তাহারেই পড়ে মনে

তাহারেই পড়ে মনে
- সুফিয়া কামাল

কবি- পরিচিতি:

নাম : সুফিয়া কামাল।

পিতা : সৈয়দ আবদুল বারী। তিনি কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন এবং পেশায় ছিলেন আইনজীবী।

মাতা : সাবেরা বেগম।

জন্ম : ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন।

জন্মস্থান : বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল কুমিল্লায়।

শিক্ষা : যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্য তখন বাঙালি মুসলমান নারীদের কাটাতে হতো গৃহবন্দি জীবন। স্কুল-কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ তাদের ছিল না। ওই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। মায়ের কাছে তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি। পারিবারিক নানা উত্থান-পতনের মধ্যে তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর শিক্ষাজীবন ছিল- অনানুষ্ঠানিক এবং তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত।

পেশাগত জীবন : তিনি কিছুকাল কলকাতার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তী সময়ে সাহিত্য সাধনা ও নারী আন্দোলনে ব্রতী হন।

সাহিত্যকর্ম : কাব্যগ্রন্থ : মায়াকাজল, সাঁঝের মায়া, উদাত্ত পৃথিবী, মন ও জীবন, মোর জাদুদের সমাধি পরে, মৃত্তিকার ঘ্রাণ।

শিশুতোষ গন্থ : ইতল বিতল ও নওল কিশোরের দরবারে।

গল্পগ্রন্থ : কেয়ার কাঁটা।

উপন্যাস  : অন্তরা।

সৃতিকথা : একাত্তরের ডায়েরী।

পুরস্কার : বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

মৃত্যু : ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।



হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়🔒ব্যাখ্যা
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?” 🔒ব্যাখ্যা

কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি
দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি🔒ব্যাখ্যা


বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?” 🔒ব্যাখ্যা


এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম ,“কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?” 🔒ব্যাখ্যা
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া
অলখের পাথার বাহিয়া 🔒ব্যাখ্যা

তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান।” 🔒ব্যাখ্যা
কহিলাম, “ওগো কবি! রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।” 🔒ব্যাখ্যা

কহিল সে মৃদু মধু-স্বরে
“নাই হলো, না হোক এবারে- 🔒ব্যাখ্যা
আমার গাহিতে গান, বসন্তরে আনিতে বরিয়া-

রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তা ফাগুনে স্মরিয়া।” 🔒ব্যাখ্যা

কহিলাম : “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই? 🔒ব্যাখ্যা
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”

কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়

ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন? 🔒ব্যাখ্যা
 
 মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নাই অর্ঘ্য বিরচন?” 🔒ব্যাখ্যা
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?” 🔒ব্যাখ্যা
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?” 🔒ব্যাখ্যা

কহিল সে কাছে সরি আসি— 
কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী—  🔒ব্যাখ্যা

গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে   🔒ব্যাখ্যা
রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”  🔒ব্যাখ্যা



পাঠ-পরিচিতি
“তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাটি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মদী' পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় । এ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি পেয়েছে । সাধারণভাবে প্রকৃতির-সৌন্দর্য মানবমনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। বস্তুত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যে কবিমনে আনন্দের শিহরণ জাগাবে এবং তিনি তাকে ভাবে ছন্দে সুরে ফুটিয়ে তুলবেন সেটাই প্রত্যাশিত কিন্তু কবিমন যদি কোনো কারণে শোকাচ্ছন্ন কিংবা বেদনা-ভারাতুর থাকে তবে বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্য সত্ত্বেও কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারবে না।

এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে (১৯৩২) কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে । তাঁর ব্যক্তিজীবন ও কাব্যসাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণ্ণতা। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে। “তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাকে আচ্ছন্ন করে আছে এই বিষাদময় রিক্ততার সুর। তাই বসন্ত এলেও উদাসীন কবির অন্তর জুড়ে রিক্ত শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা।

কবিতাটির আরেকটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর নাটকীয়তা। গঠনরীতির দিক থেকে এটি সংলাপনির্ভর রচনা কবিতার আবেগময় ভাববস্তুর বেদনাঘন বিষণ্ণতার সুর এবং সুললিত ছন্দ এতই মাধুর্যমণ্ডিত যে তা সহজেই পাঠকের অন্তর ছুঁয়ে যায়।
                            

উত্তর : ‘অর্ঘ্য’ অব্দের অর্থ অঞ্জলি বা উপহার।

উত্তর : 'ফুটেছে কি আমের মুকুল?' উক্তিটি কবির।

উত্তর : সুফিয়া কামালের পৈতৃক নিবাস কুমিল্লায়।

উত্তর : উত্তরী শব্দের অর্থ চাদর।

উত্তর : কবি সুফিয়া কালামের প্রথম স্বামীর নাম সৈয়দ নেহাল হোসেন।

উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা।

উত্তর : পুষ্পশূন্য দিগন্তে। 

উত্তর : ‘কুহেলি’ শব্দের অর্থ- কুয়াশা।

উত্তর : ‘কুড়ি’ শব্দের অর্থ মুকুল বা কলি।

উত্তর : মাসিক মোহাম্মাদী। 

উত্তর : প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে বিশাদগ্রস্থ কবির ঔদাসীন্য প্রকাশ পেয়েছে। ‘ ডেকেছে সে আমারে? শুনি নাই, রাখিনি সন্ধান।’ প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে বিষাদগ্রস্ত কবির ঔদাসীন্য প্রকাশ পেয়েছে।
কবিতায় কবি সুফিয়া কামাল বসন্তকে সবসময় সাদরে গ্রহণ করেন কিন্তু এবার কবির। স্বামীর মৃত্যু বেদনার জন্য প্রকৃতিতে যে বসন্ত এসেছে তা কবি সন্ধান রাখেনি। কারণ কবির মত তাঁর স্বামীর মৃত্যু বেদনায় আচ্ছন্ন। তাই, বসন্তের এই ডাক এবার কবি আর শুনতে পারেননি।

উত্তর : "যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।" এ কথা কবিভক্ত কবিকে বলেছে বসন্তের আগমন সত্ত্বেও কবি উদাসীন থাকায়। কারন প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবি তাকে বরণ না করে এর আবেদনকে যেন বৃথা করে দিলেন।

'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবির ব্যক্তিগত শোক প্রকাশ পেয়েছে। প্রিয়জন হারানোর বেদনা নিয়ে কবি তাই ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন না। বসন্তের আগমনেও উদাসীন থাকেন। শীতের রিক্ততার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের যে আগমন ঘটেছে, পত্র-পুষ্পে প্রকৃতি যে নব রূপে সেজেছে তা কবিকে আলোড়িত করে না। কেননা প্রিয়জনকে হারানো কবিমনে তখনও শীতের রিক্ততার হাহাকার। ফলে উদাসীন কবি বন্দনা রচনা করে বসন্তকে বরণ করতে পারেননি। আর এ বসন্তকে বরণ করতে না পারায় বসন্তের আবেদন গুরুত্ব হারিয়ে যেন ব্যর্থতায় পর্যবসতি হয়েছে বলে ভক্ত মনে করেছে। এ কারনেই কবিভক্ত কবিকে উদ্দেশ করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে।

উত্তর : কবি তাঁর প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকে কাতর, ফলে বসন্তের পুষ্পসাজে তার মন নেই। 

বসন্তের আগমন প্রকৃতিতে নতুন রূপের সঞ্চার করে। ফলে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্য মানুষ পুষ্পসাজে নিজেকে সজ্জিত করে। কিন্তু কবির মনে সেই ধরনের কোনো অনুভূতি নেই। কেননা প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে তিনি বেদনায় ভরাক্রান্ত। ফলে বসন্তের আগমনেও তিনি উদাসীন। আর সেই জন্য কবি অতীতের মতো পুষ্পসাজে নিজেকে সাজাতে পারছেন না।

উত্তর : "বাতাবি নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল" কবিতাংশে কবি বসন্তের আগমনকে বোঝাতে চেয়েছেন।

'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতায় কবি তার অন্তর বেদনার কারণে বসন্তের আগমনে চারদিকে উৎসবে মেতে উঠলেও তিনি বসন্ত প্রকৃতিকে অভ্যর্থনা জানাতে পারেন না। কারন কবির শোকবিহ্বল মনে এগুলো কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। প্রিয়জনকে হারিয়ে তিনি বেদনাহত বলে বসন্তের আগমন বুজতে পারছেন না। তাই তিনি ভক্তকে উদ্দেশে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।

উত্তর : চরণটিতে ভক্তকুল কবিকে তবুও অনুরোধ করে বসন্ত প্রকৃতিকে আনন্দচিত্তে বরণ করে নিতে। তাঁর কণ্ঠে বসন্তের বন্দনাগীত রচনা করতে বলেছেন।
প্রিয়জনের অকাল প্রয়াণে তাঁর কাব্যসাধনায় নেমে আসে বিষন্নতা। তাই প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটলেও তিনি তার সন্ধান রাখেন না। তিনি বিরহ বেদনায় নিরব থাকেন। কবিকে নিরব থাকতে দেখে কবিভক্তরা তাঁকে বসন্তের বন্দনাগীত রচনা করতে বলেন।

উত্তর : ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে সকল বিষন্নতা ও রিক্ততা নিয়ে শীত বিদায় নিলেও কবি নিশ্চুপ। বসন্তের প্রতি কবির উদাসীনতা লক্ষ্য করে কবিভক্ত অবাক হয়ে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
বসন্তের আগমনী সংবাদে প্রকৃতির রাজ্যে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। ফুলের সমারোহে সজ্জিত হয়ে প্রকৃতি বরণ করে নিয়েছে বসন্তকে। আমের মুকুল আর বাতাবি লেবুর ফুলের সুগন্ধে চারদিক ভরে উঠলেও কবির মনজুড়ে আছে শীতের রিক্ততা ও বিষণ্ণতার ছবি। বসন্তের সৌন্দর্য তাঁর কাছে অর্থহীন, মনে কোন আবেদন জাগাতে পারছে না। বসন্তের প্রতি কবির এ উদাসীনতা দেখে কবিভক্ত অবাক হয়েছেন। এ প্রসঙ্গেই কবিভক্ত কবিকে নীরব না থেকে বন্দনাগীতি রচনার মাধ্যমে বসন্তকে বরণ করে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।

উত্তর : এখানে কবিভক্ত কবিকে তাঁর বন্দনা-গীতের মাধ্যমে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। 

বসন্তে বিপুল বৈচিত্র্যে ভরে যায় বাংলার প্রকৃতি। তখন গাছে গাছে যেমন ফুল ফোটে, তেমনি নিসর্গপ্রেমিক কবির রচনায় ফোটে কবিতার ফুল। সে ফুল দিয়ে কবি বসন্তকে বরণ করেন। কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবি আজ বন্দনা-বিমুখ। তাই কবিভক্তের জিজ্ঞাসা, তিনি কেন বসন্তকে তাঁর কবিতা রচনার মাধ্যমে সাদর সম্ভাষণ জানাচ্ছেন না।

উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ‘দক্ষিণ দুয়ার’ দ্বারা দখিনা বাতাসকে বোঝানো হয়েছে।
প্রকৃতির প্রতিটা উপাদান প্রকৃতির নির্দেশেই চলে বরং এ প্রক্রিয়া দ্বারা পরিবেশ সুষ্ঠু নিয়মে পরিচালিত হয়। বসন্ত যখন প্রকৃতিতে আসে, তখন বাতাস দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। বসন্তে অনেক গরম থাকে পরিবেশ। যার জন্য দখিনা বাতাস বসন্তে প্রয়োজন। এ ছাড়াও দখিনা বাতাস বিভিন্ন দিক থেকে বসন্তকে তাৎপর্যময় করে তোলে।

উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শোকাচ্ছন্ন কবির জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে বসন্তের আগমন সম্পর্কে তাঁর উদাসীনতা ব্যক্ত হয়েছে।
কবিতায় প্রকৃতিতে বসন্ত তার রূপ সম্ভার নিয়ে হাজির হয়েছে। চারদিকে বসন্তের আগমনী বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। কিন্তু কবি এসব আগমনী-ধ্বনি শুনতে পাননি বা বসন্তের রূপসম্ভার লক্ষ্য করেন নি। শীতের বিদায়ী স্মৃতি তাঁর অন্তর জুড়ে আছে। তাই বসন্তের আগমনী বার্তা জানালে কবি নানারকম জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছেন।

উত্তর : বসন্ত এসেছে অথচ কবি নতুন ফুলে ঘর সাজাননি এবং নিজেও ফুলের অলংকারে সজ্জিত হননি দেখে কবিভক্ত আলোচ্য জিজ্ঞাসাটি করেছেন।
প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। ফুলে ফুলে, নতুন পত্র-পল্লবে আর পাখির কলতানে চারদিক মুখরিত। কবির পুষ্পসাজে সজ্জিত হয়ে বসন্তকে বরণ করার কথা। কিন্তু তিনি বসন্ত-বন্দনায় গীত রচনা করেননি। কেননা কবির মনে প্রিয়জন হারানোর বেদনা। যার জন্য হৃদয়ে প্রতিনিয়ত কষ্ট অনুভব করেন। তাই অতীত স্মৃতি মনে করে কবি বেদনাবিধুর, কবির পুষ্পসাজ নেই। অন্যমনষ্ক কবিকে কবিভক্ত বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। 

ক) বসন্তের
খ) শীতের
গ) নিজের
ঘ) ভক্তের

উত্তর : ক
_

ক) স্বামীর
খ) প্রকৃতির
গ) বসন্তের
ঘ) শীতের

উত্তর : গ
_

ক) গ্রীষ্ম
খ) বর্ষা
গ) শীত
ঘ) বসন্ত

উত্তর : ঘ
_

ক) প্রিয়জনের
খ) কবিতার
গ) মানবজীবনের
ঘ) বসন্তের

উত্তর : ঘ
_

ক) আমের মুকুল
খ) দক্ষিণ দুয়ার
গ) দখিনা সমীর
ঘ) বাতাবি লেবুর ফুল

উত্তর : গ
_

Score Board

_









_

_









_

_









_

_









_

_









_
Score Board

উত্তর :

ক) ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি প্রথম মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

খ) ‘পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে’ বলতে কবি এখানে শীতের রিক্ততার কথা বুঝিয়েছেন। 

শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায়, গাছ হয় ফুলহীন। শীতের এ রূপকে বসন্তের বিপরীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃতি বসন্তের আগমনে ফুলের সাজে সাজলেও কবির মন জুড়ে রয়েছে শীতের রিক্ততার ছবি। শীত যেন সর্বরিক্ত সন্নাসীর মত কুয়াশার চাদর গায়ে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে চলে গেছে।

গ) ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সাথে উদ্দীপকটির বিষয়গত প্রচুর বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান’উক্তিটি যথার্থ।

প্রিয়জন হারানোর বেদনা ও শিল্পীসত্তার মিল রয়েছে উদ্দীপক ও কবিতায়। প্রকৃতি ও মানব মনের সম্পর্কের দিকটি উদ্দীপক ও কবিতায় উঠে এসেছে। কিন্তু তবুও উদ্দীপক ও কবিতায় প্রচুর বিষয়গত বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।উদ্দীপকে আছে বর্ষার প্রকৃতির কথা। এখানে আছে কলমিলতা, শাপলা ফুলের কথা। এছাড়াও এখানে বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষটি একজন কণ্ঠশিল্পী যার বিষণ্ণতায় কারণ প্রিয় ভাই-বোনের মৃত্যু।সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় মাধবী কুড়ি, বাতাবী নেবুর ফুল, আমের মুকুলের কথা বলা হয়েছে। এখানে বিষণ্ণতায় ভুগছেন একজন কবি যার কারণ স্বামী নেহাল হোসেনের মৃত্যু।সুতরাং আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপক ও কবিতায় বেশ বিষয়গত বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।


ঘ) ‘উদ্দীপকের কণ্ঠশিল্পী নাজমার সাথে কবি বেগম সুফিয়া কামালের শিল্পীসত্তার তাৎপর্যপূর্ণ মিল আছে।’ মন্তব্যটি যথার্থ।

শিল্পীসত্তা বলতে বোঝায় কোনো শিল্প সৃষ্টি করার মননশীলতা বা মানসিকতা। শিল্পীরা তাদের শিল্প সৃষ্টি করার জন্য ঈস্খকৃতি থেকে রসদ সংগ্রহ করে। প্রকৃতি ও শিল্পীসত্তার মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু কোনো কারণে কবি তথা শিল্পী মন শোকাচ্ছন্ন হলে প্রকৃতির কানো রূপ, রস, গন্ধ শিল্পীসত্তায় সাড়া জাগায় না।উদ্দীপকে বর্ষায় প্রকৃতি অপরূপ সাজে সাজলেও তার কোনো সৌন্দর্য কণ্ঠশিল্পী নাজমার মনে দোলা দেয় না। কণ্ঠে ধ্বনিত হয় না কোনো গান। তাঁর হৃদয়জুড়ে কেবল প্রিয় ভাইবোনকে হারানোর বিষণ্ণতা।সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্ত ঋতুর আগমনের কোনো চিহ্ণ কবি লক্ষ করেননি। কবি উদাসীন। বসন্ত বন্দনার জন্য তিনি ফুলের সাজেও সাজেননি, গীতও রচনা করেননি। তাঁর হৃদয়জুড়ে কেবল শীতের রিক্ততা।উদ্দীপক ও কবিতা উভয়ক্ষেত্রেই কণ্ঠশিল্পী নাজমা ও কবি ব্যক্তিগত দুঃখে শোকাচ্ছন্ন হওয়ায় প্রকৃতির বন্দনার জন্য শিল্পী সত্তার বিকাশ ঘটাতে পারেননি।সুতরাং আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।


উত্তর :

