কবি- পরিচিতি:
নাম : সুফিয়া কামাল।
পিতা : সৈয়দ আবদুল বারী। তিনি কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন এবং পেশায় ছিলেন আইনজীবী।
মাতা : সাবেরা বেগম।
জন্ম : ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন।
জন্মস্থান : বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল কুমিল্লায়।
শিক্ষা : যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্য তখন বাঙালি মুসলমান নারীদের কাটাতে হতো গৃহবন্দি জীবন। স্কুল-কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ তাদের ছিল না। ওই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। মায়ের কাছে তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি। পারিবারিক নানা উত্থান-পতনের মধ্যে তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর শিক্ষাজীবন ছিল- অনানুষ্ঠানিক এবং তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত।
পেশাগত জীবন : তিনি কিছুকাল কলকাতার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তী সময়ে সাহিত্য সাধনা ও নারী আন্দোলনে ব্রতী হন।
সাহিত্যকর্ম : কাব্যগ্রন্থ : মায়াকাজল, সাঁঝের মায়া, উদাত্ত পৃথিবী, মন ও জীবন, মোর জাদুদের সমাধি পরে, মৃত্তিকার ঘ্রাণ।
শিশুতোষ গন্থ : ইতল বিতল ও নওল কিশোরের দরবারে।
গল্পগ্রন্থ : কেয়ার কাঁটা।
উপন্যাস : অন্তরা।
সৃতিকথা : একাত্তরের ডায়েরী।
পুরস্কার : বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
মৃত্যু : ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।ক) ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি প্রথম মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। |
খ) ‘পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে’ বলতে কবি এখানে শীতের রিক্ততার কথা বুঝিয়েছেন। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায়, গাছ হয় ফুলহীন। শীতের এ রূপকে বসন্তের বিপরীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃতি বসন্তের আগমনে ফুলের সাজে সাজলেও কবির মন জুড়ে রয়েছে শীতের রিক্ততার ছবি। শীত যেন সর্বরিক্ত সন্নাসীর মত কুয়াশার চাদর গায়ে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে চলে গেছে। |
গ) ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সাথে উদ্দীপকটির বিষয়গত প্রচুর বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান’উক্তিটি যথার্থ। প্রিয়জন হারানোর বেদনা ও শিল্পীসত্তার মিল রয়েছে উদ্দীপক ও কবিতায়। প্রকৃতি ও মানব মনের সম্পর্কের দিকটি উদ্দীপক ও কবিতায় উঠে এসেছে। কিন্তু তবুও উদ্দীপক ও কবিতায় প্রচুর বিষয়গত বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।উদ্দীপকে আছে বর্ষার প্রকৃতির কথা। এখানে আছে কলমিলতা, শাপলা ফুলের কথা। এছাড়াও এখানে বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষটি একজন কণ্ঠশিল্পী যার বিষণ্ণতায় কারণ প্রিয় ভাই-বোনের মৃত্যু।সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় মাধবী কুড়ি, বাতাবী নেবুর ফুল, আমের মুকুলের কথা বলা হয়েছে। এখানে বিষণ্ণতায় ভুগছেন একজন কবি যার কারণ স্বামী নেহাল হোসেনের মৃত্যু।সুতরাং আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপক ও কবিতায় বেশ বিষয়গত বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। |
ঘ) ‘উদ্দীপকের কণ্ঠশিল্পী নাজমার সাথে কবি বেগম সুফিয়া কামালের শিল্পীসত্তার তাৎপর্যপূর্ণ মিল আছে।’ মন্তব্যটি যথার্থ। শিল্পীসত্তা বলতে বোঝায় কোনো শিল্প সৃষ্টি করার মননশীলতা বা মানসিকতা। শিল্পীরা তাদের শিল্প সৃষ্টি করার জন্য ঈস্খকৃতি থেকে রসদ সংগ্রহ করে। প্রকৃতি ও শিল্পীসত্তার মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু কোনো কারণে কবি তথা শিল্পী মন শোকাচ্ছন্ন হলে প্রকৃতির কানো রূপ, রস, গন্ধ শিল্পীসত্তায় সাড়া জাগায় না।উদ্দীপকে বর্ষায় প্রকৃতি অপরূপ সাজে সাজলেও তার কোনো সৌন্দর্য কণ্ঠশিল্পী নাজমার মনে দোলা দেয় না। কণ্ঠে ধ্বনিত হয় না কোনো গান। তাঁর হৃদয়জুড়ে কেবল প্রিয় ভাইবোনকে হারানোর বিষণ্ণতা।সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্ত ঋতুর আগমনের কোনো চিহ্ণ কবি লক্ষ করেননি। কবি উদাসীন। বসন্ত বন্দনার জন্য তিনি ফুলের সাজেও সাজেননি, গীতও রচনা করেননি। তাঁর হৃদয়জুড়ে কেবল শীতের রিক্ততা।উদ্দীপক ও কবিতা উভয়ক্ষেত্রেই কণ্ঠশিল্পী নাজমা ও কবি ব্যক্তিগত দুঃখে শোকাচ্ছন্ন হওয়ায় প্রকৃতির বন্দনার জন্য শিল্পী সত্তার বিকাশ ঘটাতে পারেননি।সুতরাং আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
ক) ‘মাসিক মোহাম্মাদী’ পত্রিকায়। |
খ) ‘কুহেলি উত্তরী তলে মায়ের সন্ন্যাসী’ বলতে কবি শীতকে মায়ের সন্ন্যাসীরূপে কল্পনা করেছেন। শীত ঋতুতে কুয়াশা চারিদিকে আচ্ছন্ন করে রাখে। গাছের পাতা ঝরে যায়। পরিবেশে এক নিঃস্ব, রিক্ত রূপ চোখে পড়ে। কবি শীতের এ অবস্থাকে সন্ন্যাসীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। সন্ন্যাসীরা সহজ সরল জীবন যাপন করেন। তারা নিঃস্ব,রিক্ত সর্বত্যাগী। শীতও যেন তাই বসন্ত আসার আগে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো প্রকৃতির রিক্ত শূন্য করে কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন করে রাখে। |
গ) উদ্দীপকটি প্রিয়জন হারানোর বেদনা ও বিরহাকাতরতার দিক থেকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুখ-দুঃখ, আনন্দ নিয়েই মানুষের জীবন। মানুষ সুখের স্মৃতি ভুলে গেলেও দুঃখের স্মৃতি ভুলতে পারে না । প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি মানুষকে নানাভাবে ভাবায়, কষ্ট দেয়। শোকাচ্ছন্ন মানুষের মনে প্রকৃতির পরিবর্তনও আনন্দধারা বইয়ে দিতে পারে না। উদ্দীপকটি প্রিয়জন হারানোর হাহাকার প্রকাশ পেয়েছে। প্রিয়জন বিরহে উদ্দীপকের কবির মতে কাছের প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ স্তিুর হয়ে যায়। কবির ভিতরে আর জাগরণের সুর বাজে না। ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা পাখি ওড়ে না, নদীর শব্দ অর্থাৎ হৃদয়জুড়ে বেদনার সুর হাহাকার করে বেজে ওঠে। উদ্দীপকের এই বিষয়টি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রতিফলিত কবির প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে নির্দেশ করে। কবিও বসন্ত ঋতুর আগমণ বার্তায় সতেজ হয়ে তার ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করেত পারে না। বসন্তগীত রচনা করতে পারে না। কারণ প্রিয়জন হারানোর শোক শীতের শূন্যতার মতো তার হৃদয়জুড়ে হাহাকার সৃষ্টি করে। তিনি প্রচÐ ভাবে বেদনাহত। প্রকৃতির পরিবর্তন তাঁকে জাগাতে পারে না। তিনি শোকে উদাসীন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকটি প্রিয়জন হারানোর বেদনা ও হাহাকারের দিক থেবে আলোচ্য কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। |
ঘ) “উদ্দীপকের ‘ভেতর আমার বাঁশিটি বাজে না আর’ এ দহন যেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির অন্তর্দহন মন্ত্যবটি যথার্থ। প্রিয়জনের মৃত্যু মানুষের হৃদয়কে দুঃখভারাক্রান্ত করে। এই বিয়োগব্যথা তাকে চারপাশের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। শোকাচ্ছন্ন হৃদয়ের কাছে প্রকৃতির কোনো সৌন্দর্য আনন্দই মূল্য পায় না। উদ্দীপকের কবিতাংশে একজন ব্যক্তির অন্তর্দহনের বিষয়টি প্রকৃতির উপাদানের অস্বাভাবিকতা ও অসংগতির রূপ তুলে ধরা হয়েছে। এখানে পাখির আকাঁবাকাঁ সাদা ঝাঁক না ওড়া, নদীর জলের ঢেউয়ের শব্দ না হওয়া, কেবল পাড় ভেঙ্গে পড়া দুঃখ বেদনার রূপক। এগুলো উদ্দীকের কবির হৃদয় ভাবনার প্রতিফলন। কারণ তার ভেতরে যে সুর বাজার কথা তা বাজে না। উদ্দীপকের বসন্তের আগমনেও কবির হৃদয়জুড়ে থাকে বিষাদময় রিক্ততার সুর। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় ঘটনার ঘটেছে। প্রিয়জনকে হারিয়ে কবির হৃদয় বিচ্ছেদ বেদনায় ভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। কারণ তার মনজুড়ে শীতের রিক্ততা বিরাজমান। প্রকৃতির বসন্তের আগমন তার মনে আনন্দ জাগাতে পারে না। তার মন জুড়ে কেবল বেদনাঘন বিষন্নতার সুর। অনুরূপভাবে উদ্দীপকের কবির ভেতরেও বাঁশি বাজে না। কারণ তার ভেতরে প্রিয়জনকে হারানোর দহন। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |