মাসি-পিসি

মাসি-পিসি

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়


লেখক পরিচিতি:

নাম : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

পিতৃপ্রদত্ত নাম : প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (ডাক নাম-মানিক)।

পিতা : হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়।

মাতা : নীরদাসুন্দরী দেবী।

জন্ম : ১৯শে মে, ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দ।

জন্মস্থান : দুমকা শহর, সাঁওতাল পরগনা, বিহার।

পৈতৃক নিবাস : বিক্রমপুর ঢাকা।

শিক্ষা : বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন।

সাহিত্যকর্ম : উপন্যাস (৪০ টি): জননী, দিবারাত্রির কাব্য, পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মানদীর মাঝি, চিহ্ন;

ছোট গল্প : অতসীমামী (প্রথম গল্প), প্রাগৈতিহাসিক, সরীসৃপ, সমুদ্রের স্বাদ, হলুদ পোড়া, আজ কাল পরশুর গল্প, ছোট বকুলপুরের যাত্রী, কুষ্ঠরোগীর বৌ, টিকটিকি, হারানোর নাতজামাই।

মৃত্যু : ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দ, কলকাতা।



শেষবেলায় খালে এখন পুরো ভাটা।জল নেমে গিয়ে কাদা আর ভাঙা ইটপাটকেল ও ওজনে ভারি আবর্জনা বেরিয়ে পড়েছে।কংক্রিটের পুলের কাছে খালের ধারে লাগানো সালতি থেকে খড় তোলা হচ্ছে পাড়ে। পাশাপাশি জোড়া লাগানো দুটো বড় সালতি বোঝাই আঁটিবাঁধা খড় তিনজনের মাথায় চড়ে গিয়ে জমা হচ্ছে ওপরের মস্ত গাদায়। ওঠানামার পথে ওরা খড় ফেলে নিয়েছে কাদায়। 🔒ব্যাখ্যা সালতি থেকে ওদের মাথায় খড় তুলে দিচ্ছে দুজন। একজনের বয়স হয়েছে, আধপাকা চুল, রোগা শরীর। অন্যজন মাঝবয়সী, বেঁটে, জোয়ান, মাথায় ঠাসা কদমছাঁটা রুক্ষ চুল।

পুলের তলা দিয়ে ভাটার টান ঠেলে এগিয়ে এল সরু লম্বা আরেকটা সালতি, দু-হাত চওড়া হয়নি না হয়। দু-মাথায় দাঁড়িয়ে দুজন প্রৌঢ়া বিধবা লগি ঠেলছে, ময়লা মোটা থানের আঁচল দুজনেরই কোমরে বাঁধা। মাঝখানে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে অল্পবয়সী একটি বৌ। গায়ে জামা আছে, নকশা পাড়ের সস্তা সাদা শাড়ি। আঁটসাঁট থমথমে গড়ন, গোলগাল মুখ।

“মাসি-পিসি ফিরছে কৈলেশ”, বুড়ো লোকটি বলল।

কৈলাশ বাহকের মাথায় খড় চাপাতে ব্যস্ত ছিল। চটপটশেষ আঁটিটা চাপিয়ে দিয়ে সে যখন ফিরল, মাসি-পিসির সালতি দু-হাতের মধ্যে এসে গেছে। 

“ও মাসি, ওগো পিসি, রাখো রাখো। খপর আছে শুনে যাও।”

সামনের দিকে লগি পুঁতে মাসি-পিসি সালতির গতি ঠেকায়, আহ্লাদি সিঁথির সিঁদুর পর্যন্ত ঘোমটা টেনে দেয়। সামনে থেকে মাসি বলে বিরক্তির সঙ্গে, “বেলা আর নেই কৈলেশ।” পেছনে থেকে পিসি বলে, “অনেকটা পথ যেতে হবে কৈলেশ।”

মাসি-পিসির গলা ঝরঝরে, আওয়াজ একটু মোটা, একটু ঝংকার আছে। কৈলাশের খবরটা গোপন, দুজনে লম্বা লম্বা সালতির দু-মাথায় থাকলে সম্ভব নয় চুপে চুপে বলা। মাসি বড় সালতির খড় ঠেকানো বাঁশটা চেপে ধরে থাকে, পিসি লগি হাতে নিয়েই পিছন থেকে এগিয়ে আসে সামনের দিকে। আহ্লাদি যেখানে ছিল সেখানে বসেই কান পেতে রাখে। কথাবার্তা সে সব শুনতে পায় সহজেই।কারণ, সে যাতে শুনতে পায় এমনি করেই বলে কৈলাশ। 🔒ব্যাখ্যা

“বলি মাসি, তোমাকেও বলি পিসি”, কৈলাশ শুরু করে, “মেয়াকে একদম শ্বশুরঘর পাঠাবে না মনে করেছ যদি, সে কেমন ধারা কথা হয়? এত বড় সোমত্ত মেয়া, তোমরা দুটি মেয়েলোক বাদে ঘরে একটা পুরুষমানুষ নেই, বিপদ-আপদ ঘটে যদি তো—” 

মাসি বলে,“খুনসুটি রাখো দিকি কৈলেশ তোমার, মোদ্দাকথাটা কী তাই কও, বললে না যে খপর আছে, কী?”

পিসি বলে, “খপরটা কী তাই কও। বেলা বেশি নেই কৈলেশ।”

মাসি-পিসির সাথে পারা যাবে না জানে কৈলাশ। অগত্যা ফেনিয়ে রসিয়ে বলবার বদলে সে সোজা কথায় আসে, “জগুর সাথে দেখা হলো কাল। খড় তুলে দিতে সাঁঝ হয়ে গেল, তা দোকানে এটটু-মানে আর কি চা খেতে গেছি চায়ের দোকানে, জগুর সাথে দেখা।”

মাসি বলে, “চায়ের দোকান না কিসের দোকান তা বুঝিছি কৈলেশ, তা কথাটা কী?”

পিসি বলে, “সেথা ছাড়া আর ওকে কোথা দেখবে। হাতে দুটো পয়সা এলে তোমারও স্বভাব বিগড়ে যায় কৈলেশ। 🔒ব্যাখ্যা তা, কী বললে জগু?”

কৈলাশ ফাঁপরে পড়ে আড়চোখে চায় আহ্লাদির দিকে, 🔒ব্যাখ্যা হঠাৎ বেমক্কা জোরের সঙ্গে প্রতিবাদ করে যে, তা নয়, পুলের কাছেই চায়ের দোকান, মাসি-পিসি গিয়ে জিজ্ঞাসা করুক না সেখানে। তারপরেই জোর হারিয়ে বলে, “ওসব একরকম ছেড়ে দিয়েছে জগু।লোকটা কেমন বদলে গেছে মাসি, সত্যি কথা পিসি, জগু আর সেই জগু নেই। 🔒ব্যাখ্যা বৌকে নিতে চায় এখন। তোমরা নাকি পণ করেছ মেয়া পাঠাবে না, 🔒ব্যাখ্যা তাতেই চটে আছে৷ সম্মান তো আছে একটা মানুষের, কবার নিতে এল তা মেয়া দিলে না, তাই তো নিতে আসে না আর। আমি বলি কী, নিজেরা যেচে এবার পাঠিয়ে দেও মেয়াকে।”

মাসি বলে,“পেট শুকিয়ে লাথি ঝাঁটা খেতে? কলকেপোড়া ছ্যাকা খেতে? খুঁটির সাথে দড়িবাঁধা হয়ে থাকতে দিনভর রাতভর?”

পিসি-বলে, “মেয়া না পাঠাই, জামাই এলে রাখিনি জামাই-আদরে তাকে? ছাগলটা বেচে দিয়ে খাওয়াইনি ভালোমন্দ দশটা জিনিস?”

মাসি বলে, “ফের আসুক, আদরে রাখব যদ্দিন থাকে। 🔒ব্যাখ্যা বজ্জাত হোক, খুনে হোক, জামাই তো। 🔒ব্যাখ্যা ঘরে এলে খাতির না করব কেন? তবে মেয়া মোরা পাঠাব না।”

পিসি বলে,“নে কৈলেশ, মরতে মোরা মেয়াকে পাঠাব না।”

বুড়ো রহমান একা খড় চাপিয়ে যায় বাহকদের মাথায়, চুপচাপ শুনে যায় এদের কথা। ছলছল চোখে একবার তাকায় আহ্লাদির দিকে। 🔒ব্যাখ্যা তার মেয়েটা শ্বশুরবাড়িতে মরেছে অল্পদিন আগে। কিছুতে যেতে চায়নি মেয়েটা, দাপাদাপি করে কেঁদেছে যাওয়া ঠেকাতে, ছোট অবুঝ মেয়ে। তার ভালোর জন্যেই তাকে জোর-জবরদস্তি করে পাঠিয়ে দিয়েছিল। আহ্লাদির সঙ্গে তার চেহারায় কোনো মিল নাই। বয়সে সে ছিল অনেক ছোট, চেহারা ছিল অনেক বেশি রোগা। তবু আহ্লাদির ফ্যাকাশে মুখে তারই মুখের ছাপ রহমান দেখতে পায়, 🔒ব্যাখ্যা খড়ের আঁটি তুলে দেবার ফাঁকে ফাঁকে যখনই সে তাকায় আহ্লাদির দিকে।

কৈলাশ বলে,“তবে আসল কথাটা বলি। জগু মোকে বললে, এবার সে মামলা করবে বৌ নেবার জন্য। 🔒ব্যাখ্যা তার বিয়ে করা বৌকে তোমরা আটকে রেখেছ বদ মতলবে। মামলা করলে বিপদে পড়বে। সোয়ামি নিতে চাইলে বৌকে আটকে রাখার আইন নেই।জেল হয়ে যাবে তোমাদের।আর যেমন বুঝলাম, মামলা জগু করবেই আজকালের মধ্যে। মরবে তোমরা জান মাসি, জান পিসি, মারা পড়বে তোমরা একেবারে।” 🔒ব্যাখ্যা

আহ্লাদি একটা শব্দ করে, অস্ফুট আর্তনাদের মতো। 🔒ব্যাখ্যা মাসি ও পিসি মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে কয়েক বার। মনে হয়,মনে তাদের একই কথা উদয় হয়েছে, চোখে চোখে চেয়ে সেটা শুধু জানাজানি করে নিল তারা।

মাসি বলল,“জেলে নয় গেলাম কৈলেশ, কিন্তু মেয়া যদি সোয়ামির কাছে না যেতে চায় খুন হবার ভয়ে?”

বলে মাসি বড় সালতির খড় ঠেকানো বাঁশ ছেড়ে দিয়ে লগি গুঁজে দেয় কাদায়, পিসি তরতর করে পিছনে গিয়ে লগি কাদায় গুঁজে হেলে পড়ে, শরীরের ভারে সরু লম্বা সালতিটাকে এগিয়ে দেয় ভাটার টানের বিপক্ষে। বেলা একরকম নেই। ছায়া নামছে চারদিকে।

শকুনরা উড়ে এসে বসছে পাতাশূন্য শুকনো গাছটায়। একটা শকুন উড়ে গেল এ আশ্রয় ছেড়ে অল্প দূরে আরেকটা গাছের দিকে।ডাল ছেড়ে উড়তে আর নতুন ডালে গিয়ে বসতে কী তার পাখা ঝাপটানি! 🔒ব্যাখ্যা

মায়ের বোন মাসি আর বাপের বোন পিসি ছাড়া বাপের ঘরের কেউ নেই আহ্লাদির। দুর্ভিক্ষ কোনোমতে ঠেকিয়েছিল তার বাপ।মহামারীর একটা রোগে, কলেরায়, সে, তার বৌ আর ছেলেটা শেষ হয়ে গেল। মাসি-পিসি তার আশ্রয়ে মাথা গুঁজে আছে অনেক দিন, দূর ছাই সয়ে আর কুড়িয়ে পেতে খেয়ে নিরাশ্রয় বিধবারা যেমন থাকে। নিজেদের ভরণপোষণের কিছু তারা রোজগার করত ধান ভেনে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বেচে, হোগলা গেঁথে, শাকপাতা ফলমূল ডাঁটা কুড়িয়ে, এটা ওটা জোগাড় করে। শাকপাতা খুদকুঁড়ো ভোজন, বছরে দুজোড়া থান পরন-খরচ তো এই। 🔒ব্যাখ্যা বছরের পর বছর ধরে কিছু পুঁজি পর্যন্ত হয়েছিল দুজনের, রূপোর টাকা আধুলি সিকি। দুর্ভিক্ষের সময়টা বাঁচবার জন্য তাদের লড়তে হয়েছে সাংঘাতিকভাবে, আহ্লাদির বাপ তাদের থাকাটা শুধু বরাদ্দ রেখে খাওয়া ছাঁটাই করে দিয়েছিল একেবারে পুরোপুরি। তারও তখন বিষম অবস্থা।নিজেরা বাঁচে কি বাঁচে না, তার ওপর জগুর লাথির চোটে মরমর মেয়ে এসে হাজির।  সে কোনদিক সামলাবে? মাসি-পিসির সেবা-যত্নেই আহ্লাদি অবশ্য সেবা বেঁচে গিয়েছিল, 🔒ব্যাখ্যা তার বাপ-মাও সেটা স্বীকার করেছে। কিন্তু কী করবে, গলা কেটে রক্ত দিয়ে সে ধার শোধ করা যদি-বা সম্ভব, অন্ন দেওয়ার ক্ষমতা কোথায় পাবে। 🔒ব্যাখ্যা পাল্লা দিয়ে মাসি-পিসি আহ্লাদির জীবনের জন্য লড়েছিল, পেল যদি তো খেয়ে, না-পেল যদি তো না-খেয়েই। 🔒ব্যাখ্যা অবস্থা যখন তাদের অতি কাহিল, চারদিকে না-খেয়ে মরা শুরু করেছে মানুষ, মরণ ঠেকাতেই ফুরিয়ে আসছে তাদের জীবনীশক্তি; 🔒ব্যাখ্যা একদিন মাসি বলে পিসিকে, “একটা কাজ করবি বেয়াইন? তাতেও তোরও দুটো পয়সা আসে, মোরও দুটো পয়সা আসে।”

শহরের বাজারে তরিতরকারি ফলমূলের দাম চড়া। 🔒ব্যাখ্যা গাঁ থেকে কিনে যদি বাজারে গিয়ে বেচে আসে তারা, কিছু রোজগার হবে। একা মাসির ভরসা হয় না সালতি বেয়ে অতদূর যেতে, যাওয়া-আসাও একার দ্বারা হবে না তার।পিসি রাজি হয়েছিল। এতে কিছু হবে কি না হবে ভগবান জানে, কিন্তু যদি হয় তবে রোজগারের একটা নতুন উপায় মাসি পেয়ে যাবে আর সে পাবে না, তাকে না পেলে অন্য কারো সাথে হয়ত মাসি বন্দোবস্ত করবে, তা কি পারে পিসি ঘটতে দিতে।

সেই থেকে শুরু হয় গেরস্তের বাড়তি শাকসবজি ফলমূল নিয়ে মাসি-পিসির সালতি বেয়ে শহরের বাজারে গিয়ে বেচে আসা। গাঁয়ের বাবু বাসিন্দারাও নগদ পয়সার জন্য বাগানের জিনিস বেচতে দেয়।

মাসি-পিসির ভাব ছিল আগেও। অবস্থা এক, বয়স সমান, একঘরে বাস, পরস্পরের কাছে ছাড়া সুখ-দুঃখের কথা তারা কাকেই-বা বলবে, কেই-বা শুনবে। তবে হিংসা দ্বেষ রেষারেষিও ছিল যথেষ্ট, কোন্দলও বেধে যেত কারণে অকারণে। পিসি এ বাড়ির মেয়ে, এ তার বাপের বাড়ি। মাসি উড়ে এসে জুড়ে বসেছে এখানে। তাই মাসির উপর পিসির একটা অবজ্ঞা অবহেলার ভাব ছিল। 🔒ব্যাখ্যা এই নিয়ে পিসির অহংকার আর খোঁচাই সবচেয়ে অসহ্য লাগত মাসির। ধীর শান্ত দুঃখী মানুষ মনে হতো এমনি তাদের, কিন্তু ঝগড়া বাধলে অবাক হয়ে যেতে হতো তাদের দেখে। সে কী রাগ, সে কী তেজ, সে কী গোঁ! 🔒ব্যাখ্যা মনে হতো এই বুঝি কামড়ে দেয় একে অপরকে, এই বুঝি কাটে বঁটি দিয়ে।

শাকসবজি বেচে বাঁচবার চেষ্টায় একসঙ্গে কোমর বেঁধে নেমে পড়ামাত্র সব বিরোধ সব পার্থক্য উড়ে গিয়ে দুজনের হয়ে গেল একমন, একপ্রাণ। 🔒ব্যাখ্যা সে মিল জমজমাট হয়ে উঠল আহ্লাদির ভার ঘাড়ে পড়ায়। নিজের পেট ভরানো শুধু নয়, নিজেদের বেঁচে থাকা শুধু নয়, তাদের দুজনেরই এখন আহ্লাদি আছে। 🔒ব্যাখ্যা খাইয়ে পরিয়ে যত্নে রাখতে হবে তাকে, শ্বশুরঘরের কবল থেকে বাঁচাতে হবে তাকে, গাঁয়ের বজ্জাতদের নজর থেকে সামলে রাখতে হবে, কত দায়িত্ব তাদের, কত কাজ, কত ভাবনা। 🔒ব্যাখ্যা

বাপ মা বেঁচে থাকলে আহ্লাদিকে হয়ত শ্বশুরবাড়ি যেতে হতো, মাসি-পিসিও বিশেষ কিছু বলতো কি না সন্দেহ। কিন্তু তারা তো নেই, এখন মাসি-পিসিরই সব দায়িত্ব। বিনা পরামর্শে আপনা থেকেই তাদের ঠিক হয়েছিল, আহ্লাদিকে পাঠানো হবে না। 🔒ব্যাখ্যা আহ্লাদিকে কোথাও পাঠানোর কথা তারা ভাবতেও পারে না। বিশেষ করে ওই খুনেদের কাছে কখনো মেয়ে তারা পাঠাতে পারে, যাবার কথা ভাবলেই মেয়ে যখন আতঙ্কে পাঁশুটে মেরে যায়?

