প্রতিদান
জসীমউদ্দীন
কবি- পরিচিতি:
নাম : জসীমউদ্দীন।
জন্ম : ১ জানুয়ারি, ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ।
জন্মস্থান : ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস ফরিদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে।
শিক্ষা : ফরিদপুর জেলা স্কুল, রাজেন্দ্র কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলায় এম. এ. ডিগ্রী লাভ।
পেশা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা, পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের ডেপুটি ডাইরেক্টর।
সাহিত্যকর্ম : কাব্য : নকসী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, ধানখেত, রাখালী, বালুচর, রূপবতী, মাটির কান্না।
কথাসাহিত্য : যাঁদের দেখেছি (স্মৃতিকথা), ঠাকুর বাড়ির আঙিনায় (স্মৃতিকথা), জীবনকথা (আত্মস্মৃতি), বোবা কাহিনী (উপন্যাস), বাঙালির হাসির গল্প (গল্পগ্রন্থ), হলদে পরীর দেশ, যে দেশে মানুষ বড় (ভ্রমণকাহিনী)।
শিশুতোষ গ্রন্থ : হাসু, এক পয়সার বাঁশি, ডালিম কুমার।
নাটক : পদ্মাপাড়, বেদের মেয়ে, মধুমালা, পল্লিবধূ, গ্রামের মায়া।
স্বীকৃতি : পল্লিকবি উপাধীতে ভূষিত। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত ডি.লিট ডিগ্রি, একুশে পদক।
মৃত্যু : ১৪ মার্চ, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ।
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর, 🔒ব্যাখ্যা
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। 🔒ব্যাখ্যা
যে মোরে করিল পথের বিরাগী — 🔒ব্যাখ্যা
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি, 🔒ব্যাখ্যা
দীঘল রজনী তার তরে জাগি’ ঘুম যে হরেছে মোর; 🔒ব্যাখ্যা
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।
আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি, 🔒ব্যাখ্যা
যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি। 🔒ব্যাখ্যা
সে মোরে দিয়েছে বিষে- ভরা বাণ, 🔒ব্যাখ্যা
আমি দেই তারে বুকভরা গান; 🔒ব্যাখ্যা
কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর,— 🔒ব্যাখ্যা
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি’ 🔒ব্যাখ্যা
রঙিন ফুলের সোহাগ-জড়ান ফুল মালঞ্চ ধরি। 🔒ব্যাখ্যা
যে মুখে সে কহে নিঠুরিয়া বাণী, 🔒ব্যাখ্যা
আমি লয়ে করে তারি মুখখানি,
কত ঠাঁই হতে কত কি যে আনি’ সাজাই নিরন্তর, 🔒ব্যাখ্যা
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। 🔒ব্যাখ্যা
পাঠ-পরিচিতি
‘প্রতিদান’ কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। এ কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই যে ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। সমাজ- সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্বেও কবির কন্ঠে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা। কেননা ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মান করতে পারে সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবী। কবি অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসাবে অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর, বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন।