ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
শামসুর রহমান
কবি পরিচিতি :
নাম : শামসুর রাহমান।
পিতা : মুখলেসুর রহমান চৌধুরী।
মাতা : আমেনা বেগম।
জন্ম : ২৪ অক্টোবর, ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ।
জন্মস্থান : ঢাকা |
পৈতৃক নিবাস : গ্রাম: পাহাড়তলি, জেলা: নরসিংদী।
শিক্ষা : ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা (১৯৪৫), ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট (১৯৪৭) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস।
পেশাগত জীবন : সাংবাদিকতা। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি 'দৈনিক মর্নিং এজ'-এ সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি “দৈনিক পাকিস্তান' (পরে দৈনিক বাংলা') পত্রিকায় যোগদান করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘সাপ্তাহিক সোনার বাংলা' পত্রিকায় কবির প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। আজীবন তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কাব্যসাধনায় নিয়োজিত ছিলেন।
সাহিত্যকর্ম : উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, রৌদ্র করোটিতে, বিধবস্ত নীলিমা, নিরালোকে দিব্যরথ, নিজ বাসভূমে, বন্দি শিবির থেকে, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ, বুক তার বাংলাদেশের হৃদয় ইত্যাদি।
স্বীকৃতি : আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
মৃত্যু : ১৭ই আগস্ট, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ।
আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে
কেমন নিবিড় হয়ে। 🔒ব্যাখ্যা কখনো মিছিলে কখনো-বা একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়-ফুল নয়,
ওরা শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ , স্মৃতিগন্ধে ভরপুর। 🔒ব্যাখ্যা একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং।🔒ব্যাখ্যা
যে-রং লাগে না ভালো চোখে, যে-রং সন্ত্রাস আনে 🔒ব্যাখ্যা প্রাত্যহিকতায় আমাদের মনে সকাল-সন্ধ্যায়—
এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট, 🔒ব্যাখ্যা সারা দেশ আমি আর আমার মতোই বহু লোক
রাত্রি-দিন ভূলুণ্ঠিত ঘাতকের আস্তানায়, কেউ মরা, আধমরা কেউ, 🔒ব্যাখ্যা কেউ বা ভীষণ জেদি, দারুণ বিপ্লবে ফেটে পড়া । 🔒ব্যাখ্যা চতুর্দিকে
আবার সালাম নামে রাজপথে, শূন্যে তোলে ফ্ল্যাগ, 🔒ব্যাখ্যা বরকত বুক পাতে ঘাতকের থাবার সম্মুখে। 🔒ব্যাখ্যা সালামের মুখ আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা । 🔒ব্যাখ্যা দেখলাম রাজপথে, দেখলাম আমরা সবাই
জনসাধারণ
দেখলাম সালামের হাত থেকে নক্ষত্রের মতো
এখনো বীরের রক্তে দুঃখিনী মাতার অশ্রুজলে
হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকায় । সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ, 🔒ব্যাখ্যা শিহরিত ক্ষণে ক্ষণে আনন্দের রৌদ্রে আর দুঃখের ছায়ায় । [সংক্ষেপিত]
পাঠ-পরিচিতি
“ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯” শীর্ষক কবিতাটি কবি শামসুর রাহমানের ‘নিজ বাসভূমে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে। “ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯” সংগ্রামী চেতনার কবিতা, দেশপ্রেমের কবিতা, গণজাগরণের কবিতা।
১৯৬৯-এ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যে গণআন্দোলনের সূচনা ঘটেছিল, কবিতাটি সেই গণজাগরণের পটভূমিতে রচিত। জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ’৬৯-এ। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ থেকে, হাটবাজার থেকে, কলকারখানা থেকে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয় ঢাকার রাজপথে। শামসুর রাহমান বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার অসাধারণ এক শিল্পভাষ্য রচনা করেছেন এই কবিতায়।
কবিতাটিতে দেশমাতৃকার প্রতি জনতার বিপুল ভালোবাসা সংবর্ধিত হয়েছে। দেশকে ভালোবেসে মানুষের আত্মদান ও আত্মাহুতির প্রেরণাকে কবি গভীর মমতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মূর্ত করে তুলেছেন। কবিতাটিতে একুশের রক্তঝরা দিনগুলোতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের সংগ্রামী মানুষের আত্মহুতির মাহাত্ম্যের প্রগাঢ়তা লাভ করেছে। গদ্যছন্দ ও প্রবহমান ভাষার সুষ্ঠু বিকাশে কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সংযোজন।