বাপের ঘরদুয়ার জমিজমাটুকু আহ্লাদিকে বর্তেছে, জগুর বৌ নেবার আগ্রহও খুবই স্পষ্ট। সামান্যই ছিল তার বাপের, তারও সিকিমতো আছে মোটে, বাকি গেছে গোকুলের কবলে। তবু মুফতে যা পাওয়া যায় তাতেই জগুর প্রবল লোভ। 🔒ব্যাখ্যা

খালি ঘরে আহ্লাদিকে রেখে কোথাও যাবার সাহস তাদের হয় না। 🔒ব্যাখ্যা দুজনে মিলে যদি যেতে হয় কোথাও আহ্লাদিকে তারা সঙ্গে নিয়ে যায়।

মাসি বলে,‘ডরাস্নি আহ্লাদি। ভাঁওতা দিয়ে আমাদের দমাবার ফিকির সব। 🔒ব্যাখ্যা নয় তো কৈলেশকে দিয়ে ওসব কথা বলায় মোদের?’

পিসি বলে ‘দুদিন বাদে ফের আসবে দেখিস জামাই। তখন শুধোলে বলবে, কই না, আমি তো ওসব কিছু বলি নি কৈলেশকে।’

মাসি বলে, ‘চার মাসে পড়লি, আর কটা দিন বা। মা-মাসির কাছেই রইতে হয় এ সময়টা, জামাই এলে বুঝিয়ে বলব।’ পিসি বলে, ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়, 🔒ব্যাখ্যা জানিস আহ্লাদি। তোর পিসে ছিল জগুর মতো। খোকাটা কোলে আসতে কী হয়ে গেল সেই মানুষ। চুপি চুপি এসে এটা ওটা খাওয়ায়, উঠতে বলি তো ওঠে, বসতে বলি তো বসে'।

মাসি বলে, ‘তোর মেসো ঠিক ছিল, শাউড়ি ননদ ছিল বাঘ। উঠতে বসতে কী ছ্যাচা খেয়েছি ভাবলে বুক কাঁপে। কিন্তু জানিস আহ্লাদি, মেয়েটা যেই কোলে এল শাউড়ি ননদ যেন মোকে মাথায় করে রাখলে বাঁচে।’

পিসি বলে,‘তুইও যাবি, সোয়ামির ঘর করবি। ডরানি,ডর কিসের?’ 🔒ব্যাখ্যা

বাড়ি ফিরে দীপ জ্বেলে মাসি-পিসি রান্নাবান্না সারতে লেগে যায়। বাইরে দিন কাটলেও আহ্লাদির পরিশ্রম কিছু হয়নি, শুয়ে বসেই দিন কেটেছে। তবু মাসি-পিসির কথায় সে একটু শোয়। শরীর নয়, মনটা তার কেমন করছে। নিজেকে তার ছ্যাচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো লাগে। 🔒ব্যাখ্যা মাসি-পিসির আড়ালে থেকেও সে টের পায় কীভাবে মানুষের পর মানুষ তাকাচ্ছে তার দিকে, কতজন কতভাবে মাসি-পিসির সঙ্গে আলাপ জমাচ্ছে তরিতরকারির মতো তাকেও কেনা যায় কি না যাচাই করবার জন্য। গাঁয়েরও কতজন তার কত রকমের দর দিয়েছে মাসি-পিসির কাছে। 🔒ব্যাখ্যা মাসি-পিসিকে চিনে তারা অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে আজকাল, কিন্তু গোকুল হাল ছাড়েনি। মাসি-পিসিকে পাগল করে তুলেছে গোকুল। মায়ের বাড়া তার এই মাসি-পিসি, কী দুর্ভোগ তাদের তার জন্য। মাসি-পিসিকে এত যন্ত্রণা দেওয়ার চেয়ে সে নয় শ্বশুরঘরের লাঞ্ছনা সইত, জগুর লাথি খেত। ঈষৎ তন্দ্রার ঘোরে শিউরে ওঠে আহ্লাদি। 🔒ব্যাখ্যা একপাশে মাসি আর একপাশে পিসিকে না নিয়ে শুলে কি চলবে তার কোনোদিন?

রান্না সেরে খাওয়ার আয়োজন করছে মাসি-পিসি, একেবারে ভাতটাত বেড়ে আহ্লাদিকে ডাকবে। ভাগাভাগি কাজ তাদের এমন সহজ হয়ে গেছে যে বলাবলির দরকার তাদের হয় না, দুজনে মিলে কাজ করে যেন একজনে করছে। এবার ব্যঞ্জনে নুন দেবে এ কথা বলতে হয় না পিসিকে, ঠিক সময়ে নুনের পাত্র সে এগিয়ে দেয় মাসির কাছে। বলাবলি করছে তারা আহ্লাদির কথা, আহ্লাদির সুখদুঃখ, আহ্লাদির সমস্যা, আহ্লাদির ভবিষ্যৎ। জামাই যদি আসে, একটি কড়া কথা তাকে বলা হবে না, এতটুকু খোঁচা দেওয়া হবে না। উপদেশ দিতে গেলে চটবে জামাই, পুরুষমানুষ তো যতই হোক, এটা করা তার উচিত নয়, এসব কিছু বলা হবে না তাকে। জামাই এসেছে তাই আনন্দ রাখবার যেন ঠাঁই নেই এই ভাব দেখাবে মাসি-পিসি- আহ্লাদিকে শিখিয়ে দিতে হবে সোয়ামি এসেছে বলে যেন আহ্লাদে গদগদ হবার ভাব দেখায়। যে কদিন থাকে জামাই, সে যেন অনুভব করে, সে-ই এখানকার কর্তা, সে-ই সর্বেসর্বা। 🔒ব্যাখ্যা

বাইরে থেকে হাঁক আসে কানাই চৌকিদারের। মাসি-পিসি পরস্পরের মুখের দিকে তাকায়, জোরে নিঃশ্বাস পড়ে দুজনের। সারাটা দিন গেছে লড়ে আর লড়ে। 🔒ব্যাখ্যা সরকারবাবুর সঙ্গে বাজারের তোলা নিয়ে ঝগড়া করতে অর্ধেক জীবন বেরিয়ে গেছে দু-জনের।এখন এল চৌকিদার কানাই। হাঙ্গামা না আসে রাত্রে, গাঁয়ে লোক যখন ঘুমোচ্ছে।

রসুই চালায় ঝাঁপ এঁটে মাসি-পিসি বাইরে যায়। শুক্লপক্ষের একাদশীর উপোস করেছে তারা দুজনে গতকাল আজ দ্বাদশী, জ্যোৎস্না বেশ উজ্জ্বল। কানাইয়ের সাথে গোকুলের যে তিনজন পেয়াদা 🔒ব্যাখ্যা এসেছে  তাদের মাসি-পিসি চিনতে পারে, মাথায় লাল পাগড়ি-আঁটা লোকটা তাদের অচেনা।

কানাই বলে, ‘কাছারিবাড়ি যেতে হবে একবার।’

মাসি বলে, ‘এত রাতে?’

পিসি বলে, ‘মরণ নেই?’

কানাই বলে, ‘দারোগাবাবু এসে বসে আছেন বাবুর সাথে। যেতে একবার হবেগো দিদিঠাকরুনরা। বেঁধে নিয়ে যাবার হুকুম আছে।’

মাসি-পিসি মুখে মুখে তাকায়। পথের পাশে ডোবার ধারে কাঁঠাল গাছের ছায়ায় তিন-চারজন ঘুপটি মেরে আছে স্পষ্টই দেখতে পেয়েছে মাসি-পিসি। ওরা যে গাঁয়ের গুন্ডা সাধু বৈদ্য ওসমানেরা তাতে সন্দেহ নেই, বৈদ্যের ফেটি-বাঁধা বাবরি চুলওয়ালা মাথাটায় পাতার ফাঁকে জ্যোৎস্না পড়েছে। তারা যাবে কাছারিতে কানাই আর পেয়াদা কনস্টেবলের সঙ্গে। ওরা এসে আহ্লাদিকে নিয়ে যাবে। 🔒ব্যাখ্যা

মাসি বলে,‘মোদের একজন গেলে হবে না কানাই?’

পিসি বলে,‘আমি যাই চলো?’

কর্তা ডেকেছেন দুজনকে।

মাসি-পিসি দুজনেই আবার তাকায় মুখে মুখে।

মাসি বলে, ‘কাপড়টা ছেড়ে আসি কানাই।’

পিসি বলে, ‘ হাত ধুয়ে আসি,একদণ্ড লাগবে না।’

তাড়াতাড়িই ফিরে আসে তারা। মাসি নিয়ে আসে বঁটিটা হাতে করে, পিসির হাতে দেখা যায় রামদার মতো মস্ত একটা কাটারি । 🔒ব্যাখ্যা

মাসি বলে, ‘কানাই,কত্তাকে বোলো, মেয়েনোকের এত রাতে কাছারিবাড়ি যেতে নজ্জা করে। 🔒ব্যাখ্যা কাল সকালে যাব।’

পিসি বলে, ‘এত রাতে মেয়েনোককে কাছারিবাড়ি ডাকতে কত্তার নজ্জা করে না কানাই?’ 

কানাই ফুঁসে ওঠে, ‘না যদি যাও ঠাকরুনরা ভালোয় ভালোয়, ধরে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাবার হুকুম আছে কিন্তু বলে রাখলাম।’

মাসি বঁটিটা বাগিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলে, ‘বটে?ধরে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাবে? এসো। কে এগিয়ে আসবে এসো। বঁটির এক কোপে গলা ফাঁক করে দেব।’

পিসি বলে, ‘আয় না বজ্জাত হারামজাদারা, এগিয়ে আয় না? কাটারির কোপে গলা কাটি দু-একটার।’

দু-পা এগোয় তারা দ্বিধাভরে। মাসি-পিসির মধ্যে ভয়ের লেশটুকু না দেখে সত্যিই তারা খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছে। 🔒ব্যাখ্যা মারাত্মক ভঙ্গিতে বঁটি আর দা উঁচু হয় মাসি-পিসির।

মাসি বলে, ‘শোনো কানাই, এ কিন্তু এর্কি নয় মোটে। 🔒ব্যাখ্যা তোমাদের সাথে মোরা মেয়েনোক পারব না জানি কিন্তু দুটো-একটাকে মারব জখম করব ঠিক।’ 🔒ব্যাখ্যা

পিসি বলে, ‘মোরা নয় মরব।’ 🔒ব্যাখ্যা

তারপর বিনা পরামর্শেই মাসি-পিসি হঠাৎ গলা ছেড়ে দেয়। 🔒ব্যাখ্যা প্রথমে শুরু করে মাসি, তারপর যোগ দেয় পিসি।

আশপাশে যত বাসিন্দা আছে সকলের নাম ধরে গলা ফাটিয়ে তারা হাঁক দেয়, ও বাবাঠাকুর!ও ঘোষ মশায়!

ও জনাদ্দন!ওগো কানুর মা!বিপিন! বংশী....’

কানাই অদৃশ্য হয়ে যায় দলবল নিয়ে। 🔒ব্যাখ্যা হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি শুরু হয়ে যায় পাড়ায়, অনেকে ছুটে আসে, 🔒ব্যাখ্যা কেউ কেউ ব্যাপার অনুমান করে ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দেয় বাইরে না বেরিয়ে।

এই হট্টগোলের পর আরও নিঝুম আরও থমথমে মনে হয় রাত্রিটা। আহ্লাদিকে মাঝখানে নিয়ে শুয়ে ঘুম আসে না মাসি-পিসির চোখে। 🔒ব্যাখ্যা বিপদে পড়ে হাঁক দিলে পাড়ার এত লোক ছুটে আসে, এমনভাবে প্রাণ খুলে এতখানি জ্বালার সঙ্গে নিজেদের মধ্যে খোলাখুলিভাবে গোকুল আর দারোগা ব্যাটার চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করতে সাহস পায়, জানা ছিল না মাসি-পিসির। তারা হাঁকডাক শুরু করেছিল খানিকটা কানাইদের ভড়কে দেবার জন্যে, এত লোক এসে পড়বে আশা করেনি। তাদের জন্য যতটা নয়, গোকুল আর দারোগার ওপর রাগের জ্বালাই যেন ওদের ঘর থেকে টেনে বার করে এনেছে মনে হলো সকলের কথাবার্তা শুনে। কেমন একটা স্বস্তি বোধ করে মাসি-পিসি। 🔒ব্যাখ্যা বুকে নতুন জোর পায়। 🔒ব্যাখ্যা

মাসি বলে, ‘জানো বেয়াইন, ওরা ফের ঘুরে আসবে মন বলছে। এত সহজে ছাড়বে কি।’

পিসি বলে, ‘তাই ভাবছিলাম। মেয়েটাকে কুটুমবাড়ি সরিয়ে দেওয়ায় সোনাদের ঘরে মাঝরাতে আগুন ধরিয়েছিল সেবার।’

খানিক চুপচাপ ভাবে দুজনে।

মাসি বলে, ‘সজাগ রইতে হবে রাতটা।’

পিসি বলে, ‘তাই ভালো। কাঁথা কম্বলটা চুবিয়ে রাখি জলে, কী জানি কী হয়।’

আস্তে চুপি চুপি তারা কথা কয়, আহ্লাদির ঘুম না ভাঙে। অতি সন্তর্পণে তারা বিছানা ছেড়ে ওঠে। 🔒ব্যাখ্যা আহ্লাদির বাপের আমলের গোরুটা নেই, গামলাটা আছে। ঘড়া থেকে জল ঢেলে মোটা কাঁথা আর পুরনো ছেঁড়া একটা কম্বল চুবিয়ে রাখে, 🔒ব্যাখ্যা চালায় আগুন ধরে উঠতে উঠতে গোড়ায় চাপা দিয়ে নেভানো যাতে সহজ হয়। ঘড়ায় আর হাঁড়ি কলসিতে আরও জল এনে রাখে 🔒ব্যাখ্যা তারা ডোবা থেকে। বঁটি আর দা রাখে হাতের কাছেই। যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি। 🔒ব্যাখ্যা

                       

উত্তর : ‘মাসি-পিসি’ গল্পটির লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপ্রদত্ত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তর : ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়’ -উক্তিটি পিসির।

উত্তর : হাতে দুটো পয়সা এলে কৈলাশের স্বভাব বদলে যায়। 

উত্তর :

আহ্লাদির দিকে তাকিয়ে অল্পদিন আগে মারা যাওয়া মেয়ের কথা মনে পড়ায় বৃদ্ধ রহমানের চোখে জল চলে আসে। 

বুড়ো রহমানের মেয়ে আহ্লাদির চেয়ে বয়সে এবং রোগাটে ছিল। অবুঝ ছোট সেই মেয়েটি শশুরবাড়ির অত্যাচারের ভয়ে সেখানে যেতে চাইত না; কান্নাকাটি করত। তবু মেয়ের ভালোর কথা ভেবে বুড়ো রহমান তাকে জোর করে শশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিলে মেয়েটি সেখানে মারা যায়। তাই আহ্লাদিকে দেখে বুড়ো রহমানের নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে এবং তার চোখে জল চলে আসে।


উত্তর : মাসি।  

উত্তর : ব্যবসায়িক সম্পর্ক।   

উত্তর : পাঁশুটি শব্দের অর্থ কী?

উত্তর : খুন।   

উত্তর : কংক্রিট।  

উত্তর : পাশবিক অত্যাচারের ভয়ে আহ্লাদি স্বামীর বাড়িতে যেতে চায় না।
আহ্লাদিকে তার স্বামী জগু নানাভাবে কষ্ট দিত, নির্যাতন করত।  তাকে সে কলকেপোড়া ছ্যাঁক দিত, দিনভর-রাতভর খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখত। আবার অনাহারে ও রাখত। ফলে নিরুপায় হয়ে আহ্লাদিকে স্বামীর ঘর ছাড়তে হয়েছিল। মূলত এই অত্যাচারের ভয়েই আহ্লাদি স্বামী জগুর বাড়ি যেতে চায় না।

উত্তর : আহ্লাদিকে দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে হওয়ায় বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে।
বুড়ো রহমান তার অল্পবয়স্ক মেয়েকে  বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু অবুঝ মেয়েটা শশুর বাড়ি না যাওয়ার জন্য খুব কেঁদেছিল। কিন্তু তার ভালোর জন্য তাকে জোর- জবরদস্তি করে শশুরবাড়ি পাঠায় রহমান। সেখানে গিয়ে অল্পদিন পরেই মেয়েটা মারা যায়। একই নির্যাতনে শিকার আহ্লাদিকে দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে হওয়ায় বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে।

উত্তর : আহ্লাদিকে দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে হওয়ায় বুড়ো রহমানের চোখে ছলছল করে।
বুড়ো রহমান তার অল্পবয়স্ক মেয়েকে  বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু অবুঝ মেয়েটা শ^শুর বাড়ি না যাওয়ার জন্য খুব কেঁদেছিল। কিন্তু তার ভালোর জন্য তাকে জোর- জবরদস্তি করে শ^শুরবাড়ি পাঠায় রহমান। সেখানে গিয়ে অল্পদিন পরেই মেয়েটা মারা যায়। একই নির্যাতনে শিকার আহ্লাদিকে দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে হওয়ায় বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে।

উত্তর : “মোরা নয় মরব।” এ কথাটি পিসি বলেছে কানাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। 

‘মাসি-পিসি’ গল্পে সমাজের হীন মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিঃস্ব, বিধবা দুই নারীর প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে।  তাদের প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পিতৃ-মাতৃহীন আহ্লাদি। অত্যাচারী স্বামী লালসায় উন্মক্ত জোতদার, দারোগো ও গুণ্ডা-বদমাশদের হাত থেকে আহ্লাদিকে তারা রক্ষা করে। আর এ জন্য তারা এক সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করে। রাতের বেলা কাছারি বাড়িতে যাওয়ার হুমকি দেয় কানাই। কানাইয়ের কুমতলব বুঝতে পেরে মাসি-পিসি কাটারি-বঁটি নিয়ে কানাইকে মারতে উদ্যত হয়। মাসি বলে, শোনো কানাই, দুটো-একটাকে মারব, জখম করব ঠিক। তখন কানাইকে শাসিয়ে পিসি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলে।

উত্তর : প্রশ্নোক্ত বাক্যটি মাসি-পিসি এবং তাদের সতর্ক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে। 
সাধু বৈদ্য ও ওসামানের দল আবার আসতে পারে এই আশঙ্কায় মাসি-পিসি রাত্রে সজাগ থাকার পরিকল্পনা করে এবং নাশকতাকারীদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। তাদের এই প্রস্তুতির কারণে আহ্লাদির যেন ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে এজন্যই মাসি-পিসি সন্তর্পণে বিছানা ছাড়ে।

উত্তর : কাদায় ওঠা-নামার পথ যাতে পিচ্ছিল না হয়, সেজন্য খড় ফেলা হয়েছিল।   

‘মাসি-পিসি’ গল্পে দেখা যায়, সালতি থেকে পাড়ে খড় তোলা হচ্ছে।    যে পথে খড় তোলা হচ্ছিল সে পথ ছিল কর্দমাক্ত।    কর্দমাক্ত পথে আঁটিবাঁধা খড় মাথায় নিয়ে চলতে হয়।    রাস্তা যাতে পিচ্ছিল না হয়, সেজন্য কাদায় খড় ফেলা হচ্ছিল।   

উত্তর : আহ্লাদিকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার জন্য আগ্রহী করে তোলার মতলবে কৈলাশ তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে মাসি-পিসির সাথে কথা বলে।   
নির্মম নির্যাতনের কারণে আহ্লাদি স্বামী-সংসার ছেড়ে বাবার বাড়ি আসে।    তার অভিভাবক মাত্র দুজন নারীমাসি ও পিসি।    আহ্লাদির নিরাপত্তার অভাবে তারা তাকে স্বামীর সংসারে পাঠাতে চায় না।    স্বামীর বাড়ি যাওয়ার কথা শুনলেই আহ্লাদি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়।    আহ্লাদির স্বামী মাসি-পিসির কাছে কৈলাশকে পাঠিয়েছে নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য।    এ কারণে কৈলাশ মাসি-পিসির সাথে কথা বলার সময় এমনভাবে বলে যাতে নৌকার উপর আহ্লাদি শুনতে পায়।    তার উদ্দেশ্য আহ্লাদিকে স্বামীর প্রতি আগ্রহ জাগানো।   

উত্তর : হাতে টাকা এলে কৈলাশ শুঁড়িখানায় মদ পান করতে যায়।   
কৈলাশ শ্রমজীবী মানুষ।    শ্রমের বিনিময়ে টাকা আয় করে।    কখনো যদি হাতে দুটো বেশি টাকা আসে, তখন কৈলাশের মতিগতি ঠিক থাকে না।    একজন শ্রমিক আয় বুঝে যেভাবে ব্যয় করে, কৈলাশ তখন সেটা ভুলে যায়।  বাড়তি টাকার কোনো সদ্ব্যবহার না করে মদপানের জন্যে টাকা খরচ করে।    

উত্তর : কৈলাশ বিপাকে পড়ে আড়চোখে চায় আহ্লাদির দিকে।   
আহ্লাদির বিয়ে হয় দুষ্ট-বদমাশ লোক জগুর সাথে।    জগু স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে।    আহ্লাদি জগুর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চলে আসে বাপের বাড়িতে এবং জগু পরে অনেক চেষ্টা করেও ফিরিয়ে নিতে পারে না তাকে।    কৈলাশ আহ্লাদিকে জগুর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় মাসি-পিসির কছে।    কিন্তু জগুর ব্যাপারে মাসি-পিসির কথা শুনে কৈলাশ বিপাকে পড়ে যায় এবং ফাঁপড়ে পড়ে আড়চোখে তাকায় আহ্লাদির দিকে।   

উত্তর : জগুর চারিত্রিক ও মানসিক পরিবর্তনকেই বোঝানো হয়েছে।   
জগু প্রথম দিকে নেশাগ্রস্ত ছিল।    নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সে তার বউ আহ্লাদিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত।    কিন্তু এই জগু এখন নেশাগ্রস্ত জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।    এজন্যই কৈলাশ জগু সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করেছে; কারণ জগুর চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটেছে।   

ক) ১৮০৮
খ) ১৮৩৮
গ) ১৯০৮
ঘ) ১৯৩৮

উত্তর : গ
_

ক) সুবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
খ) প্রভাতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
গ) প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘ) সরোজকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তর : গ
_

ক) কাব্য
খ) উপন্যাস
গ) নাটক
ঘ) ছোটগল্প

উত্তর : খ
_

ক) জমিলা
খ) রহিমা
গ) আহ্লাদি
ঘ) বিলাসী

উত্তর : গ
_

ক) পুলের কাছে
খ) গঞ্জের বাজারে
গ) খালের ধারে
ঘ) কাছারি বাড়িতে

উত্তর : ক
_

Score Board

_









_

_









_

_









_

_









_

_









_
Score Board

উত্তর :
ক) মাসি-পিসি গ্রাম থেকে শাকসবজি সংগ্রহ করে শহরে বেশি দামে বিক্রি করে।    

খ) আহ্লাদিকে তার স্বামী জগুর কাছে ফেরত না দেয়ায় জগু তাদের মাসি-পিসির নামে মামলা করবে এই ভয়ে দেখিয়ে কৈলাশ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছে।   