ক) ‘মাসিক মোহাম্মাদী’ পত্রিকায়।

খ) ‘কুহেলি উত্তরী তলে মায়ের সন্ন্যাসী’ বলতে কবি শীতকে মায়ের সন্ন্যাসীরূপে কল্পনা করেছেন।

শীত ঋতুতে কুয়াশা চারিদিকে আচ্ছন্ন করে রাখে। গাছের পাতা ঝরে যায়। পরিবেশে এক নিঃস্ব, রিক্ত রূপ চোখে পড়ে। কবি শীতের এ অবস্থাকে সন্ন্যাসীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। সন্ন্যাসীরা সহজ সরল জীবন যাপন করেন। তারা নিঃস্ব,রিক্ত সর্বত্যাগী। শীতও যেন তাই বসন্ত আসার আগে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো প্রকৃতির রিক্ত শূন্য করে কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন করে রাখে। 


গ) উদ্দীপকটি প্রিয়জন হারানোর বেদনা ও বিরহাকাতরতার দিক থেকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

সুখ-দুঃখ, আনন্দ নিয়েই মানুষের জীবন। মানুষ সুখের স্মৃতি ভুলে গেলেও দুঃখের স্মৃতি ভুলতে পারে না । প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি মানুষকে নানাভাবে ভাবায়, কষ্ট দেয়। শোকাচ্ছন্ন মানুষের মনে প্রকৃতির পরিবর্তনও আনন্দধারা বইয়ে দিতে পারে না। উদ্দীপকটি প্রিয়জন হারানোর  হাহাকার প্রকাশ পেয়েছে। প্রিয়জন বিরহে উদ্দীপকের কবির মতে কাছের প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ স্তিুর হয়ে যায়। কবির ভিতরে আর জাগরণের সুর বাজে না। ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা পাখি ওড়ে না, নদীর শব্দ অর্থাৎ হৃদয়জুড়ে বেদনার সুর হাহাকার করে বেজে ওঠে। উদ্দীপকের এই বিষয়টি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রতিফলিত কবির প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে নির্দেশ করে। কবিও বসন্ত ঋতুর আগমণ বার্তায় সতেজ হয়ে তার ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করেত পারে না। বসন্তগীত রচনা করতে পারে না। কারণ প্রিয়জন হারানোর শোক শীতের শূন্যতার মতো তার হৃদয়জুড়ে হাহাকার সৃষ্টি করে। তিনি প্রচÐ ভাবে বেদনাহত। প্রকৃতির পরিবর্তন তাঁকে জাগাতে পারে না। তিনি শোকে উদাসীন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকটি প্রিয়জন হারানোর বেদনা ও হাহাকারের দিক থেবে আলোচ্য কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। 


ঘ) “উদ্দীপকের ‘ভেতর আমার বাঁশিটি বাজে না আর’ এ দহন যেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির অন্তর্দহন মন্ত্যবটি যথার্থ। 

প্রিয়জনের মৃত্যু মানুষের হৃদয়কে দুঃখভারাক্রান্ত করে। এই বিয়োগব্যথা তাকে চারপাশের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। শোকাচ্ছন্ন হৃদয়ের কাছে প্রকৃতির কোনো সৌন্দর্য আনন্দই মূল্য পায় না। উদ্দীপকের কবিতাংশে একজন ব্যক্তির অন্তর্দহনের বিষয়টি প্রকৃতির উপাদানের অস্বাভাবিকতা ও অসংগতির রূপ তুলে ধরা হয়েছে। এখানে পাখির আকাঁবাকাঁ সাদা ঝাঁক না ওড়া, নদীর জলের ঢেউয়ের শব্দ না হওয়া, কেবল পাড় ভেঙ্গে পড়া দুঃখ বেদনার রূপক। এগুলো উদ্দীকের কবির হৃদয় ভাবনার প্রতিফলন। কারণ তার ভেতরে যে সুর বাজার কথা তা বাজে না। উদ্দীপকের বসন্তের আগমনেও কবির হৃদয়জুড়ে থাকে বিষাদময় রিক্ততার সুর। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় ঘটনার ঘটেছে। প্রিয়জনকে হারিয়ে কবির হৃদয় বিচ্ছেদ বেদনায় ভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। কারণ তার মনজুড়ে শীতের রিক্ততা বিরাজমান। প্রকৃতির বসন্তের আগমন তার মনে আনন্দ জাগাতে পারে না। তার মন জুড়ে কেবল বেদনাঘন বিষন্নতার সুর। অনুরূপভাবে উদ্দীপকের কবির ভেতরেও বাঁশি বাজে না। কারণ তার ভেতরে প্রিয়জনকে হারানোর দহন। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।