের লেখিকা সমাজে তাদের প্রকৃত অবস্থান অনুধাবনের গুরুত্ব প্রকাশ করেছেন এই উক্তিটির মাধ্যমে।


উত্তর : ‘অবরোধ প্রথা’ বলতে মেয়েদের লোকচক্ষুর আড়ালে অন্তঃপুরে আটকে রাখার নিয়মকে বোঝায়।
সমাজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীরা সংসারের গণ্ডিতেই বাঁধা পড়ে থাকে। নারীর স্থান শুধু গৃহে এবং গৃহকর্মই তার জীবনের উদ্দেশ্য, এমন যুক্তি দেখিয়ে সংকীর্ণমনারা নারীকে গৃহে বন্দি থাকতে বাধ্য করে। সুশিক্ষার অভাবে মানসিক দাসত্বের হাত থেকেও তারা মুক্তি পায় না। নারীকে শুধু অন্তঃপুরের শোভা বিবেচনা করে তাদের গৃহকোণে বন্দি করেছে কূপমণ্ডূকেরা। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর এ বন্দিদশাই ‘অবরোধ প্রথা’বলে পরিচিত।


উত্তর : ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে লেখক মানসিক দাসত্ব বলতে মানসিকভাবে নারীদের পরাধীন জীবনযাপন এবং প্রতিবাদ না করে পুরুষের অধীনেই থাকাকে গৌরবজনক মনে করাকে বুঝিয়েছেন। 
‘অর্ধাঙ্গী’প্রবন্ধে নারীর সমস্যার স্বরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নারীর মানসিক দাসত্ব, অশিক্ষা ও অন্ধবিশ্বাসকে। মানসিক দাসত্বের কারণে যুগ যুগ ধরে নারীর অন্তর-বাহির, হৃদয়-মস্তিষ্ক সবই দাসী হয়ে পড়েছে। শিক্ষার অভাবে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় পেছনে পড়ে থাকে তাই অনেকে স্বাধীন উপার্জনক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে স্বামীর দাসীই মনে করে।


উত্তর : এ পর্দা প্রথার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করতেই উল্লিখিত উক্তিটি করেন ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের রচয়িতা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।
‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক দেশ ও জাতির অগ্রগতি ও কল্যাণে নারীকে পর্দার বাইরে এসে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পার্সি মহিলাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পর্দাপ্রথার বিরোধিতায় পার্সি সমাজে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছিল, কিন্তু এজন্য পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়নি।


উত্তর : বিলাতি সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে পার্সি পুরুষগণ তাদের স্ত্রীদের পর্দার বাইরে আনলেও মানসিক দাসত্ব হতে মুক্ত হতে পারেনি নারীরা।
নারীরা মুক্তি ও পর্দাপ্রথা সম্পর্কে নিজের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বেগম রোকেয়া ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে পার্সি নারীদের পর্দামুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন। পার্সি নারীরা তাদের পুরুষদের সহায়তায় পর্দার বন্ধন হতে মুক্ত হলেও তাদের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। অন্তঃপুরের সেই পুরোনো অবস্থানেই থাকার ফলে তাদের মাঝে জীবনীশক্তির কোনো প্রকাশ দেখা যায়নি। অর্থাৎ পর্দাপ্রথার বিলোপে তাদের মানসিক সত্তার কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি।



Score Board

১) বৃষ্টিকণা হয়ে সাগরে পতিত হয়। উপরের বাক্যগুলো দ্বারা বোঝানো হয়েছে-


২) ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে বর্ণিত ‘নাকের দড়ি’ শব্দের অর্থ কী?

৩) ‘অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধে ‘তরঙ্গিনী কী?

৪) এদেশে নারীজাগরণের পথিকৃৎ কে?

৫) ‘ভগিনীদিগকে জানাইয়াছি যে, আমাদের একটা রোগ আছে- `দাসত্ব’- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন কোন রচনার মাধ্যমে এটি জানিয়েছেন?

Score Board

উত্তর :