কৈলাশ ও জগু একই পথের পথিক।    দুজনই মদ্যপানে অভ্যস্ত।    জগু আহ্লাদির উপর নির্যাতন করায় তাদের মাসি-পিসি দীর্ঘদিন জগুর কাছ থেকে নিয়ে এসে নিজেদের কাছে রাখেন।    আহ্লাদিকে ফেরত পাবার লক্ষ্যে জগু মাসি-পিসি নামে মালমা করবে এই শেখানো বুলি কৈলাশ মাসি-পিসির কাছ বলে তাদেরকে ভয় দেখিয়ে জগুর কাছে আহ্লাদিকে ফেরত পাঠাতে চায়।    

গ) উদ্দীপকের দিলারার সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির চরিত্রের সাদৃশ্যমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো হলো দুজনই অনাথা, আত্মীয়ের কাছে লালিত-পালিত ও স্বামীগৃহ থেকে অত্যাচরিত।   

যারা নিরাশ্রয়, যাদের রক্ষা করার মতো কেউ নেই, তারাও কখনো কখনো কারো আশ্রয় পায় দারুণভাবে।    অসংখ্য নারী সামাজিক এ ধরনের সমস্যা থেকে সুহৃদের কাছে আশ্রয় পেয়ে সুন্দর জীবন যাপন করে।    এমনি দু’জন নারী হলেন দিলারা ও আহ্লাদি।    তারা উভয়ে আত্মীয়ের আশ্রয়ে থেকে সমাজের নানা প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা পেয়েছে।    উদ্দীপকের দিলারা অতি আদরের এক মেয়ে।   

কিন্তু হঠাৎ দুর্ঘটনায় তার বাবা-মা মারা যাওয়ায় সে অনাথ হয়ে পড়ে।    চাচা-চাচি পিতৃ-মাতৃহীন দিলারাকে আশ্রয় দিয়ে লালন-পালন করে থাকেন।    বিবাবও দেন বড় ঘরে।    কিন্তু লোভী শ^শুরালয়ের অত্যাচারে দিলারা স্বামীগৃহ থেকে চলে এসে পুনরায় চাচা-চাচির সংসারে নিরাপদ জীবন যাপন করছে।    ঠিক এমনি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নারী হলেন ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি।    সেও অনাথা।    স্বামী জগুর অত্যাচারে টিকতে না পেরে সেও আশ্রয় নিয়েছে মাসি-পিসির গৃহে।    অসহায় আহ্লাদিকে বিপদের দিনে মাসি-পিসি নিজেদের কাছে এনে পরম আদরে লালন করতে থাকেন।    তাই বলা যায়, নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ ও স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত দিক হতে আহ্লাদির সঙ্গে দিলারার সাদৃশ্য রয়েছে।    

ঘ) উদ্দীপকের দিলারা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।   

সভ্যতার চরম উৎকর্ষে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবদান রয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা প্রায়শই অধিকার বঞ্চিত ও নির্যাতিত হয়।    যা সভ্য সমাজে কোনোভাবেই কাম্য নয়।    এমনি দু’জনই নির্যাতিতা নারী হলেন উদ্দীপকের দিলারা ও ‘মাসি-পিসি গল্পের আহ্লাদি।   

উদ্দীপকের দিলারা পিতৃমাতৃহীন এক মেয়ে।    সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা মা মারা গেলে বিপদগ্রস্ত দিলারার পাশে এসে দাঁড়ায় তার চাচা-চাচি।    আশ্রিতা দিলারাকে তারা পরম আদরে লালন-পালন করে ভালো ঘরে বিবাহ দেন।  কিন্তু নিয়তির বৈরিতার কারণে লোভী শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচারে সে পুনরায় ফিরে আসে তার চাচা চাচির গৃহে।    সেখানে দিলারা পরম যত্নেদিনাতিপাত করতে থাকে।   

উদ্দীপকের দিলারার মতো এমনি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলো ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি। সেও এতিম।    ‘মাসি-পিসি’ তাকে আশ্রয় দিয়ে লালন পালন করে থাকেন।    কিন্তু স্বামী জগুর অত্যাচারে স্বামীগৃহে টিকতে না পেরে সেও চলে আসে আবার মাসি-পিসির কাছে।    অসহায় বিপন্ন আহ্লাদিকে তারা সন্তান স্নেহে বুকে আগলে রাখেন।    ‘মাসি-পিসি’ গল্পের যেমন পিতৃমাতৃহীন, অনাথ ও স্বামীগৃহে অত্যাচারিতা ঠিক তেমনই উদ্দীপকের দিলারার চরিত্র এমনি ধরনের।

তাই সঙ্গত কারণেই বলা যায় যে, দু’জনেই একই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।    

উত্তর :
ক)‘মাসি-পিসি’ গল্পটি প্রথম কলকাতার ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।   

খ) প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে দুর্ভিক্ষের সময় মাসি-পিসির জীবনসংগ্রামের দিক প্রতিফলিত হয়েছে।   

‘মাসি-পিসি’ গল্পে দুভিক্ষের সময় খাদ্যের অভাব তীব্র হয়ে ওঠে।  তার মধ্যে অসুস্থ আহ্লাদি এসে হাজির হয় মাসি-পিসির ঘরে।    খেয়ে না খেয়ে মাসি-পিসি আহ্লাদিকে সুস্থ করার চেষ্ঠা করে।    কিন্তু আহ্লাদির অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়।    অন্য দিকে চারপাশের মানুষ না খেয়ে মরতে শুরু করে।    ফলে জীবন বাঁচাতে মাসি-পিসিকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।   মাসি-পিসির মত যারা সে যাত্রায় বেঁচে যায়, তাদের অবস্থা বোঝাতে প্রশ্রোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।